সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন : শবেবরাতে: আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় আমল কি ?
উত্তর : শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাত; হিজরি সনের অষ্টম মাস ‘শাবান’ মাসের একটি ফজিলতপূর্ণ রজনীর নাম। যাকে ঘিরে বিভ্রান্তির শেষ নেই। কেউ বলছে শবেবরাত কোনো ফজিলতপূর্ণ রজনী নয় ‘সহি হাদিসে’ এর কোনো প্রমাণ নেই। আবার কেউ তাকে আলোকসজ্জা, আতশবাজি দিয়ে উদযাপনের মাধ্যমে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ করছে। উদযাপন করছে হালুয়া-রুটি, খিচুড়ি বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য বানানো ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বিতরণ করার মধ্যদিয়ে। এভাবে খাদদ্রব্য গরিব-মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করা সাধারণ অবস্থায় জায়েজ ও ভালো কাজ হলেও এটাকে এ রাতের বিশেষ আমল মনে করা এবং এসবের পেছনে পড়ে এ রাতের মূল কাজ তওবা-ইস্তেগফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হওয়া শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার একশ্রেণির লোক এ রাতকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও পুরনো শক্রতার প্রতিশোধের জন্যও বেছে নিয়ে থাকেন। যেমনটি উঠতি বয়সী ছেলেদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়। মূল কথা হলো, এই রাতটি উৎসবের রাত নয়, ইবাদত-বন্দেগি ও তওবা ইস্তেগফারের রাত। তাই রসম- রেওয়াজের অনুগামী হয়ে এ রাতে উপরোক্ত কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। (ইকতিজাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ২/৬৩২; ইমদাদুল ফাতাওয়া৫/২৮৯) শবেবরাতের ফজিলত: শবেবরাত অর্থাৎ ১৫ শাবানের রজনীর ফজিলত সম্পর্কে সহি হাদিস রয়েছে। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহি ইবনে হিব্বান হাদিস: ৫৬৬৫) অন্য হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আলা ইবনুল হারিছ (রা.) থেকে বর্ণিত, উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো, তাঁর হয়তো ইন্তেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আঁয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রসুলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের ১৪ তারিখের বিদাগত রাত)। আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থায়ই। (শুআবুল ইমান, বায়হাকি ৩/৩৮২,৩৮৩)
শবেবরাতের আমল: শবেবরাত ও শবেকদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী করণীয়। ফরজ নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর কিছু নফল পড়া তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। উপরোক্ত হাদিস থেকেও এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া,  সেজদা দীর্ঘ হওয়া, দোয়া ও ইস্তেগফার করা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। তবে এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদিস শরিফে ও নেই, আর সাহাবায়ে কেরামের যুুগেও এর রেওয়াজ ছিল না।  (ইকতিজাউস সিরাতি ল মুস্তাকিম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯)।
শবেবরাতের রোজা: যেহেতু শাবানের এক তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখার বিশেষ ফজিললতের কথা হাদিস শরিফে রয়েছে। এ ছাড়াও  ‘আইয়ামে বিজ’ তথা প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশনা ও পাওয়া গেছে। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ  (সা.) ইরশাদ করেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস: ১৩৮৪) তাই বিভিন্ন সহি হাদিসে শাবান মাসের রোজার সাধারণ ফজিলত এং আইয়ামে বিজের রোজার ফজিলত উল্লিখিত হওয়ার পাশাপাশি জয়িফ সনদে উরোক্ত হাদিসটিও বিদ্যমান থাকায় যদি কেউ এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ১৫ শাবানের রোজা রাখেন তাহলে তিনি সওয়াব পাবেন ইনশা আল্লাহ।
উত্তর দিচ্ছেন : মাও: এইচ এম গোলাম কিবরিয়া (রাকিব)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন