প্রশ্ন : খেয়ানত করা কি মুনাফিকের স্বভাব?
খেয়ানত। যা আমানতের বিপরীত। শাব্দিক অর্থ, বিশ্বাসহীনতা, অনাস্থা, বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি। ‘অন্যের গোপনে বা প্রকাশ্যে গচ্ছিত কোন সম্পদের কিছু বা পুরো অংশ বিনষ্ট করাকে খেয়ানত বলে’। কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকে খেয়ানত বলা হয়। এটি মন্দ কাজ সমূহের অন্যতম। খেয়ানতকারী ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, জাতি সবার জন্য অকল্যাণকর, অমঙ্গলজনক এবং বিপদজনক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খেয়ানত না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে খেয়ানত করো না এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে’ -(সুরা আল আনফাল ঃ ২৭)। খেয়ানতকারী সমাজের জন্য বিষফোঁড়া স্বরূপ।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় কখনো কোনদিন কোন আমানতের খেয়ানত করেন নি। ছোটবেলা হতে এই পার্থিব দুনিয়া ত্যাগ করা অবধি তিনি ছিলেন প্রকৃত আমানতদার। তাইতো তিনি সমাজের মধ্যে আল আমীন বা বিশ্বাসী উপাধীতে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। খেয়ানত করাকে তিনি মুনাফিকের আলামত বা নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাঁর বানী, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যার মধ্যে চারটি স্বভাব পাওয়া যাবে সে প্রকৃত মুনাফিক হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যার মধ্যে তার একটি স্বভাব পাওয়া যাবে (বুঝতে হবে যে) তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে তা পরিহার না করবে। সেগুলো, ১. যখন তার নিকট কিছু আমানত রাখা হয়, তখন সে তা খেয়ানত করে। ২. যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। ৩. যখন ওয়াদা করে পরে তা ভঙ্গ করে। ৪. যখন কারো সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তখন সে অশ্লীল কথা বলে’ -(বোখারী ও মুসলীম)। আলোচ্য হাদীসের আলোকে প্রস্ফুটিত হচ্ছে যে, খেয়ানত করা জঘণ্যতম অপরাধ। খেয়ানতকারী মুনাফিক। যাদেরকে বিশ্বাস করা দুষ্কর। এরা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন, ‘আর তোদের মধ্যে অনেক এমনও রয়েছে যারা একটি দীনার গচ্ছিত রাখলেও ফেরত দেবে না, যে পর্যন্ত না তুমি তার মাথার উপর দাড়াতে পারবে’ -(সুরা আলে ইমরান ঃ ৭৫)।
আমাদের সমাজের মানুষগুলো কেমন? আজ আমাদের সমাজে আল আমীন বা বিশ্বাসী উপাধী দেয়ার মত লোক পাওয়া কঠিন, দুষ্কর। খেয়ানতকারী লোকের সংখ্যা সমাজে বিরাজ করছে পিঁপিলিকার মত। আমরা যদি অন্যের আমানতকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে কে আমাদের আমানতকে রক্ষা করবে? কে এগিয়ে আসবে আমাদের সহযোগিতায়? কে আমাদেরকে বিশ্বাসঘাতক মনে করবে না? কে আমাদের উপর আস্থা রাখবে? আর আমরা কার উপর বিশ্বাস রাখব? প্রশ্নগুলোর ইতিবাচক উত্তর তখনই পাওয়া যাবে, যখন আমরা সবাই হবো আমানতদার। আমরা কি সে পর্যায়ে পৌঁছতে পারব?
কাফির-মুশরিকরা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ঈমান না আনলেও তাঁর প্রতি তাদের বিশ্বাস ছিল পাহাড়সম। তাদের এই অনড় বিশ্বাস কোনদিন নড়বড়ে হয়নি। কারণ, তারা যার কাছে আমানত রাখত তিনি তো ছিলেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ আমানত রক্ষক। তাইতো কাফির-মুশরিকরা ঈমান না আনা স্বত্তে¡ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গচ্ছিত রেখে যেত তাদের ধন-সম্পদ। যার কারণে, মক্কার কাফির-মুশরিকদের কষ্ট-নির্যাতনে মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেও হিজরতের প্রাক্কালে হজরত আলী (রা.) কে মক্কায় রেখে যাচ্ছিলেন কাফির-মুশরিকদের আমানত পৌঁছে দিতে। তিনিই তো আদর্শ। তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করলে কোন সে সমাজ যা শান্তিময় হয়ে উঠবেনা? আমাদের উচিৎ সে নবীর আদর্শে আদর্শিত হয়ে খেয়ানত করাকে চিরতরে বিসর্জন দেয়া। যদি এই যৎসামান্য কাজটুকু আমরা ছাড়তে না পারি তাহলে কিভাবে আমাদের সমাজকে আদর্শময় করে তুলব?
উত্তর দিচ্ছেন : মাহফুজ আল মাদানী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন