মুহাম্মদ কামাল হোসেন
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
দু’জন দু’জনার সংসার জীবন কিভাবে সুখ সমৃদ্ধতা ও হাসি আনন্দে ভরে তোলা যায়, কিংবা কী করলে দু’জনার মাঝে মনের আদান-প্রদান চমৎকারভাবে অক্ষুণœ থাকবে, এমন বিষয়গুলোতেও পারস্পরিক ইচ্ছার গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
একজন গুণধর স্ত্রী সংসারকে তার নিজের আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারে, সাজিয়ে তুলতে পারে সংসার জীবনকে সুখের স্বর্গীয় উদ্যানের মতো। তবে এই কাজের জন্য দরকার প্রেমিক স্বামীর স্ত্রীর প্রতি ঐকান্তিক মায়া-মমতা ও সু-গভীর ভালোবাসা।
স্ত্রীকেও প্রিয়তম স্বামীর প্রতি অনুরুপ স্নেহাশীষ ও যতœবান হতে হবে। স্ত্রীকে স্বামীর বুঝার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রিয়তমা স্ত্রীকে যত বেশি বুঝার চেষ্টা থাকবে, তত বেশি তার ভালোবাসা উপলুব্ধ হবে, তত বেশি সংসার জীবনে সুখী হওয়া যাবে। সুখ এক ধরণের পাখি। সবসময় নিজে থেকে এসে ধরা দেয় না, ধরতে হয়। তৈরি করে নিতে হয চমৎকার রূপে। এজন্যই স্বামী-স্ত্রী দু’জনার মাঝে থাকতে হয় প্রচুর আত্মবিশ্বাস ও সমঝোতা এবং সু-নিপুণ স্বচ্ছ অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা।
স্মরণরাখতে হবে, স্ত্রীর কথা ও কাজকে ক্ষেত্র বিশেষে গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক সময় একটা জটিল ও কঠিন বিষয়কেও স্ত্রী চট করে সহজ সমাধান দিতে দেখা যায়। এতে স্বামীর কাজটা সহজ হয়ে যায়। সবসময় নিজের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া বুদ্ধিমান ও রোমান্টিক স্বামীর কাজ নয়। জেনে রাখা ভাল, স্ত্রীকে হেয় করলে বা তার কথা ও কাজকে অবহেলা করলে কিংবা গুরুত্ব না দিলে হৃদয়ের টান কমতে থাকে, ফলশ্রæতিতে জন্ম নেয় অজানা চাপা ক্ষোভ।
যা কী-না আস্তে আস্তে ভালবাসার দূর্গে আঘাত হানতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে একে অপরকে সর্বোত্তম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারলে বাঁধন শক্ত ও মজবুত হয়। এক অন্যের প্রতি আরো আন্তরিকতা ও সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীলতা হয়ে উঠে। ছোট বড় যে কোনো ধরনের কাজ করার আগে স্ত্রীর সাথে তা খোলা মনে আলাপ আলোচনা বা পরামর্শ করে নিলে সে কাজে সফলতার পাশাপাশি কর্ম উদ্দীপনাও প্রস্ফুটিত হয়। অনেক সময় হয়তো কোনো কাজে বা কোনো পদক্ষেপে ভুল লুকিয়ে থাকে, শেয়ারিং এর ফলে সে ভুলটি অনায়াসে ধরা পড়ে। এতে কাজটাও সহজ হবে,মজবুত হবে দুজনের সম্পর্কটাও।স্বামী-স্ত্রীর মিলিত ভালোবাসা বুদ্ধি ও চিন্তা ভাবনার সমন্বয়ে একটি ছোট সংসার সুখময় হয়ে উঠে। স্ত্রীর ওপর কখনই অযথা রাগ-গোস্সা করা উচিত নয়, কারণ রাগ প্রিয়তমা স্ত্রীর সুন্দর আবেগ অনুভূতিকে দারুণভাবে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে ঝরঝরে সতেজ, প্রাণবন্ত মায়া-মমতা,আবেগ একসময় তিক্ততায় রূপ নিতে পারে। যা কখনোই দাম্পত্য জীবনের জন্য মঙ্গল বহে আনে না।
সংসার জীবনে সাবলীল,মধুর ও আনন্দঘন বজায় রাখতে স্বামী-স্ত্রী দুজনার মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন।
অবশ্য এই ঐকমত্য সবসময় যে হবে এমন কোন কথা নেই। দুজনার দৃষ্টিভংগি ভিন্ন ভিন্ন কিংবা মতাদর্শের অমিল হতে পারে। তাই বলে নিজেদের মধ্যে অযাচিত ঝগড়া, ফ্যাসাদ, হানাহানি ডেকে আনা উচিত নয়। তবুও রাগে অনুরাগে মাঝে মধ্যে কিছুটা কথার কাটাকাটি হয়। সৃষ্টি হয় নিজেদের মধ্যে সাময়িক বিরোধ ও অশান্তি। এ সাময়িক অশান্তি বা বিরোধকে বাড়তে না দিয়ে সহসা মিটমাট করে নেয়াই শ্রেয়। নয়তো দীর্ঘমেয়াদে ঝুট ঝামেলার সাথে তৃতীয় পক্ষের ক‚ট-কৌশল যুক্ত হতে পারে। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করা উত্তম। এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে সাহায্য করতে পারে ছোট্ট একটা চিরকুট। এটা স্বামী স্ত্রী দুজনেই কাজে লাগাতে পারে। দুজনের সম্পর্ককে দৃঢ় মজবুত করতে চিরকুটের ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা অধিকতর কার্যকর। মেজাজ বিগড়ে কিংবা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে একজন আরেকজনকে দুটো কথা বলার পর, একটা সময় স্ত্রীর মনে হল-স্বামীই ঠিক ছিল, তখন স্ত্রী সরাসরি স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে ভাল হয়। অথবা ছোট্ট একটা চিরকুটে নিজের ভুল স্বীকার করে স্বামীর নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়া উচিত। এর ওল্টোটা হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বামীকেও চিরকুটের মাধ্যমে নিজের ভুল স্বীকার করে স্ত্রীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। ব্যস মিটে গেল। অবশ্য চিরকুটকে এমন এক জায়গায় রাখতে হবে, যাতে স্বামী-স্ত্রী দুজনের সহজে দৃষ্টিগোচর হয়। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার মাঝে অনেক আনন্দ থাকে। এতে কারও জাত চলে যায় না। কেউ ছোট হয়েও যায় না।
ছোট্ট একটা চিরকুট বৃহৎ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। নিমিষে পাল্টে দেয় জীবন দর্শণ। শুধু তাই নয়,নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের মূহুর্তগুলোকে অর্থবহ সার্থক ও অফুরন্ত প্রেম ভালোবাসা দ্বারা রঙ্গে রঙ্গিন ও স্বর্গীয় আবেশে ভরিয়ে তুলতে চিরকুটকে ব্যবহার করা যায়। নিজের ভালোবাসা আর ভালো লাগার কথা অনায়াসে চিরকুটে লিখে পরস্পরকে অবহিত করা যায়। যথাযথভাবে কাজটি করতে পারলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় ও শ্লাঘা অনুভুত হয়। এতে নিশ্চিতভাবে সম্পর্কে উত্তরোত্তর প্রীতি-মহব্বত বৃদ্ধি পায়। দৃঢ় ও মজবুত হয় স্বামী স্ত্রীর অটুট বন্ধন। প্রশ্ন জাগতে পারে, স্বামী-স্ত্রী একই ছাদের তলায় থেকেও চিরকুটের কোন প্রয়োজন আছে?
অবশ্যই প্রয়োজন আছে। একই ছাদের তলায় কাছাকাছি থাকলেও চিরকুট মুলত দুজনের ভুল বুঝাবুঝিতে সৃষ্ট মনের দুরত্ব ঘোচাতে সহায়তা করে। না বলা অব্যক্ত কথাগুলো সুন্দর ও সুচারুভাবে বলার জন্যই মুলত চিরকুট। চিরকুটের ক‚টনৈতিক দূতিয়ালিতে কথার বিকৃত হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। এখানে কোন তৃতীয় পক্ষ রঙ-চঙ লাগিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করারও কোন ধরণের সুযোগ বা সম্ভাবনা থাকে না। প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর উচিত চিরকুটের ক‚টনৈতিক দর্শন কাজে লাগিয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করে নেয়া। ফলে সংসার জীবন অধিকতর দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়ে সুখে-সম্মৃদ্ধে, অনাবিল হাসি আনন্দে ভরে ওঠবে। কোন বাঁধা-বিপত্তি, ক্লেদ-খেদ,সর্দি-গর্মির মত অস্বস্তি-ফস্বস্তিকর টানাপোড়েন কিংবা অনাকাংখিত কোন সর্বগ্রাসী মাতাল ঝড় দুজনের সম্পর্ককে বিন্দু পরিমাণ টলাতে পারবে না। বরঞ্চ সন্দেহাতীতভাবে যাপিত জীবনে প্রেম ভালোবাসার প্রবাহমান হিমেল ফল্গুধারা ও দীপ্তিময় আলোর রোশনাই অব্যাহতভাবে বইতে থাকবে।
মাতোয়ারা ফুলের বিচ্ছুরিত রেণুধারা দুজনের শয্যাকে কোমল কুসুমাস্তীর্ণ ও নিষ্কন্টক করে তুলবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন