স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয় থেকেই দলটি নানা ছলছুতার আশ্রয় নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকাল বুধবার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, অতীত অপকর্মের জন্য বিএনপি নির্বাচনে যেতে ভয় পাচ্ছে। বিএনপি ভয় পাচ্ছে কেন? তাদের অতীতের অপকর্মের জন্য, যা জনগণ ভোলেনি। নির্বাচনে হেরে যাবে এজন্য নানা ছলছুতার আশ্রয় নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় জানান দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বার বার বলেছি, এদের (বর্তমান সরকার) অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা বলছি, অবশ্যই আমরা নির্বাচনে যাব, নির্বাচনে যেতে চাই। তবে সেই নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে সহায়ক সরকারের কোনো নিয়ম নেই। এখানে সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন হবে। যে বা যারা অংশগ্রহণ করবে এটি তাদের ব্যাপার, এখানে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ব্যাপারে বাধা নেই।
নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা বিএনপির অধিকার মন্তব্য করে কাদের বলেন, এটি তাদের পলিটিক্যাল রাইট, ইলেকশন তো শেখ হাসিনার অধীনে হবে না। ইলেকশন হবে ইলেকশন কমিশনের অধীনে। সে সময় রুটিন ওয়ার্কের বাইরে মেজর পলিসি নিতে সরকারের কিছুই করার থাকবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সা¤প্রতিক এক বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন গত মঙ্গলবার বলেন, এখন তারা তাদের সম্পদ গোছাতে ব্যস্ত। কাজেই তারা পালাবার জন্য তৈরি হোক, আর আমরা জনগণকে নিয়ে দেশ রক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিই।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাদের বলেন, বেগম জিয়া তো অনেক কথাই বলেছেন গতকাল, তিনি বোধহয় ভুলে গেছেন যে টাকা পয়সা পাচার করে তার নিজর সন্তান নয় বছর ধরে পলাতক আছে এবং আরেক সন্তানের পলাতক অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। আমি কোনো তিক্ততার সৃষ্টি করতে চাই না, আমি বলতে চাই আওয়ামী লীগ সরকারে হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবন রেকর্ড নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না।
২০০১ সালে নির্বাচনে হারার পর আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা হাওয়া ভবন তৈরি করে লুটপাট করেছে। এর আগে ৫ বছর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ, তখন কিন্তু আওয়ামী লীগ হেরে গিয়েও পালিয়ে যায়নি। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার দুই সন্তান কিভাবে পালিয়ে গেছে, রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়েছে, তিনি কি ভুলে গেছেন? এখন যে পালিয়ে বেড়ানোর ব্যাপারে মন্তব্য করছেন।
গত শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধি সভায় ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহার না করার আহŸান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে হবে। তা কি ভাবেন না? দল যদি ক্ষমতায় না থাকে, এখন যে টাকা-পয়সা রোজগার করছেন, তখন এই টাকা নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে। এটা ভাবতে হবে।
চট্টগ্রামে দলীয় সভার ওই বক্তব্যর বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের একটি বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছি, ক্ষমতাসীন দলের খাই খাই একটা ভাব থাকে, বিশেষ করে শেষ দিকে, সেজন্য আমি তাদের সতর্ক করে দিয়েছি খাই খাই ভাবটা ভাল নয়। এটিকে কেন্দ্র করে তারা পলিটিক্স শুরু করে দিয়েছে, তাদের পার্টি সেক্রেটারি, অবশেষে বেগম জিয়াও আসরে অবতীর্ণ হয়েছেন, তিনি কি তার দলের ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত ঘটনা ভুলে গেছেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের কাজ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আশা করছি আগামী ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর বাণিজ্যিক পরিচালনা শুরু হবে। তিনি বলেন, গত বছরের জুলাইতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীর জঙ্গী হামলার ঘটনার পর মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। এখন সেটা পূরণের লক্ষ্যে দ্রæত গতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে। যথাসময়ে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
কাদের বলেন, আমরা জনগণের স্বার্থে এবং যানজট নিরসনে মেট্রোরেলের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। এটি নির্মাণে জনগণের কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে, তবে উন্নয়নের স্বার্থে এ দুর্ভোগের মাত্রা কমাতে এবং সহনীয় মাত্রায় রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।
এর আগে ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ নির্মাণের লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সঙ্গে যৌথভাবে ইতালিয়ান দু’টি কোম্পানীর সঙ্গে সিপি-২.সিপি-৩ ও সিপি-৪ স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরমধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র প্রকল্প সহায়তা ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ সরকার ২৫ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করবে। মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার, উত্তরা এলাকার উত্তর থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত এলিভেটর সিস্টেম থাকবে। এ মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা হবে উভয় দিকে ঘন্টায় ৬০ হাজার। এরমধ্যে উত্তরা-উত্তর, উত্তরা-সেন্টার, উত্তরা-দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয়স্বরনী, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিলে ১৬টি স্টেশন থাকবে।
এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. সাহারা খাতুন, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কোম্পানী ও ইতালিয়ান কোম্পানীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন