স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৩৬তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় দেশবাসীকে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দলের নেতারা। গতকাল বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ আলোচনা সভা হয়। এতে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনা সভায় সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরার জন্য শেখ হাসিনার অতীব প্রয়োজন ছিল জানিয়ে বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর নির্মম হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার মত ছিল না। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার হাত ধরে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করছি শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান। তিনি দেশকে সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন আশা করি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ৮১ সালে শেখ হাসিনার দেশে = ফেরার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরো এগিয়ে নিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্বার্থ ত্যাগ করে ঐক্য বদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ পরাজিত করতে পারে না।
তিনি বলেন, সামান্য স্বার্থ নিয়ে পার্টির মধ্যে বিশৃঙ্খলা-বিদ্রোহ সৃষ্টি করবেন না। আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। মানুষের কল্যাণে আগামীতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। মনে রাখবেন ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সবাইকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিএনপির সহায়ক সরকার প্রসঙ্গে শেখ সেলিম বলেন, কোন অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান দলের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ‘লিগ্যাসি’ উপাধি দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলিটিক্যাল লিগ্যাসির মৃত্যু নেই। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়ন অগ্রযাত্রার লিগ্যাসি। যা বেঁচে থাকবে চির দিন।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে এক প্লাটফর্মে দাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, এ দেশ থেকে জঙ্গি এখনো নির্মূল হয়নি। এই সা¤প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হলে, খন্ড খন্ড ভাবে প্রতিবাদ করলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে এক মঞ্চে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধীদের নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই। মনে রাখবেন, শেখ হাসিনার কিছু হলে সারা বাংলায় আগুন জ্বলবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিতাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের এই আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, প্রবীণ শিক্ষক মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ, ডা. নুজহাত চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত
এদিকে, নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৩৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে ফেরেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৩৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে গণভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে সকালে ছাত্রলীগ শোভাযাত্রা বের করে। বিশ^বিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ও আশেপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাংগঠনিক শরিফুল ইসলাম ফারুক, দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহাজাদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শোভাযাত্রায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
যশোরে আলোচনা সভা
যশোর ব্যুরো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে যশোরে বিশাল আলোচনা সভা করেছে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকেলে দড়াটানা ভৈরব চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেন। বক্তব্য দেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার, সহ সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন খসরু, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী রায়হান, সদস্য ও পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, দপ্তর সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা মাহমুদ হাসান বিপু, জেলা যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সহ সভাপতি সৈয়দ মেহেদি হাসান, জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল। এদিকে,যশোরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল- র্যালী, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন