মুহাম্মাদ ইবরাহীম খলিল
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কন্যা সন্তান হিসেবে নারীর মর্যাদা: কন্যা হিসেবে নারীর মর্যদা অধিক। ইসলাম কন্যা সন্তানদের প্রতি দয়া করা, তাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়া, আদর যতœসহকারে লালন-পালন করা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নেককার নারী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। জাহিলিয়্যাতের যুগে যে সব কাফের মুশরিকরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করত, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। পক্ষান্তরে যারা কন্যা সন্তান লালন পালন করে রাসূল সা. তাদের জান্নাতের গ্যারান্টি দিয়েছেন।
ইমাম আহমদ রহ. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি দুটি অথবা তিনটি কন্যা অথবা দুটি বোন বা তিনটি বোনকে তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, অথবা তাদের মারা যাওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, জান্নাতে আমি ও সে দুটি আঙ্গুলের মত মিলে মিশে থাকবো। রাসুল সা. তার শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা বৃদ্ধা আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দেন।”
মা হিসেবে একজন নারীর মর্যাদা: একজন নারী যখন মা হয়, তখন তাকে বিশেষ সম্মান ও অধিক মর্যাদা দেয়ার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। তাদের কোন প্রকার কষ্ট না দেয়া, তাদের সাথে সুন্দর ও সর্বোত্তম ব্যবহার করা,তাদের খেদমতে সর্বদা সচেষ্ট হওয়া এবং তাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করার আদেশ দেয়। আল্লাহ তায়ালা সূরা আহকাফের ১৫ নং আয়াতে বলেন, “আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি।”
বুখারি মুসলিমে আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞাসা করা হল, “হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বেশি ভালো ব্যবহারের উপযুক্ত লোকটি কে? তিনি বললেন, তোমার মা, লোকটি বলল, তারপর কে? বললেন, তোমার মা, লোকটি আবারো বলল, তারপর কে?বললেন, তোমার পিতা।”
স্ত্রী হিসেবে নারীর অধিকার: ইসলাম একজন নারী যখন কারো স্ত্রী হয়, তখন তাকে স্ত্রী হিসেবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া ও তার যাবতীয় অধিকারকে অক্ষুণœ রাখার জন্য স্বামীদের নির্দেশ দেয় এবং স্বামীর উপর তার কিছু অধিকার বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়। একজন স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করা, লেবাস পোশাক, ভরণ-পোষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। তাদের সাথে বিন¤্র ও কোমল ব্যবহার করা, তাদের বিষয়ে সহনশীল হওয়া এবং অহেতুক তাদের সাথে দুর্ব্যবহার না করা। স্ত্রীদের অধিকার সম্বলিত কুরআনের সূরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা তাদের সাথে সৎ ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রাখবেন।” ইসলাম ঘোষণা করে যে, তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যে তার পরিবার তথা স্ত্রীর নিকট উত্তম। একজন স্বামীর উপর কর্তব্য হল, সে তার স্ত্রীকে দীন শেখাবে, তার সম্ভ্রমের হেফাযত করতে যথা সাধ্য চেষ্টা করবে। তাদের যাতে কোন প্রকার ঘরের বাইরে যেতে না হয়, তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করবে।
ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান বিনিময় : আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে পুরুষের সঙ্গী বানিয়েছেন। তাদেরও সেই কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে, যে কাজের আদেশ পুরুষদের দেয়া হয়েছে। প্রত্যেককে তাদের ইখলাস, চেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী কিয়ামত দিবসে সাওয়াব ও বিনিময় দেয়া হবে। তাদের কাউকে কোন প্রকার বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তায়ালা সূরা আহযাবের ৩৫ নং আয়াতে বলেন, “নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।”
শিক্ষার অধিকার: ইহুদীদের মৌলিক ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে এসেছে, নারীদের তাওরাত পড়ার কোন অধিকার নেই। জনৈক ইহুদী পÐিত এ কাথাটাকে আরও স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন, মহিলারা তাওরাত পড়ার চেয়ে তাওরাতকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা উত্তম। কোন পুরষের অধিকার নেই তার কন্যা সন্তানকে তাওরাত শিক্ষাদানের। (উবহরংব খ. ঈধৎসড়ফু, “ঔঁফধরংস”, রহ অৎারহফ ঝযধৎসধ, বফ., ড়ঢ়. পরঃ., ঢ়. ১৯৭.)। অথচ ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শরিয়তের হুকুম-আহকাম সম্বলিত ইলম অর্জন করাকে ফরজ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন