বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

এ চুক্তি পুনঃআলোচনাযোগ্য নয় : জার্মানি ফ্রান্স ও ইতালি

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে রোজ গার্ডেনে এক বক্তৃতায় এ কথা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার আগে ট্রাম্প কংগ্রেসকে তার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অবহিত করেন যাতে রিপাবলিকান আইন প্রণেতাগণ প্রত্যাশিত সমালোচনার সম্মুখীন হলে যুক্তি দিতে পারেন।
ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা ও তার নাগরিকদের রক্ষা করা হচ্ছে তার গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করবে, তবে প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় ফেরার জন্য অথবা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনুকূল শর্তাদি স্থির করার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করবে। তিনি বলে, আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা আলোচনা শুরু করব এবং দেখব যে আমাদের জন্য অনুকূল কোনো চুক্তি করতে পারি কিনা। ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অসুবিধাজনক ও অন্যান্য রাষ্ট্রের জন্য একান্তই কল্যাণকর বলে আখ্যায়িত করেন। প্যারিস জলবায়ু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার মানে সবুজ আবহাওয়া তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের সকল চাঁদা প্রদান বাতিল যা ট্রাম্পের ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল অর্থ অপচয়। ২০১৬ প্যারিস চুক্তির আইন মোতাবেক এর নিয়ম-কানুন থেকে বেরিয়ে আসা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া যাতে চার বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে শাস্তি দেয় এবং বিশে^র বড় বড় দূষণকারীদের শাস্তি দেয় না  এমন কোনো চুক্তি ভালো মনে সমর্থন করতে পারেন না। ট্রাম্প দাবি করেন যে যেসব দেশ আমাদের এ চুক্তিতে থাকার জন্য দাবি জানাচ্ছে তার হচ্ছে সেই একই দেশ যারা অন্যায্য বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি করেছে এবং তারা সামরিক জোটের জন্য কোনো চাঁদা দেয়নি। তিনি বলেন, এ পর্যায়ে তারা কি আমাদের উপহাস করতে শুরু করবে? আমি পিটসবার্গের নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত হয়েছি, প্যারিসের নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নয়।
ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশি^ক লড়াই থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বুধবার নবায়নযোগ্য জ¦ালানি মজুদের পাশাপাশি মার্কিন কয়লা কোম্পানির শেয়ারের পতন ঘটে।
ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি ত্যাগ করার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত হুঁশিয়ারি জোরদার করেছে।    
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছু কয়লা কোম্পানি কর্তৃক বাজারে এই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কয়লার স্বার্থের বিরুদ্ধে বৈশি^ক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ত্যাগ করার জন্য বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের সমালোচনা করে হুঁশিয়ারি দেন যে, এ পদক্ষেপের পরিণতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত প্রত্যাখ্যান করা। এক বিবৃতিতে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ কর বলেন, যে সব দেশ প্যারিস চুক্তিতে রয়ে গেল তারা কর্মসংস্থান ও শিল্পক্ষেত্রে সৃষ্ট সুবিধা ভোগকারী দেশ হবে। ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট জাঁ-ক্লদ জাঙ্কার বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে মারাত্মক ভুল বলে প্রত্যাখ্যান করেন।
জার্মানিতে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলের বামপন্থী জোট সরকারের ৭ জন সোস্যাল ডেমোক্র্যাট মন্ত্রীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের, ইউরোপীয়দের ও বিশে^র সকল মানুষের ক্ষতি করছে।
জার্মান মন্ত্রীরা দাবি করেন মুক্ত মানুেেষর দেশ ও সাহসীদের বাসভূমি তার নিজের মৌলিক নীতির বিরোধিতা করছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরেও যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের জন্য দরজা খোলা থাকবে।
কানাডার পরিবেশমন্ত্রী ক্যাথারিন ম্যাককেনা বলেন, প্যারিস চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে তার দেশ অত্যন্ত হতাশ। প্যারিস মেয়র অ্যান হিদালগো বলেন, জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নাটকীয় ফলাফল জনিত ভুল।
জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোর একটি এবং তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে আমেরিকার প্রথম যে সব নীতির কথা বলেছিলেন তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম দিকে চীন বলে, সে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য সমুন্নত রাখবে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র তা থেকে সরে গেলেও। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াং বলেন, তার দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সমুন্নত রাখতে ইইউ ও অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করা অব্যাহত রাখবে। বার্লিনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর লি বলেন, এটা ্অবশ্য আমাদের স্বার্থেও, ধাপে ধাপে টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে  ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য কাজ করা সম্ভব হবে। ইউরোপ মহাদেশের তিন বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে এবং বলেছে , এ চুক্তি পুনঃ আলোচনাযোগ্য নয়। তিন দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে বলে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে দুঃখিত।
ওয়াশিংটন একটি নতুন চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে রাজি বলে ট্রাম্পের ঘোষণার প্রেক্ষিতে তারা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এ চুক্তি পুনঃ আলোচনাযোগ্য নয়। পিটসবার্গের মেয়র টুইটে বলেন, আমাদের জনগণ, আমাদের অর্থনীতির স্বার্থে নগরী প্যারিস চুক্তির গাইড লাইন অনুসরণ করবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন শীর্ষ শত কোটিপতি ব্যবসায়ী নেতারও সমর্থন হারিয়েছেন। টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক টুইটারে লেখেন যে তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল ত্যাগ করছেন। ট্রাম্প এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে তিনি এ রকম কিছু করার অঙ্গীকার করেছিলেন। মাস্ক লেখেনঃ জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃত বিষয়। প্যারিস চুক্তি ত্যাগ আমেরিকা ও বিশে^র জন্য ভালো নয়। সূত্র আল জাজিরা ও অন্যান্য বার্তা সংস্থা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন