বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

আনন্দের নাকি বেদনার উৎসব!

| প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ধবধবে সাদা টি-শার্ট। কাছের মানুষগুলোর লেখায় ভরে গেছে। লেখালেখির লগ্ন এসেছে আজ। কেউ একজন লিখেছে, ‘তোর জন্য একটা ছেলে আজও ভীষণ একা’। বিদায় বেলা সেটা দেখে একা থাকার আর কি উপায় আছে! এই হচ্ছে র‌্যাগ ডে।
ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, ঘোরাঘুরি, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি এভাবে পার হয় জীবনের সব থেকে সেরা দিনগুলো। কখন যে সময় চলে যায় কেউ টেরই পায় না। চারটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুং করে বেজে ওঠে বিদায়ের ঘণ্টা। শিক্ষাজীবনের সেই মধুময় দিনগুলো বিদায়ী শিক্ষার্থীর পিছু ডাকে। আর মধুময় দিনগুলোর স্মৃতি হৃদয়ের ফ্রেমে বেঁধে রাখতে, স্মরণীয় করে রাখতে আনন্দে, উচ্ছ¡াসে, সস্নোগানে, রঙে-রূপে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে র‌্যাগ-ডে পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
র‌্যাগ-ডে একটি ইংরেজি প্রবাদ। যার বাংলা অর্থ পড়ালেখা শেষের হৈচৈপূর্ণ দিন। ঘটা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের এ বিদায়ী অনুষ্ঠান পালন করেন নাচ-গান আর হাসি-তামাশার মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে র‌্যাগ-ডে কি কোনো আনন্দের দিন, নাকি বেদনার?
নিজেদের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে কৃষিশিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভর্তি হয়েছিলাম চার বছর আগে। একেক করে ৪টি বছর পার করে দিলাম এবং শেষ করে ফেললাম ক্লাসের পাঠ। এই চার বছরে ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত মজার স্মৃতি, আনন্দ-বেদনার বিভিন্ন ঘটনা। স্নাতক পাস করার পর ক্লাসের বিভিন্ন জন বিভিন্ন বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়বে। ফলে আর কোনোদিন একসাথে ক্লাস, মজা করা হয়ে উঠবে না। তাই স্নাতক পাস করার পর ক্লাসের সবাই মিলে মেতে উঠে পাঠ সমাপনী উৎসব তথা র‌্যাগ ডে নামক মহানন্দে। এভাবেই চারবছরের বিভিন্ন স্মৃতির কথা বলছিল বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ৪৪তম ব্যাচের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সাধারণত স্নাতক পর্যায়ে ক্লাস শেষের দিনে হয়ে থাকে র‌্যাগ ডে। র‌্যাগ ডে পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার আর্থিক সাহায্য দেন না। তাই সবার চাঁদা দিয়েই পালন করা হয় এ মহোৎসবের।
আনন্দ, উচ্ছ¡াস, রংয়ে, রূপে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ৯ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল র‌্যাগ ডের আনন্দে মেতে ওঠেছিল মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ৪৪ ব্যাচের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। তিনদিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রং খেলা, সাইক্লিং, ফ্লাসমুভ, ট্রাকে করে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরা, নৌকা ভ্রমণ, ফানুস ওড়ানো, আতশবাজি ফুটানো, রিকশায় পুরো ক্যাম্পাস ভ্রমণসহ বার-বি-কিউ পার্টির আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস জীবনের নানান স্মৃতিচারণ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
রোহানি, আশিক, অনিক, রিয়াদ, জামান, সাদিকুন নাহার রিক্তা, নাদিয়া, আরিফ র‌্যাগ ডে নিয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, টানা চার বছর একসঙ্গে একটা পরিবারের মতো ছিলাম। অনেক আনন্দ উৎসব করলেও প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে। স্মৃতি হয়ে থাকবে ভালোবাসার বাকৃবি ক্যাম্পাস। শেষদিনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী, ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন তারা। অনুষ্ঠানের এক মুহূর্তে এসে একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবশেষে সবাই যেন বলছেন বিদায়, ভালো থেকো বন্ধু। ‘তোর জন্য একটা ছেলে আজও ভীষণ একা’ ছেলেটিও সবশেষে অশ্রæসিক্ত লোচনে আর নির্বাক কণ্ঠে বলে উঠে যেন, ‘দেখা হবে বন্ধু কারণে বা অকারণে...।
ষ মো. শাহীন সরদার

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন