জলের সাথে আছে জলের গভীর পরিচয়/ সমুদ্র তাই ঐক্যবদ্ধ, পাহাড় ততো নয়/ পাহাড় হলো একটা থেকে অন্যটা বেশ দূরে/ কিন্তু সাগর-মহাসাগর বাঁধা একই সুরে’ কবিতায় কবি নির্মলেন্দু গুণ একপাশে পাহাড় অন্যপাশে সাগরকে রেখে তুলনামূলক বর্ণনা দিয়েছেন। কবিতায় পাহাড়-সাগর যতটা সুন্দর বাস্তবে তার বোধহয় আরও বেশি সুন্দর। পাহাড় আর নীল আকাশের মিতালী কত মধুর হয় তা উপভোগ করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে ঘুরে এলো সবুজ পাহাড়ে ঘেরা রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজারের নীল আকাশ ও সমুদ্রের মিতালী এবং সাগরকন্যা সেন্টমার্টিন। গ্রুপের শিক্ষক পরিবর্তনসহ বেশ জামেলা কাটিয়ে অবশেষে আসে সেই সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলিপ্যাড থেকে সন্ধ্যায় কৃষি অনুষদের শিক্ষা সফরের ছয় নম্বর গ্রুপের আমরা রওনা হলাম। উদ্দেশ্য দেশের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। গাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় গান, হইহুল্লোড় আর নাচানাচি। সবাই সুর মিলিয়ে গাইতে থাকি... চল না ঘুরে আসি অজানাতে/ যেখানে নদী এসে থেমে গেছে। পরের দিন দুপুরের আগেই আমরা পৌঁছে যাই কক্সবাজারে। সমুদ্রের নোনাজলে ঝাপাঝাপি, গোসল, আড্ডা, গান, হইহুল্লোড় করে হিমছড়ি, ইনানী বিচ, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাবতী পয়েন্টে কেটে গেল ভ্রমণের আনন্দঘন দুই দিন। এরপর সমুদ্রকন্যা সেন্টমার্টিনে। কাজী নজরুলের বিখ্যাত গান ‘দূর দ্বীপবাসিনী, চিনি তোমারে চিনি/ দারুচিনির দেশের তুমি বিদেশিনীগো, সুমন্দভাষিণী’ গাইতে গাইতে পৌঁছে গেলাম দারুচিনি দ্বীপ খ্যাত সেন্টমার্টিন আইল্যান্ডে।
আমাদের ২৭ জনের গ্রুপের গাইড ড. আসাদুজ্জামান সরকার এবং ড. খান মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে সফলভাবেই শেষ হল সাগর দর্শন। এবার সবুজ অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ের হাতছানি। কণ্ঠ মিলিয়ে গান ধরেছি, সেলফি তুলেছি, ঘুরেছি, নেচেছি উর্মি, আকাশ, শাহেদ, নাহিদ, মেহেদি, রিফাত, মায়া, মাসুম, সোহেলসহ সবাই একসাথে। পাহাড়ের রাজ্য বান্দরবান নীল আকাশ আর মেঘের মহামিলন। চান্দের গাড়িতে করে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে একে একে নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা রিসোর্ট এবং নীলাচল ঘুরে চলে আসলাম লাল পাহাড়ের দেশ রাঙামাটি। আনন্দ ভ্রমণে ভিন্নমাত্রা যোগ করে কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ, রাজবন বিহার, বৌদ্ধ মন্দির, সুবলং ঝর্ণা। সাত রাত ছয় দিনের আনন্দ ভ্রমণের সকল ক্লান্তি যেন ঝেঁকে বসেছিল শেষ দিন। ক্লান্তিভরা চোখে মাঝে হাজারও সুখস্মৃতি নিয়ে এবার ফেরার পালা। তবে ছবি তোলায় কখনো কারো কোন ক্লান্তি ছিল না।
ষ মোফাজ্জল হোসেন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন