মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান : মানব জাতির জীবন পরিচালনার আদর্শ গাইডলাইন মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে সময় অপচয় ও অনর্থক কাজে ব্যয় করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা সময় বোঝানোর জন্য কুরআনে অনেক প্রতিশব্দ ব্যবহার করে এর প্রতি গুরুতারোপ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদ্দীপ্ত, আর চন্দকে করেছেন আলোকময়। আর তার (হ্রাস-বৃদ্ধির) মানযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা (এনিয়ম দ্বারা) বছরের গণনা এবং দিন তারিখের হিসাবটা জানতে পার; (আসলে) আল্লাহ তা‘আলা যে এসব কিছু সৃষ্টি করে রেখেছেন (তার) কোনটাই তিনি অনর্থক সৃষ্টি করেনটি; যারা (সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে) জানতে চায় তাদের জন্যে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নির্দেশ গুলোকে সুষ্পষ্ট করে বর্ণনা করেন।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: কালের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে ডুবে আছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে তা বুহ সৃষ্টিকে নিয়ে কসম করেছেন, এতে এগুলোর মর্যাদা অনেক বেড়ে গেছে। তেমনি সময় নিয়ে কসম করায় এটি প্রত্যেক মানুষের জন্য কত গুন গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: আমি রাত আর দিনকে দুটো নিদর্শন বানিয়েছি। আমি রাতের নিদর্শনকে জ্যোতিহীন করেছি, আর দিনের নিদর্শনটিকে করেছি আলোয় উজ্জ্বল, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার। আর যাতে বছরের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আমি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছি।
সময়ের সাথে রয়েছে হিসাববিজ্ঞান (অপপড়ঁহঃরহম) ও জ্যোতিবিদ্যার (অংঃৎড়হড়সু) অনন্য সম্পর্ক। কুরআনে সময়ের কথা উল্লেখ করতে যেয়ে আল্লাহ তা‘আলা একাধিক স্থানে এই দুই জ্ঞানের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আর তিনি দিবা রাত্রিকে পরস্পরে অনুগামী করেছেন। যে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায় তার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন, তারা অনুগত হয়ে নিজ নিজ পথে চলছে। আর তিনি রাত ও দিনকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ আরো বলেন: সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে চলছে। আল্লাহ আরো বলেন: নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃজনে এবং দিবস রাত্রির পরিবর্তনের জ্ঞানবানদের জন্যে ষ্পষ্ট নির্দেশাবলি রয়েছে। আল্লাহ আরো বলেন: আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করে থাকি। আল্লাহ আরো বলেন: আল্লাহ দিবস ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান, এতে শিক্ষা রয়েছে অর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্নদের জন্যে।
আল্লাহ আরো বলেন: সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত হিসাবের অধীনে। আল্লাহ আরো বলেন: তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বল, এগুলো হচ্ছে জনসমাজের ও হজ্জের সময় নিরূপক.....। আল্লাহ আরো বলেন: মানুষের উপর অন্তহীন মহাকালের এমন এক সময় কি এসেছিল, যখনসে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না।
আল্লাহ আরো বলেন: তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই হুকুমে; অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন স¤প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সময়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝানোর জন্য আল-কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সময়ের কসম করেছেন। যেমন: শপথ রজনী, যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়, শপথ দিনের, যখন তার আলোকিত হয়। আল্লাহ আরো বলেন: শপথ ফজরের, শপথ দশটি রাতের। আল্লাহ আরো বলেন: সকালের উজ্জ্বল আলোর শপথ, রাতের শপথ যখন তা হয় শান্ত নিঝুম। মহান আল্লাহ কোন তুচ্ছ বিষয়কে নিয়ে শপথ করেন না। আর তার সময়কে নিয়ে কসম করাতে সময়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মহানবী স. সময়কে গুরুত্ব দিতে এবং একে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে অনেক তাকিদ দিয়েছেন। এমনকি তিনি সর্তক করে দিয়েছেন, প্রতিটি মানুষকে সময়ের হিসাব কিয়ামতের দিন দিতে হবে। তিনি আরো বলেন: কিয়ামতের দিন কোন বান্দা চারটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত সামনে যেতে পারবে না- সে তার জীবনকালে কোন কাজে ব্যয় করেছে, তার যৌবনকাল কোথায় ক্ষয় করেছে, তার সম্পদ কোথা থেকে আয় করে কোথায় ব্যয় করেছে এবং তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী সে আমল করেছে কি না। উল্লিখিত হাদীসের চার বিষয়ই সময়ের সাথে সম্পর্কিত।
রাসূল স. আরো বলেন; পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি বস্তকে সুযোগ মনে করো। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন