শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বরিশালে বিএনপির কর্মীসভায় হট্টগোল : নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবার আহবান

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : হৈ হট্টগোল ও নানা বিশংখলার মধ্যে বরিশাল বিভাগীয় সদরে বিএনপি’র দু দিনব্যপী তৃনমূল কর্মীসভার পরে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কিছুটা মনোবল ফিরে পেলেও সাংগঠনিক বিশৃখলাও আরো একবার প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে মিশ্র প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টি করলেও অনেক দিন পরে বরিশালে বিএনপি কর্মীদের একত্রিত হওয়া এবং নেতৃবৃন্দের কিছু কর্মীর কথা শোনাকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন। বরিশাল টাউন হলে মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিন জেলা কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বারবারই মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাশীনদের ‘নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না’ বলে জানীয়ে দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন অন্তবর্তিকালীন সরকারের রূপরেখা প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন। আর ঐ রূপরেখা অনুযায়ী অন্তবর্তিকালীন সরকারের অধীনেই পরবর্তি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও দাবী তোলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এমনকি নেতৃবৃন্দ অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে বিএনপি অংশগ্রহণ করা সহ জনগনের ভোটের মাধ্যমেই আবার ক্ষমতায় যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
দুদিনের এ কর্মীসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ছাড়াও বেগম সেলিমা রহমান, সুপ্রীম কোর্ট বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহামান সারোয়ারও উপস্থিত ছিলেন।
তবে দুদিনের এ কর্মীসভা চলাকালে দলীয় তরুন কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় হৈ হট্টগোল ও বাক বিতন্ডার ঘটনাবলী কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে যথেষ্ঠ বিব্রত করে। বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল সহ সাধারন মানুষের মধ্যেও দেশের প্রধান এ বিরোধী দল সম্পর্কে বিরূপ বার্তা পৌছে দিচ্ছে। ২০০৬-এর শেষভাগে ৪দলীয় জোট ক্ষমতা ছাড়ার পরে আজ পর্যন্ত বিএনপি’র কোন নেতাÑকর্মী স্বস্তিতে নেই। বিশেষ করে বিগত একতরফা জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৪ ও ’১৫-এর প্রথমভাগে দেশ যুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার ঢেউ দক্ষিনাঞ্চলেও যথেষ্ঠ বিরূপ পরিস্থতির সৃষ্টি করে। সে থেকে এখন পর্যন্ত ৪দলীয় জোটের অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। কর্মী সভায় মির্জা আব্বাস নিজেও তার দলের অন্তত ৫হাজার কর্মী এখনো নিখোজ বলে দাবী করে দেশে এখন খুন-গুমের গনতন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন।
কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের ওপর এত বড় রাজনৈতিক দূর্যোগের পরেও বরিশালে বিএনপি ও এর অংগ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একত্রিত করতে না পারায় হতাশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতা ছাড়ার পরে দক্ষিনাঞ্চলে দেশের অন্যতম প্রধান এ রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠনকে সাংগঠনিক পতাকাতলে একত্রিত করতে পারেনি। এর পেছনে এ অঞ্চলের দলীয় অনেক মুরুব্বীদের সীমাহীন ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন রাজনৈতিক পর্যবক্ষক মহল। পটুয়াখালী, ঝালকাঠী ও পিরোজপুর সহ আরো কয়েকটি জেলার অনেক বড় মাপের নেতারা মাসের পর মাস ধরে এলাকায় অনুপস্থিত থাকেন। এমনকি আন্দোলনÑসংগ্রামের সময়ও তাদেরকে এলাকায় দেখা যায়না বলে অভিযোগ আছে। ফলে সঠিক দিক নির্দেশনা সহ রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের অভাবে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ইতোমধ্যে যথেষ্ঠ বিভ্রান্ত। এর সাথে দলের ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের উস্কানী অন্তকলহকে আরো বেগবান করছে।
তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোন মূল্যে একতাবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়ে গেছেন। মির্জা আব্বাস বার বারই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারী উচ্চারন করেছেন। তিনি নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে আগামী নির্বানকে ঘিরে যেকোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ থাকারও ডাক নিয়েছেন। তবে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কর্মীদের এসব হট্টগোল  গোলযোগের ঘটনাকে ভূল বোঝাবুঝি বলে দাবী করে তা মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন।
বরিশালে দুদিনের এ কর্মী সভায় বক্তব্য প্রদানকালে মির্জা আব্বাস দাবী করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমতা হারাবার পরে টাকা পয়সা নিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই এ দল কখনোই দেশে গনতান্ত্রীক ধারা ফিরিয়ে আনতে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করবে না বলেও জানান তিনি। খালেদা জিয়া যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দেবেন তার অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে বলেও দাবী করেন মির্জা আব্বাস। আর ঐ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহনে দলীয় কর্মীদের প্রতিও তিনি আহবান জানান। তিনি আবোরো পাতানো নির্বাচনের চেষ্টা চলছে বলে হুশিয়ারী উচ্চারন কওে এব্যপারে সজাগ থাকতেও কর্মীদের সতর্ক করে দেন।
দুদিনের একর্মী সমাবেশে দফায় দফায় হৈ হট্টগোল হলেও দীর্ঘদিন পরে বরিশালে বিরোধী দলের এধরনের একটি সমাবেশ সাধারন মানুষও যথেষ্ঠ কৌতহলের সাথে উপভোগ করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন