মুহাম্মদ কামাল হোসেন : বিচিত্র দুনিয়ায় কত রঙ-বেরঙের বর্ণিল সম্পর্কের বেড়াজালে আমরা সদা-সর্বদা আবদ্ধ। সমাজবদ্ধ জীবনে চলতে ফিরতে এ সব সম্পর্ক মানগত ও গুণগত দিক বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। কারণ সব সম্পর্কই যেমন সম্পর্ক নয়। তেমনি ইসলামও সব ধরণের সম্পর্ককে কোন প্রকার বৈধতা দেয় নি। জাগতিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। ইসলামও তাই বলে। এ ব্যাপারে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনে ও রাসুলে পাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র জবান নিঃসৃত একাধিক হাদিসেও উল্লেখ রয়েছে। এ সম্পর্কের পরতে পরতে রয়েছে নিরেট প্রেম-ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভক্তি ও অগাধ বিশ্বাসের অপূর্ব মল বন্ধন। ইট-পাথর ও কংক্রীটের যাপিত জীবনে কর্ম নিষ্ঠ,ক্লান্ত-শ্রান্ত তৃষিত মুহুর্তে স্ত্রীর প্রেমময় একটু খানি ঠোট চিলতে অখন্ড হাসি, গভীর মায়াভরা বাঁকা চাহনী, কিংবা সামান্য একটু কোমল হাতের স্নেহভরা পরশ-স্বামীর নিত্যকার হাঁড়ভাঙ্গা বেধড়ক কঠিন কষ্টকেও মুহুর্তে প্রশমিত করে। প্রলেপ মেখে ভুলিয়ে দেয় সমস্ত পেরেশানি। নারীর ভালোবাসা শক্তির কারণে যেকোন অসম্ভব জটিল-কঠিন কাজকেও পুরুষ অবলীলায় সম্পন্ন করতে পারে। ডিঙ্গাতে পারে পর্বতসম বাঁধা-বিপত্তি।
ভালোবাসা আর নারী এক ও অভিন্ন শব্দ। নারী আছে বলে জগতে ভালোবাসা আছে। ভোরের বাতাস বয়, ফুল ফোটে। পাখ-পাখালির কাকলীতে মুখরিত হয় চারপাশ।
ভালোবাসা ও নারী একই সমরেখায়, সমতটে সমান্তরাল পাশাপাশি চলে। এই সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা ছাড়াও, অগাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতা থাকে।
ভালোবাসা নারী ও পুরুষের মাঝে হৃদয়ের অটুট বন্ধন তৈরি করে। তৈরি করে সাংসারিক বন্ধন। ভালোবাসা ব্যতীত কোন দাম্পত্য জীবনই সুখের হয় না। অনাবিল খোশ আনন্দে মেতে ওঠে না চারদিক। ভালোবাসাহীন জীবন কোন জীবন নয়। এমন জীবনে থাকে না কোন প্রাণের স্পন্দন কিংবা উচ্ছাস।
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনের অস্তিত্ব কল্পনা করা সমীচীন নয়। স্বামী স্ত্রীর জন্য, স্ত্রী স্বামীর জন্য। একজন আরেক জনের অর্ধাঙ্গী। অর্ধাঙ্গী মানে অর্ধেক অঙ্গ। সুতরাং স্পষ্টতই এখানে দু’জনে মিলে একটা পুর্ণাঙ্গ দেহ।
দেহের একাংশে ক্ষতিগ্রস্থ হলে অন্যাংশে ছড়িয়ে পড়বে। একাংশে কেটে গেলে অন্যাংশে যন্ত্রণায় মুছড়ে পড়াটা বাঞ্চনীয়। সন্দেহাতীতভাবে এটা একটা পবিত্রতর বন্ধন। সারাজীবনের পারস্পরিক অঙ্গীকারও। এই অঙ্গীকার টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও দু’জনের ওপর বর্তায়। তার জন্য সর্বাগ্রে বিশ্বাসের ভিতটাকে ধরে রাখতে হবে। এটাকে কখনও অসাবধানতায় আঘাত করা যাবে না। নয়তো সম্পর্ক টিকবে না।
ভেঙ্গে পড়বে। কারণ স্বামী-স্ত্রীর শক্ত ভিতটাই দাঁড়িয়ে থাকে বিশ্বাস নামক শব্দটির ওপর। যার বিশ্বাসের জোর যতটুকু, তার সম্পর্কের ভিতও ততটুকু মজবুত। শুধু তাই নয়, জগতের কোন সম্পর্কই বেশি দিন টিকে না, যদি বিশ্বাস না থাকে। দু’জন দু’জনকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে।
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন