বিশ্বব্যাপী তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে পপ কনসার্টের জোড়া বিস্ফোরণে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন আইএস-এর দায় স্বীকারের খবর দিয়েছে জিহাদি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মুনাফাভিত্তিক ওয়েবসাইট সাইট ইন্টিলিজেন্স। তারা আইএসকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, আল্লাহর একজন সৈনিক তার আইন প্রতিষ্ঠার জন্য, এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিম নিপীড়নের প্রতিবাদে এই হামলা চালিয়েছে। হামলার প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে সারাবিশ্বে। এদিকে আইএস সমর্থকরা সংঘটিত হামলার সফলতা দাবি করে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছে বলেও দাবি করেছে সাইট ইন্টিলিজেন্স। কনসার্টে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৯ জন। এ বিস্ফোরণেকে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে ব্রিটিশ পুলিশ। এদিকে কনসার্টে বোমা হামলাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বোমা হামলার আগে ওই ব্যক্তিকে কনসার্টের অ্যারেনায় দেখা যায়। তিনিই এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছে ম্যানচেস্টার পুলিশ। গত সোমবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী আরিয়ানা গ্র্যান্ডের কনসার্টে চালানো ওই হামলায় নিহত হয়েছেন ২২ জন। ওই ঘটনায় আহত মানুষের সংখ্যা ৫৯। এই হামলাকে প্রাথমিকভাবে আত্মঘাতী কর্মকান্ড হিসেবে শনাক্ত করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। সাইট ইন্টিলিজেন্সে আইএস-কে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে: আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পা নিয়ে খেলাফতের এক সেনা যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরে ক্রুসেডারের ভিড়ের মাঝে বিস্ফোরক স্থাপন করতে পেরেছে। আল্লাহর ধর্ম কায়েমের বিরোধী যারা, সেই তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে, মুশরিকীনদের (যারা আল্লাহর পাশাপাশি অন্যদেরও প্রার্থনা করে) মনে ভয় জাগাতে এবং মুসলিম ভূখন্ডের ওপর তাদের অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ করতে এ হামলা চালানো হয়েছে। একটি নির্লজ্জ কনসার্টে ডিভাইসগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এতে ৩০ ক্রুসেডার নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়। ভবিষ্যতে আল্লাহর অনুমতি নিয়ে ক্রসের পূজারী ও তাদের মিত্রদের ওপর আরও বেশি ভয়াবহ হামলা চালানো হবে। সকল প্রশংসা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর জন্য। হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে বিশ্বনেতারা। ইতোমধ্যে এরিনা সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া ট্রেন স্টেশনসহ বড় এরিনাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মঙ্গলবার সারাদিন এগুলো বন্ধ থাকবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হতাহতদের প্রতি ও তাদের পরিবারের পাশে রয়েছেন বলে জানান। লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন ও লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা টিম ফ্যারনও তাদের সহমর্মিতা জানিয়েছেন। ম্যানচেস্টার পুলিশের টুইটার বার্তায় বলা হয়, এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৫৯ জন। শিল্পী আরিয়ানা অক্ষত আছেন। পুলিশ বলছে, হামলাটি হয়েছে জনবহুল কনসার্টে। হামলার জন্য বেছে নেয়া সময়, স্থান এবং হামলার প্রকৃতি ইঙ্গিত দিচ্ছে এটি একটি আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা। গত ১২ বছরের মধ্যে এটি ব্রিটেনে সংঘটিত সবচে বড় আত্মঘাতী হামলার ঘটনা। সবশেষ ২০০৫ সালে লন্ডন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় নিহত হন ৫২ জন। নির্বাচনের দেড় মাস আগে ম্যানচেস্টারে পপ কনসার্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরিসা মে এবং লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। থেরিসা মে বলেন, পুলিশ মনে করছে এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। সরকার হতাহত ও তাদের পরিবারের পাশে আছে। হামলার পরপরই তিনি পূর্বনির্ধারিত নির্বাচনী প্রচারণা কর্মসূচি বাতিল করেছেন। বৈঠক ডেকেছেন সরকারের জরুরি কোবরা কমিটির। জেরেমি করবিন টুইট করেন, ম্যানচেস্টারে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ও আমাদের অসাধারণ জরুরি সেবা বিভাগের পাশে আছি। হামলার পরে টুইট করেছেন পপ তারকা আরিয়ানা। তিনি লিখেন, আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। হৃদয়ের গভীর থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এ ঘটনার বর্ণনা দেবার মত ভাষা আমার নেই। ইয়ান হপকিন্স নামে ম্যানচেস্টার পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আপাতত এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহতদের ম্যানচেস্টারের ছয়টি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেথলেহাম সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় ব্রিটিশ জনগণের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট অব রাশিয়া নামের টুইটার একাউন্টে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভøাদিমির পুতিন শোক ও সমবেদনা জানান। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, আমি ভীষণ মর্মাহত। তীব্র নিন্দা জানাই এই হামলার। আমি উদ্বিগ্ন সেই পরিবারগুলোকে নিয়ে যারা স্বজন হারিয়েছেন। আহতদের জন্য রইলো প্রার্থনা। এই পর্যায়ে আমরা ধারণা করছি, একজন হামলাকারীই এই হামলা চালিয়েছে। হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। বলেছেন ম্যানচেস্টার পুলিশের চিফ কনস্টেবল। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, হামলাস্থলেই নিহত হয়েছেন হামলাকারী।এখন বিবেচ্য হলো, তিনি নিজ সিদ্ধান্তে হামলা চালিয়েছেন নাকি কোনও নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করেছেন। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বিস্ফোরণে পুরো দালান কেঁপে উঠে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পালাতে শুলু করে। ইতোমধ্যে এরিনা সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া ট্রেন স্টেশনসহ বড় অ্যারিনাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কঠোর ভাষায় এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সিঙ্গাপুর এ হামলায় নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শোক এবং আহতদের দ্রæত সুস্থতা কামনা করছে। ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে ভয়াবহ হামলায় কঠোর নিন্দা জানিয়েছে শ্রীলংকা। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মহিশিনি কোলোন জানান, ম্যানচেস্টারে এ হামলার ঘটনায় শ্রীলংকা মর্মাহত। শ্রীলংকা কঠোর ভাষায় এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের নিন্দা জানাচ্ছে। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আল- জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন