রেজাউল করিম রাজু : আর বছর খানেক সময়ের মধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। ২০১৩ সালের জুন মাসে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পাঁচ বছর মেয়াদি এ নির্বাচনের সময়ও সঙ্গত কারনে শেষ হবে আগামী বছরের জুন মাসে। এর মানেই বিধি মোতাবেক নির্বাচন হবার কথা। আর তাহলে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই। ফলে শুরু হয়ে গেছে এনিয়ে বড় দুদলে ভেতরে ভেতরে তোড়জোড়। এনিয়ে ইফতার রাজনীতিও জমজমাট ছিল। বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবারো বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। হাইকমান্ডও তার উপর খুশি। যদিও দলের আভ্যন্তরীন কোন্দল ভোগাচ্ছে তাকে। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও সরকারি রোষানলে পড়ে তাকে প্রায় আড়াই বছর থাকতে হয়েছে নগরভবনের বাইরে। নগরবাসীর ছিনিয়ে নেয়া রায় পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য চালিয়েছেন আইনী লড়াই। সরকারি মামলায় পড়ে জেলেও পার করেছেন কিছু সময়। তবু থেমে থাকেননি। দীর্ঘ আইনী লড়াই আর প্রতিকুল অবস্থা মোকাবেলা করে মেয়র ভবনে ফিরেছেন। যেটুকু সময় পাবেন তাতে কাজ করে নগরবাসীর চাওয়া পাওয়ার বিষয়টা পুষিয়ে দেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবার পর নগর ভবনে বসতে না পারার কারণে তার প্রতি নগরবাসীর সহানুভুতিও রয়েছে। এরপর বিতর্কিত হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়টা সুরাহা করতে পারলে তা আরো বেড়ে যাবে। তাছাড়া বিগত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে পঞ্চাশ হাজারে বেশী ভোটের ব্যবধানে হারানোর বিষয়টা তার জন্য প্লাস পয়েন্ট। ফলে ধানের শীষ বুলবুলের থাকার সম্ভাবনা বেশী। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে কার হাতে নৌকা তুলে দেয়া হবে তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বিগত সময় মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান মহানগর সভাপতি জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পুত্র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। মঈন-ফকরুদ্দিন সামরিক জান্তার আমলে মেয়র পদে বুলবুলকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন লিটন। দায়িত্ব নেবার পর নগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন করে চমক সৃষ্টি করেন। তার অনেক কাজ প্রসংশিত হয়। নগরীকে বদলে দেবার চিন্তা ভাবনাগুলো ছিল সুন্দর। রাত্রিকালীন আর্বজনা পরিস্কার, পদ্মার তীরকে দৃষ্টিনন্দন করার মত অনেক কাজ তার সময়ে হয়েছে। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে তা কাজে লাগাতে পারেননি। পরাজয়ের কারণ হিসাবে তার দল রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অদুরদর্শীতাকে দায়ী করেছে। যদিও লিটন পরাজিত হওয়ার পেছনে হেফজত হাওয়াকে দায়ী করেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পর দু:খ করে বলেছিলেন নগরীর উন্নয়নে এত কাজ করলাম তার পরও বিজয়ী হতে পারলাম না কেন ? এর জবাব ছিল লিটন হারেনি হেরেছে আওয়ামী লীগ। ইনকিলাবের নির্বাচনী জরিপে যা তুলে ধরা হয়েছিল তা সম্পুর্নরুপে মিলে যায়। সে সময় নির্বাচন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল নির্বাচনে লিটনের ঘরের শত্রæ বিভীষন হয়ে দাঁড়াবে তার দলের ভেতরের লোকজন। যা পরবর্তীতে ফলাফলে প্রমানিত হয়। দলের একটা অংশ বরাবরই লিটন বিরোধীতায় ছিল। তার পরাজয়ের পেছনে এদের ভুমিকাও কম দায়ী নয়। আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ফের খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র প্রার্থী হবেন এমন প্রচারনা রয়েছে। সেলক্ষ্য নিয়ে কৌশলী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে আরেক তরুন নেতা মহানগর সাধারন সম্পাদক ডাবলু সরকারও নড়ে চড়ে উঠেছেন। দলের কাউন্সিলে নির্বাচনে সকল সমঝোতা প্রস্তাবকে উপক্ষো করে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবার মধ্যদিয়ে দলের মধ্যে তার অবস্থান জানান দিয়েছেন। এরপর থেকে তার সমর্থকরা প্রচারনা চালিয়ে আসছে আগামী মেয়র নির্বাচনে ডাবলু সরকার হাইকমান্ডের কাছে প্রার্থীতা চাইবে। মেয়র পদটি ঘিরে ইতোমধ্যে দুটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। হাইকমান্ড সবুজ সংকেত কার ভাগ্যে জুটবে এনিয়ে দলের নেতাকর্মীরা বেশ দোলাচলে রয়েছেন। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বক্তব্য হলো সামনে দুটি নির্বাচন রয়েছে। একটি জাতীয় সংসদ অন্যটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আগে হবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ব্যক্তিগত ভাবে কোন প্রার্থীতাই আমি চাইবনা। হাইকমান্ডের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকব। এদিকে মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তার কথা হলো নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছে লিটন ভাইয়ের সিদ্ধান্তের দিকে। তিনি যদি জাতীয় নির্বাচন করেন তাহলে মেয়র পদের প্রত্যাশী তিনি। আর লিটন মেয়র নির্বাচন করলে ডাবলু জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর আসন নিয়ে একটা খটকা রয়ে গেছে। কেননা এখানে এমপি আছেন জোটের অন্যতম নেতা ওয়াকার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। জোটগত নির্বাচন হলে এবারো তিনি মনোনয়ন চাইবেন। জোট যদিনা হয় তারাও এ আসনটিতে তিনি প্রার্থী হবেন তা একরকম নিশ্চিত। সদর আসনটি আওয়ামী লীগের নিজ ঘরে রাখার জন্য এনিয়ে কিছু বক্তব্য বিবৃতিও এসেছে। যার অর্থ হলো মেয়র ও এমপি নির্বাচনে তাদের রাস্তা ক্লিয়ার করা। এসব জল্পনা কল্পনার মধ্যেই লিটন ও ডাবলু দুজনেই বিভিন্ন কর্মসুচিতে অংশ নিচ্ছেন। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করছেন। রমজান শুরু হওয়ার পর যোগ দিয়েছেন ইফতার মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ঈদের পর থেকেই লিটন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঈদ পুন:মিলনী অনুষ্ঠান করে চলেছেন। লিটন-ডাবলু দুজনে একে অপরের সাথে আছেন আঠার মত। প্রায় সব অনুষ্ঠানে তাদের একসাথে উপস্থিতি একথা বলে দেয়। যদি জোটের ভোটের রাজনীতিতে সদর আসনটি অন্যের ঘরেই থেকে যায় সেক্ষেত্রে লিটন বা ডাবলু একজনের ভাগ্যে ঝুলে যাবে। মেয়র ও সদর আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের এমন তৎপরতায় বসে নেই জোটের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি জনসংযোগ আরো বাড়িয়েছেন। বিভিন্নভাবে তুলে ধরছেন তার উন্নয়নের কথা।
এদিকে বর্তমান সিটি মেয়র মো: মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের হাতে সময় খুব একটা নেই। মেয়র পদ ফিরে পেতে আর মামলা মোকাবেলা করতে আদালত প্রাঙ্গনে সময় কেটেছে বেশী। ফলে যে কদিন চেয়ারে আছেন সে কদিন যতটুকু সম্ভব তৎপরতা চালিয়ে নগরবাসীর কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করছেন। তিনিও নগরভবনের ভেতরে বাইরে বিভিন্ন কর্মসুচিতে অংশ নিচ্ছেন। সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনুও বিভিন্ন কর্মসুচিতে সরব অংশ নিচ্ছেন। এমপি না মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন এটি হাইকমান্ডের ব্যাপার। দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে পথেই হাটবো। জাতীয় পার্টির এনিয়ে তেমন কোন তৎপরতা নেই। তবে রাজনৈতিক সিডরে ক্ষত বিক্ষত জামায়াতে ইসলামী তাদের কৌশলী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়র নির্বাচনের মধ্যদিয়ে তারা প্রকাশ্যে সক্রিয় হতে চায়। প্রার্থী দিয়ে জোটের ভোটের রাজনীতিতে দর কষাকষি করার সুযোগ নিতে চায়। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কিংবা স্থায়ী শত্রæ মিত্র নেই এমন থিওরী নিয়ে উলট পালট কিছু হলে অবাক হবার কিছুই থাকবেনা। কেননা এখানকার ভোটের রাজনীতিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। যা বহুকাল ধরে চলে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন