স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিরোধী দলকে ভয় পাইয়ে দিতে সরকার ফরহাদ মজহারের ‘অপহরণের নাটক’ মঞ্চস্থ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকালে দলের অঙ্গসংগঠনের এক কর্মী সভায় দলের সিনিয়ার যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এই অভিযোগ করেন। নয়াপল্টনে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে মহানগর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে এই কর্মী সভা করা হয়। সভায় তিনি বলেন, ফরহাদ মজহার অপহরণ নাটকটি আর কিছুই নয়, যারা প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, শানিত লেখনি লেখেন তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়ার ম্যাসেজ, বিরোধী দলকে ভয় পাইয়ে দেয়ার ম্যাসেজ- খবরদার তোমরা যদি আর কেউ কথা বলো তোমাদের পরিণতি ফরহাদ মজহারের মতো হবে। অতত্রব আর কেউ লেখো না, বলো না, তাদের কন্ঠস্বর থেকে আর কোনো ধ্বনি যেন উচ্চারিত না হয়। এই সম্পূর্ণ নাটকের পরিচালক প্রযোজক সরকার, শেখ হাসিনা। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আগামী নির্বাচনের আগে এরকম ‘নাটক’ করে কোনো লাভ হবে না বলেও মন্তব্য করে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে এই নাটক করে কোনো লাভ হবে না। বিএনপি নির্বাচনে যাবে, নির্বাচন করবেই। যতই আপনারা যাই করেন না কেন। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে পারে না, হতে দেয়া হবে না। ক্ষমতাসীনদের বলব, সেই স্বপ্ন ভুলে যান, সেই সুখ স্বপ্নের মধ্যে ভাসলে হবে না। সহায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার হবে।
ফরহাদ মজহার উদ্ধার হওয়ায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে ‘শুকরিয়া’ আদায় করে রিজভী বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে হাজার শোকরিয়া জানায়, এই জন্য যে, তারা ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করার পর হজম করতে পারেনি। ফরহাদ মজহারের একটি কবিতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে কবি ফরহাদ মজহার তার নিজের একটি কবিতায় লিখেছেন, “আমি মৃত্যুকে ভয় করি না, কিন্ত গুম হয়ে যেতেহ ভয় করি। কী অদ্ভুত, কী কাকতালীয় ঘটনা। কবি যে কবিতা লিখেছেন তার জীবনেও গুম হয়ে যাওয়া ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কালকে (সোমবার) সারাদিন বিষন্ন, উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ছিল সারা জাতি। যারা মুক্ত চিন্তা করেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যাদের প্রতিবাদ দ্রোহ-হৃদয়ের মধ্যে কাজ করে তারা প্রত্যেকেই বিপন্নবোধ করেছেন। কবি ফরহাদ মজহারকে কী একজন ছিঁচকে সন্ত্রাসী অপহরণ করতে পারে। যদি রাষ্ট্রের আনুকল্য না থাকে, রাষ্ট্রের
আনুকল্যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
এই অপহরণের সম্ভাব্য কারণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার ১৬ ঘন্টার আগে ভারতের মুসলিম নিধনে নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যে প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছিলো, সেখানে আরেকজন সাহসী মানুষ আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহেব প্রতিবাদ করে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেখানে ফরহাদ মজহার বসেছিলেন। সরকার মনে করেছে যে মাহমুদুর রহমানকে বুদ্ধি-পরামর্শ ফরহাদ মজহার দিচ্ছেন। অথবা মাহমুদুর রহমান চার বছর জেল খেটে এসেছেন, এখন গুম করলে কেমন হয়। এজন্য আগে ফরহাদ মজহারকে করে দেখি কী হতে পারে- এটাই হচ্ছে তাদের (সরকার) উদ্দেশ্য। ‘নিখোঁজ’ থেকে ফরহাদ মজহারকে ‘উদ্ধার’ পর খুলনার ডিআইজি দিদার আহম্মেদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, পুলিশ বলেছে সাজানো নাটক। হ্যাঁ সাজানো নাটক তো আপনারাই করেন। একের পর এক ঘটনা তো দেখেছি আমরা। ইলিয়াস আলীকে কিভাবে সাজানো নাটকের মধ্য দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। আশ-পাশের লোক দেখলো মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, তার গাড়ি পড়ে আছে, ড্রাইভারকে তুলে নিয়ে গেলো। তারা কারা? তারা কী ছিঁচকে সন্ত্রাসী, তারা কী পাড়া-মহল্লার মাস্তান, তারা কী শীর্ষ সন্ত্রাসী? এভাবে মাইক্রোবাসে করে একেবারে সশস্ত্র অবস্থায় একের পর এক তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সাইফুল ইসলাম হীরু, হুমায়ুন কবীর পারভেজ এরকম সারাদেশ থেকে বাড়িতে বাড়িতে, গৃহে গৃহে মায়ের কান্না ঝরিয়ে, স্ত্রী-সন্তানদের কান্না ঝরিয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে একের পর এক গুম হচ্ছে, অপহরণ হচ্ছে। তারপরও আপনাদের কথা বিশ্বাস করতে হবে যে সাজানো নাটক। সাজানো নাটক আপনাদের। নারায়নগঞ্জের ৭ খুনে কিভাবে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারকে হত্যা করা হয়েছে সেই কথাও বলেন তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, কবি ফরহাদ মজহার প্রাবন্ধিক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, গীতিকার। উনি কেনো সাজানো নাটক করবে? এই দুঃসময়ে, এই দুর্বিপাক-দুর্যোগের মধ্যে। এটা পাগলেও বুঝে যে রাষ্ট্র এই অপহরণের সাথে জড়িত? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিরোধী আন্দোলনের সময়ে ‘গুম’ হওয়া দলের ওই সময়কার যুগ্ম মহাসচিব বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ‘নাটক’ করে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার পাওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদের মতো ওইরকম একটি ঘটনা হতে চলছিলো। যখন মানিকগঞ্জ, মাগুরা, যশোর, খুলনা তারপর সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আবার সালাহউদ্দিনের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বা এই ধরণের কিছু একটা। গত সোমবার ভোরে রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর ফরহাদ মজহার অপহরণ করা হয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান। দিনভর নানা নাটকীয়তার পর যশোরে ‘উদ্ধার’ হওয়া ফরহাদ মজহার গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ওষুধ কিনতে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি অপহরণের শিকার হয়েছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবক দল মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন