সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

লাই-লাতুল বরাতের ফজিলত ও দর্শন

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন
লাই-লাতুল বরাতের ফজিলত দর্শন, গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক ও সুদুর প্রসারী, এ প্রসঙ্গে আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী রচিত হাদিসে কুদসী গ্রন্থের অনুবাদক মোমতাজ উদ্দিন আহম্মদ ১২ নং অধ্যায়ের ভূমিকার মধ্যে উল্লেখ করেছেন “সাবান মাসের ফযিলাতের দুটি বিশেষ কারণ রহিয়াছে, প্রথমত: ইহা নিজেই ফজিলতের মাস। ইহার মধ্যভাগে যে তিনটি রোজা রাখার বিধান রহিয়াছে উহা নফল হলেও উহার নেকী অপরিসীম। দ্বিতীয় সাবান মাস পবিত্র রমজানের অগ্রদূত।
লাইলাতুল বরাতে রয়েছে অন্তর্নিহিত ফজিলত ও কল্যাণ। এ প্রসঙ্গে আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী সংকলিত হাদিসে কুদসি গ্রন্থের ১৩৭ নং হাদিসে ইবনে মাজা হযরত আলী (রা) এর সূত্র ধরে বলেছেন “যখন সাবান মাসের অর্ধেক (অর্থাৎ পনর তারিখ) রাত্রি আসে তখন তোমরা সেই রাত্রিতে কিয়াম কর (ইবাদত কর) এবং দিনে রোজা রাখ। কারণ আল্লাহ ইহাতে সূর্যাস্তের পর পরই দুনিয়ার নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী কি নাই যে, আমি তাহাকে ক্ষমা করিতে পারি? কোন রিযিক অনুসন্ধানকারী নাই, যে, আমি তাহাকে রিযিক দিতে পারি? কোন পীড়িত ব্যক্তি নাই যাহাকে আমি সুস্থ্যতা দান করিতে পারি? কোন বাসনাকারি নাই যে, আমি তাহাকে প্রার্থীভ বস্তু দিতে পারি? এরূপ নাই কি? এরূপ নাইকি বলা হইতে থাকে যে পর্যন্ত না ফজরের উদয় হয়। (হাদিসে কুদসী পৃ: ১৩২) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী বলেন নবী (স:) বলেছেন, যে মুসলমান এ মাসে তিনটি রোজা রাখবে এবং ইফতারের সময় তিনবার দরুদ পড়বে তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে, তার রিযিকে বরকত হবে। কিয়ামতের দিবসে উষ্ট্রীর উপর আরোহন করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদিসে আরও বর্ণিত আছে, রাসুল (স:) রমজানুল মোবারক ছাড়া অন্য মাসে এতো অধিক রোজা রাখতেন না যতখানি সাবান মাসে রাখতেন। বোখারী মুসলিম)  
তবে এ কথা সত্য যে, আজকের এই গুনাহ মাফের রজনীতে সকলের গুনাহ মাফ হবে না। এমন কিছু ব্যক্তি এই সমাজে রয়েছে যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যায় অত্যাচার, মদ, জুয়া সহ বিভিন্ন প্রকার গুনাহর কাজ করে এবং গুনাহ মাফের আশায় মহা ধুম ধামে পালন করে এ সমস্ত রজনী, তাদের দোয়া কখনই কবুল হয় না। বরং তারা হবে বঞ্চিত।
এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে “হযরত আয়শা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক রাত্রে আমি নবীজীকে তার স্থানে না পেয়ে তাকে খুজতে বের হলাম। খুজতে খুজতে নবী (স:) কে জান্নাতুল বাকী নামক স্থানে গিয়ে দেখি, তিনি আকাশ পানে মাথা উত্তোলন করে দুআ করছেন। রসুল তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়শা আমার নিকট হযরত জিব্রাইল (আা:) এসেছিলেন, তিনি আমাকে বললেন আজ অর্ধ সাবানের (শবে বরাত) রজনী। এ রাতে মহান আল্লাহ এত অধিক পরিমাণ লোকদের কে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন যে কালব গোত্রের বকরীগুলোর যত পশম রয়েছে তার সমপরিমাণ। কিন্তু তা সত্তে¡ও এমন কিছু দুর্ভাগ্য ব্যক্তি বা লোক রয়েছে যারা এই পবিত্র রজনীতেও ক্ষমা লাভে বঞ্চিত হবে। আর তারা হলোÑ (১) আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপনকারী (২) হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী  (৩) অন্যায় ভাবে ট্যাক্স (চাঁদা) আদায়কারী (৪) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৫) অহংকারী   (৬) যাদুকর ও গনক (মিশকাত ১:১১৫) অন্যত্র মদ, জুয়া বেভিচারী ও খুনীদের কথাও বলা হয়েছৈ। এদেরকে কোন অবস্থায় ক্ষমা করা হবে না। তাছাড়া অন্যান্য অপরাধীদেরকে ক্ষমার কথা বলা হয়েছে। তবে এ কথা সত্য যে মানুষ যত বড়ই অপরাধ করুন না কেন সে যদি পাপের জন্য অনুসোচনা করে এবং অতিতের সকল ভুলের জন্য একগ্রচিত্তে খালেস নিয়তে এই রজনীতে তওবা করে তবে অবশ্যই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন। করণ আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অন্যত্র তিনি বলেছেন আল্লাহ অসিম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, আজকের রজনীতে ইবাদত করতে হবে একাগ্রচিত্তে এবং খালেস নিয়তে। আর ঐ সমস্ত পাপের কাজ থেকে সরে আসতে হবে চিরদিনের জন্য। এই গুনাহ মাফের রজনীতে একজন মুমিন হয়ে উঠবে খাঁটি সোনার মত প্রকৃত মুত্তাকি। তাই তো বলা হয় এ রাতের বিপুল বরকত লাভের অদম্য চেতনায় দীপ্ত হয়ে উঠে মোমিনের দেহ মন। সে তার স্থুল অস্তিত্বের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক পরশ ব্যাকুলতা অনুভব করে এই রজনী পাবার এবং আলিঙ্গন করার জন্য। এ রাতের দৃপ্ত আহরণে জেগে থাকে একাগ্রচিত্তে। সে তৃষ্ণার্থ চাতকের মত লক্ষ্য রাখে এ রাতটি আগমনের প্রতি । দুনিয়ার সব ভোগ বাদী অর্থনীতি ও বিলাসিতা পরিহার করে শুধু ব্যস্ত থাকবে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে আর এইটাই একজন মোমিনের কামনা হওয়া উচিৎ। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, আজ এই দিনটি বহুমুখী বেদআতে ভরপুর। বিজ্ঞানের এই স্বর্ণ উজ্জ্বল যুগে এসেও মুসলিম সমাজে এমন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয় যা ইসলামী শরিয়তের সম্পূর্ণ বিরোধী। যেমন এই রজনীতিতে এক শ্রেণীর লোক আনন্দ, ফুর্তি, হাসি, তামাশা, গল্প গুজব আর আতশ বাজীর মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়। বাড়ী বাড়ী বিভিন্ন প্রকার ফিরনী, সেমাই এবং হালুয়া রুটি তৈরীর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। নাজাতের আশায় কবরে কবরে জ্বালিয়ে দেয়া হয় ধুপবাতী যা আদৌ ইসরামী শরিয়ত সম্মত কিনা তা ভেবে দেখার জন্য জ্ঞানী পাঠক সমাজের নিকট প্রশ্ন রাখছি। তবে এদিনে ফকির মিসকিনকে খাওয়ানো ভাল মন্দ খাবার পরিবেশন করা দোষের কিছু নেই।
অথচ আজকের রাতে জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফের আশা নিয়ে একাগ্রচিত্তে কেঁদে কেঁদে বুক ভিজানোর কথা। প্রার্থনা করার কথা যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য। তাই আসুন আমরা আর বিদআত নয়, হাসি তামাশা নয়, বরং শবেবরাত পালিত হবে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে আসুন দিনে রোজা এবং রাতে কেঁদে কেঁদে দুচোঁখ উজার করে একাগ্রচিত্তে ফরিয়াদ করি মহান মাবুদের দরবারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন