শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মিঠুর কিলার মাস্টার মাইন্ডকে খুঁজছে পুলিশের চার বিভাগ

সন্দেহের তালিকায় মিঠুর দু’জন বডিগার্ড ও দু’জন বিএনপি নেতা

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম



আবু হেনা মুক্তি : খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু হত্যার গডফাদার কারা, মাস্টারপ্লান হয়েছে কোন সেক্টর থেকে আর কিলিং মিশনে কারা ছিল তা নিয়ে এখন মাঠে পুলিশের চার বিভাগ। ডিবি পুলিশের পোশাক পরিহিত কিলাররা কিভাবে হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করে পালিয়েছে তা নিবিড়ভাবে পর্যাবেক্ষণ করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত আলামত পরীক্ষা নিরীক্ষা, প্রতক্ষ্যদর্শীদের ভাষ্য বিশ্লেষণ, জোড়া হত্যা ঘটনার ধরন বা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং ঐ সময় সন্দেহভাজনদের কল লিস্ট পরীক্ষাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পুঁজি করে তদন্ত চলছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ বিশেষ ৫টি কারণকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্থানীয় ‘সরদার’ এবং ‘ভূঁইয়া’ পরিবারের মধ্যে বিরোধ, এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব, জনপ্রিয়তা, দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং চরমপন্থীদের সঙ্গে দ্ব›দ্ব। তবে হত্যাকান্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো ক্লু এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু কাগজে কলমে দু’জন গ্রেফতার হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরবন্দি রয়েছে ৪ জন। নির্ভরযোগ্য সূত্রটি বলছে, সন্দেহের তালিকায় নজরবন্দি ৪ জনের ২জন মিঠুর বডিগার্ড এবং অপর ২ জন বিএনপি নেতা। ফলে মামলার অনেক বিষয় এখন পুলিশের হাতে।
সূত্রমতে, খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের গাজী হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশের চার বিভাগ। ফুলতলা থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে রয়েছেন। তারা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য বিশ্লেষণ এবং জোড়া হত্যা সংগঠনের ধরন পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেও কিলার এবং মাস্টারমাইন্ডকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ফুলতলাা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হাওলাদার সানওয়ার হোসাইন মাসুম বলেন, জোড়া হত্যায় আটক ইমরুল শেখ এবং রকিবুল ইসলাম রাকিবকে গত শনিবার ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইমরুল শেখ ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে এবং রকিবুল ইসলাম রাকিব উপজেলার আলকা গ্রামের মাহাবুব খোন্দকারের ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে থানা, জেলা ডিবি, সিআইডি এবং পিবিআই সদস্যরা কাজ করছেন। অচিরেই কিলার এবং মাস্টারমাইন্ডদের আটক করা সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন তিনি। পুলিশের অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কোন রাজনৈতিক মহলের ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা লাভ হবে না। বিষয়টি হাই কমান্ড থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকান্ডের মদদদাতা ও জড়িতদের সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে চৌকস কর্মকর্তারা এখন মাঠে। দ্রæত তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
নিহত মিঠুর পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আবেগাপ্লুত হয়ে ভূইয়া পরিবারের দিকে সন্দেহের তীর নিক্ষেপ করলেও মামলায় কারও নাম দেয়া হয়নি। তবে মিঠুর বাবা সরদার আবুল কাশেম, বড় ভাই সরদার আবু সাঈদ বাদল এবং এর আগে মিঠুর ওপর বোমা হামলা মামলায় জড়িতদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ তিনটি মামলার বাদি ছিলেন মিঠু। মিঠুর অল্প বয়সে রাজনৈতিক উত্থান ছিল চোখে পড়ার মত। তাকে বিরোধীরা সব সময় হিসাব নিকাশের মধ্যে রেখেছিল। তাছাড়া এসব মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা মিঠুকে একাধিকবার হুমকি দেয়। এ নিয়ে মিঠু তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করেন। খুলনার আইন শৃঙ্খলা সভায় এ অভিযোগ উত্থাপন করেন। এজাহারে এসব বিষয়ও কিছু কিছু উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে বিএনপিতে জেলা কমিটির তার পদ পদবী কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে তার বিশেষ সখ্যতা এবং আগামী নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রত্যাশাকেও দলীয়ভাবে কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখেছেন। এ হত্যাযজ্ঞতে দলীয় মাইনাস ফর্মুলা কাজ করেছে কি না সে বিষয়েও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।
মিঠুর বৃদ্ধা মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার চোখে আর পানি নেই। প্রথমে হারালাম স্বামীকে পরে বড় ছেলে আর এখন আমার সোনার চাঁদ মিঠুকে। ওরা আমাদেরকেও মারল না কেন। কেন বাচিয়ে রেখেছে আমাদের। আমাদের কি অপরাধ? এলাকার মানুষের উপকার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই কি আমাদের অপরাধ। এ কথা বলতে বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহত মিঠুর ভাই সরদার সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, আপনারা সাংবাদিক তাই কাউকে না বললেও মনের কথা আপনাদের বলা যায়। মিঠুর জনপ্রিয়তা ও এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই তাকে আজ দুনিয়া ছাড়তে হল। আমাদের বেঁচে থেকে কোন লাভ নেই। আমাদের আর কোন অভিভাবক রইলা না। আমরা কোনদিন বিচার পাইনি আর হয়তো পাবোও না। আমার পিতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেম ও ভাই সরদার আবু সাঈদ বাদলকে যারা হত্যা করেছে তারাই এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত’।
সরদার ও ভূঁইয়া পরিবারের বিরোধ : খুলনা মহানগর সংলগ্ন শিল্প নগরী ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর পরিবারের সঙ্গে ভূঁইয়া পরিবারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এর মূল কারণ। রূপকথার মত এ দুই পরিবার যেন সাপ আর বেজী। দুই পরিবারের পথ চলা যেন ভিন্ন মেরুতে। যার জন্য বলি হল  মিঠুর পিতা সরদার আবুল কাশেম ও বড় ভাই সরদার আবু সাঈদ বাদল আর সর্বশেষ সদা হাস্যজ্জল তরুন নেতা মিঠু। যার সামনে ছিল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মে বৃহস্পতিবার রাত পৌঁনে ১০টার দিকে বিএনপি নেতা সরদার আলাউদ্দিন মিঠু, তার শ্বশুর সৈয়দ সেলিম, দেহরক্ষী নওশের গাজী, সানোয়ার ও সাদ্দামসহ পাঁচজন মিঠুর বাসভবন খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলতলা উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী দামোদর গ্রামের বাসভবন  চেয়ারম্যান বাড়ী’র সামনে নিজ কার্যালয়  মেসার্স মিঠু এন্টারপ্রাইজে’ বসে কথা বলছিলেন। এ সময় ডিবি পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় তিনটি মোটরসাইকেলে ৭জন সেখানে প্রবেশ করে মিঠুর মাথা ও ঘাড় লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। এ সময় বাধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা মিঠুর দেহরক্ষী নওশের গাজী ও তার শ্বশুর সৈয়দ সেলিমকেও গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নওশের গাজীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনিও মারা যান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
শুভ্র ২৯ মে, ২০১৭, ১:১৫ এএম says : 0
দ্রুত এদের খুঁজে বের করুন।
Total Reply(0)
Moshahed Uddin ২৯ মে, ২০১৭, ১:৫৪ পিএম says : 0
আশা করব দ্রুত সময় গ্রেফতার হবে।অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পারবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন