প্রশ্ন : ঘুষের লেনদেন কি আদর্শ সমাজ গঠনের অন্তরায়?
উত্তর : ঘুষ বাংলা শব্দ। একে উৎকোচও বলা হয়। ‘যে কাজ করা ব্যক্তির দায়িত্ব, তা সম্পাদনের জন্য বিনিময় গ্রহণ করা অথবা যে কাজ করা তার জন্য ওয়াজিব, তা সম্পাদনের জন্যে বিনিময় গ্রহণ করাকে ঘুষ বা উৎকোচ বলে’। আর রায়েদ প্রণেতা বলেন, ‘কোন কার্য হাসিলের লক্ষ্যে যে উৎকোচ প্রদান করা হয় তাকে ঘুষ বলে’। ইমাম বাইউমী (রহ.) এর মতানুসারে, ‘সত্যকে অসত্য এবং অসত্যকে সত্য বানানোর জন্য মানুষ যা প্রদান করে তাকে ঘুষ বলে’। ঘুষ মানুষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দিয়ে থাকে। যা সামাজিকভাবে গুরুতর অপরাধ। ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে তা পাপকাজ বা অপরাধমূলক কাজ। যাকে ইসলাম ধর্ম কোনভাবে প্রশ্রয় প্রদান করে না। কেননা, ঘুষ গ্রহণ করা মানে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আতœস্যাৎ করা। যা করা হারাম। তা’য়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একজন অপরজনের ধনসম্পদ অবৈধভাবে গ্রাস করো না। মানুষের ধন সম্পদের কিছু অংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারককে ঘুষ দিও না’ -(সুরা আল বাক্বারা ঃ ১৮৮)।
ঘুষ দেয়া এবং নেয়া দুটিই অন্যায়। ইসলাম দুইজনকেই সতর্কবাণী প্রদান করেছে। আমাদের প্রিয় নবী, যিনি বিশ্ববাসীর আদর্শ হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুষ গ্রহণকারী, ঘুষদাতা এবং উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারীকে লা’নত করেছেন’। হাদীসের ভাষ্যমতে এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, ঘুষদেয়া এবং নেয়া অবশ্যই অন্যায়, মন্দ এবং ঘৃণিত কাজ। যা কোন আদর্শ সমাজে চলতে পারে না। যা কোন আদর্শ লোকদের স্বভাব হতে পারে না। অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষখোরের প্রতি আল্লাহর লা’নতের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘুষখোর এবং ঘুষদাতার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ’ -(তাহাবী)। যে কাজের উপর আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের লা’নত রয়েছে সে কাজ এবং যারা সে কাজ করে তারা কখনো ভাল মানুষ হতে পারে না। হতে পারে না আদর্শময়। বরং তারা তো জাহান্নামী হওয়ারই উপযোগী। হাদীস শরীফে তাদের জন্য জাহান্নামের কথা উচ্চারিত হয়েছে এভাবে, হাদীসের ভাষ্যমতে, ‘ঘুষদাতা এবং ঘুষখোর উভয়ই জাহান্নামী’ -(তাবারানী)। জাহান্নামী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাদের ঘৃণিত কার্যাবলীর কারণে।
ঘুষ বা উৎকোচের কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বাধাঁগ্রস্থ হয়। বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ ঘুষের মাধ্যমে চলে যায়। ঘুষদাতা এবং গ্রহীতা উভয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ঘুষ গ্রহণকারী বিনাশ্রমে অতিরিক্ত টাকা পেয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধে লিপ্ত হয়ে থাকে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ ঘুষ লেনদেনে জড়িয়ে পড়লে বাধাঁগ্রস্থ হয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যাদী সমূহ। আটকা পড়ে থাকে টাকার নিচে ফাইল সমূহ। টাকার বিনিময়ে ফাইল নড়াচড়া করে। বন্দুক ঠেকিয়ে অর্থ আদায় আর ফাইল আটকিয়ে টাকা গ্রহণে কোন পার্থক্য নেই। পদ্ধতির প্রভেদ ছাড়া।
আমাদের সমাজে ঘুষগ্রহীতা এবং ঘুষদাতাদের সংখ্যা নগণ্য বললে সত্য কথার পরিপন্থী হবে। শিক্ষিত সমাজে ঘুষ গ্রহণকারীর সংখ্যা অশিক্ষিত মানুষের চেয়ে কম। যে সমাজে ঘুষের লেনদেন সর্বদা দৃশ্যমান সে সমাজের লোকজন যতই নিয়ম-নীতি আর উন্নতির কথা বলুক তা শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সমাজকে এগিয়ে নিতে সর্বাগ্রে ঘুষের লেনদেনকে চিরতরে বন্ধ করতে হবে। কেননা, সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘুষের লেনদেন ছড়িয়ে পড়লে সে সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। যার আদর্শে আমরা সমাজকে আদর্শময় করতে চাই তিনি বলেন, ‘যে সমাজে ঘুষ লেনদেন ছড়িয়ে পড়ে সে সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি না হয়ে থাকে না’। এক্ষেত্রে শিক্ষিত সমাজকে আরো দায়িত্ববান হতে হবে। আদর্শ সমাজ বিনিমার্ণে ঘুষের লেনদেনকে অবশ্যই না বলতে হবে। আসুন ঘুষ কে না বলি।
উত্তর দিচ্ছেন : মাহফুজ আল মাদানী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন