উপকূলে গুমোট আবহাওয়া : সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি
শফিউল আলম : সারাদেশে চলছে অসহনীয় তাপদাহ। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েকটি জেলা বাদে প্রায় সর্বত্র বিরাজ করছে তীব্র খরতাপ। জেঁকে বসেছে বৈরী আবহাওয়া।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) চলমান তাপপ্রবাহের টানা এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং নতুন নতুন জেলায় তীব্র তাপদাহ ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে সমুদ্র উপকূলে বিরাজ করছে তাপদাহের সাথে অস্বাভাবিক গুমোট আবহাওয়া। এ অবস্থায় গত সন্ধ্যা নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন মধ্য-বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে কিনা সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আবহাওয়া দপ্তর। দেশের সর্বত্রই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার হারও উঁচুতে রয়েছে। এ উভয় কারণে ভ্যাপসা গরমে-ঘামে মানুষ নাকাল এবং পানিস্বল্পতায় শরীর দ্রæতই কাহিল হয়ে হাঁপাচ্ছে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৬.৬ ও ২৮.৬ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামে ৩৫.২ ও ২৮.৩ ডিগ্রি সে.।
এদিকে সমগ্র দেশের মতো দেশের সমুদ্র উপকূলভাগ, চর ও দ্বীপাঞ্চলে গত ৩-৪ দিন যাবত তীব্র ভ্যাপসা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই সাথে বিরাজ করছে সা¤প্রতিককালের নজিরবিহীন গুমোট আবহাওয়া। গত পর পর দুই দিনে সৈকত নগরী কক্সবাজারেই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩৬ ও রাতে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে। একইভাবে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বৃহত্তর নোয়াখালী, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে তথা বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় বেল্টে অসহ্য তাপদাহের সাথে গুমোট আবহাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজমান রয়েছে। এসব উপকূলীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সে. ঊর্ধ্বে রয়েছে।
এহেন অসহনীয় টানা গুমোট-গরমকে আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সূত্র অতীত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে একে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আলামত বা পূর্ব-লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। তাছাড়া উপকূলবাসীও রীতিমতো দুর্যোগের আতঙ্কে ভুগছেন। দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়া পূর্বাভাসে চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে মর্মে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। অতীতে সাধারণত এদেশে এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস বিভিন্ন সময় আঘাত হানে। তাই এই সময়কে অভিহিত করা হয় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসের মওসুম হিসেবে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন মধ্য- বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠে তাপমাত্রা অবিরাম ২৮ ডিগ্রি সে. এর ঊর্ধ্বে থাকলে সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। অবশ্য গতকাল পর্যন্ত সমুদ্র বন্দরসমূহকে কোনো সতর্ক সঙ্কেতও দেখানো হয়নি। আবহাওয়া বিভাগ লঘুচাপের মতিগতির দিকে দৃষ্টি রাখছে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বি¯ৃÍত রয়েছে। আজকের (শুক্রবার) আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল অঞ্চলসহ রংপর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, রাঙ্গামাটি, চাদপুর নোয়াখালী ও কক্সবাজার অঞ্চলসহ ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন