মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রতঙ্গের রয়েছে নির্দিষ্ট করণীয় কাজ। কোন অঙ্গ বিকল বা অসুস্থ হয়ে গেলে সে অঙ্গের সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় বা বাধাগ্রস্ত হয়। যেমন- চোখে অসুস্থতা দেখা দিলে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায় বা লোপ পায়। কর্ণে অসুস্থতা দেখা দিলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায় বা হারিয়ে যায়। তেমনি আত্মা যখন রোগগ্রস্থ হয়, তখন তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন যেমন- ঈমান, তাক্বওয়া, আল্লাহর ইবাদত, তাঁর ভালবাসা ইত্যাদি নেক আমল ও গুণাবলী হ্রাস পেতে থাকে বা হারিয়ে যায়। আত্মার এ রোগসমূহের প্রতিকার করতে আত্মশুদ্ধি অর্জনই হচ্ছে ইসলাহে নফস। এটা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জীবনের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য্য বিষয়।
অন্তরের রোগের ভয়াবহতা ঃ আত্মা বা অন্তরের রোগ সবচেয়ে কঠিন রোগ। কারণ অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে রোগী নিজেও বুঝতে পারে, তার অসুস্থতা দেখা দিয়েছে- চিকিৎসা দরকার। আর চিকিৎসকও বিভিন্ন উপসর্গ দেখে রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিতে সক্ষম হন। কিন্তু আত্মার রোগ এমন জটিল যে, এর রোগী নিজেও বুঝতে পারে না যে, তিনি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আর বুঝতে পারলেও তার চিকিৎসা এত কষ্টসাধ্য যে, রিয়াজত-মুজাহাদা করে সেই রোগ দূর করার জন্য মানুষ তৎপর হতে চায় না। কারণ এ রোগের প্রধান চিকিৎসা হলো- মনের বিরুদ্ধে চলা। অথচ মানুষ মনের চাহিদানুযায়ী চলতে আগ্রহী থাকে বেশী। আর এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য পরীক্ষা বটে। তাই এ অন্তরের রোগ উপযুক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে দূর করে আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করা অত্যন্ত জরুরী।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, অন্তর শরীরের আর দশখানা অঙ্গের মত নিছক একটি অঙ্গই নয়, এটি হচ্ছে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রাজা এবং তাদের সকল কল্যাণ ও অকল্যাণের মূল উৎস। এ সম্পর্কে রাসূলে কারীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে এমন এক টুকরা গোশতপিন্ড রয়েছে যে, সেটা যদি ঠিক থাকে, তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে। আর যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায়, তখন সমস্ত শরীর নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রেখো, সেটা হচ্ছে ক্বালব বা অন্তর।’’ (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) তাই অন্তরের রোগসমূহের উপযুক্ত চিকিৎসা করে তার পরিশুদ্ধি অর্জন করা খুবই জরুরী বিষয়। তা-ই পরকালীন নাজাতের পথ। আল্লাত তা’আলা ইরশাদ করেন-“সেদিন (হাশরের দিন) অর্থ ও সন্তান-সন্ততি) কোন কাজে আসবেনা, শুধু পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে যে আসবে আল্লাহর কাছে (তার জন্যই রয়েছে নাজাত)।’’ (সূরাহ শু’আরা, আয়াত নং-৮৯)
অন্তরের প্রকৃতি ও প্রকার ঃ ১। সুস্থ অন্তর ঃ সুস্থ অন্তর (নফসে মুতমাইন্না) এমন অন্তর যা যাবতীয় কলুষতা থেকে মুক্ত। আল্লাহর মহব্বত ও ভালবাসায় সমৃদ্ধ হয়ে নেক কাজে সতর্ক ও হুঁশিয়ার। ২। মৃত অন্তর ঃ মৃত অন্তর (নফসে আম্মারা) হচ্ছে যে অন্তর যাবতীয় কলুষতায় ভরপুর। তা পাপ কাজে এমনভাবে লিপ্ত যে, পাপ কাজের প্রতি ঘৃণাও উঠে গেছে। আল্লাহকে সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাওয়ার কারণে যাবতীয় কল্যাণ থেকে তা বঞ্চিত। আর নফল ও শয়তানের একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হয়।
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন