মোঃ সাইফুল্লাহ : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম বা রোজার বিধান ফরজ করা হয়েছে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও তেমনিভাবে রোজার বিধান ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা বাঁচতে পার। এখানে আল্লাহ পাক বলেছেন তোমাদের পূর্ববর্তী যত জাতি অতীত হয়েছে সবার উপর রোজা লেখা হয়েছিল। কোন জাতি এ সিস্টেমের বাইরে ছিলনা। বর্তমানেও কোন জাতি এ সিস্টেমের বাইরে নাই। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল জাতিই তাদের সিস্টেমে রোজা পালন করে এবং করতে হয়। আস্তিক-নাস্তিক সকলকেই রোজা পালন করতে হয় এবং বেঁচে থাকার জন্যই পালন করতে হয়। কেউ আল্লাহ পাকের বিধান অনুযায়ী পালন করে। আবার কাউকে আল্লাহ পাক বাধ্য করে রোজা পালন করান। শুধু মানুষ নয়, সকল প্রাণীকেই রোজা পালন করতে হয়। বেঁচে থাকার তাগিদেই তা করতে হয়। নতুবা প্রাণীকুল মরে যাবে। যেমন দরিয়ার মাছ একটি নির্দিষ্ট সময় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। তিমি মাছের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যারা সমুদ্রগামী তারা প্রায়শই লক্ষ্য করে থাকেন যে, তিমি মাছ সাগরে ভাসে। কোন কিছুই খায়না। এক গবেষণায়য় দেখা গেছে, তিমি মাছ এভাবে বছরে কয়েক মাস না খেয়ে সাগর ভাসে।
ডাঙ্গার সকল প্রাণী এমনকি ক্ষুদ্র পিপীলিকাও রোজা পালন করে। তারা তাদের নিজস্ব নিয়মে রবের দেখানো নিয়ম অনুসারে রোজা পালন করে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আহার পরিত্যাগ করে নিজ নিজ বাসায় কয়েক মাস অবস্থান করে। তাদের শরীরের সকল অবাঞ্চিত জিনিস পরিশোধন হওয়ার পর তারা আবার নতুন উদ্যমে কাজ করা শুরু করে। এভাবে প্রত্যেকটি প্রাণী একটি নির্দিষ্ট সময় উপবাস পালন করে। সাপ, ব্যাঙ, প্রজাপতি ইত্যাদি অনেক কিছুর নাম উল্লেখ করা যায়। এমনকি পাট ক্ষেতের বিছাগুলোও একটি নির্দিষ্ট সময় নিজেকে আবরণের ভিতর বন্দী রেখে উপবাসে যায়। উপবাস শেষে আবার তারা নতুন যৌবন পায় এবং কাজ করা শুরু করে। এভাবে প্রত্যেক প্রাণী তাদের রবের দেখানো পথে সিয়াম পালন করে বা করতে হয়।
মানুষের উপর আল্লাহ পাক লিখিতভাবে সিয়াম ফরজ করেছেন। সিয়ামের পারলৌকিক বহু কল্যাণ থাকলেও ইহলৌকিক কল্যাণও অনেক। সিয়াম মানুষকে নব যৌবন দান করে। মানুষ যা খায় তাতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন, ফ্যাট, অ্যামাইনো এসিড ইত্যাদি শরীরে জমা হয়। শরীর তার আপদকালীন সময়ের জন্য এগুলো জমা করে রাখে। শরীর যখন অনেকক্ষণ যাবত খাদ্য পায়না, তখন তা কাজে লাগায়। কিন্তু ঐ ভিটামিন, প্রোটিন, ফ্যাট, অ্যামাইনো এসিড ইত্যাদির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। নির্দিষ্ট মেয়াদকালের মধ্যে শরীরকে সেগুলো ব্যবহার করতে হয়, নতুবা সেগুলো পয়জন বা বিষক্রিয়ায় পরিণত হয়। ঐ সমস্ত উপাদানের মেয়াদ থাকে এক বছর। এক বছরের মধ্যে ঐ সমস্ত উপাদান ব্যবহৃত না হলে বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন, ক্যানসার, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ, কিডনীর অসুখ, লিভারের অসুখ, মূত্রথলির অসুখ ইত্যাদি অনেক রোগ হতে পারে। তাহলে ঐ সমস্ত জটিল রোগ থেকে বাঁচার উপায় কী?
ঐ সমস্ত জটিল রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো সিয়াম পালন করা। কারণ সিয়াম পালন করলে ঐ সমস্ত উপাদানগুলো জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। প্রশ্ন হতে পারে, কীভাবে ? মানুষ যে সেহরি খায়, তা শরীরে ৬ (ছয়) ঘন্টার বেশী থাকেনা। অথচ রোজার সময় মানুষ না খেয়ে থাকে অন্তত ১৪/১৫ ঘন্টা। তাহলে শরীর ৬ ঘন্টার পর খাবার পায় কোথায়? ঐযে বলছিলাম, শরীর তার আপদকালীন সময়ের জন্য খাবার অর্থাৎ ভিটামিন, ফ্যাট, প্রোটিন, অ্যামাইনো এসিড ইত্যাদি জমা করে রাখে। সেগুলো দিয়ে শরীর বেঁচে থাকে। বিগত ১১ মাস ধরে শরীর যা জমা করেছিল, রমজান মাসে শরীর তা সবগুলো ব্যবহার করে। এভাবে এক বছরের মধ্যে তার ব্যবহার হয়ে যায়। ফলে শরীর জবভরহবফ বা জবভৎবংযসবহঃ হয়। এভাবে সিয়াম পালনের মাধ্যমে শরীরকে প্রতি বছর জবভরহবফ বা জবভৎবংযসবহঃ করা যায়। শরীরে সজীবতা বা সতেজতা ফিরে আসে। শরীর নতুন যৌবন ফিরে পায়। সুতরাং শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য রোজা হলো এক খোদায়ী বিধান। এ বিধান আমরা নিজেদের কল্যাণের জন্যই পালন করব।
যদি কেউ এ বিধান পালন না করেন, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে বাধ্য করান সে বিধান পালন করতে। যেমন আল্লাহ পাক খাবারে অরুচি দেন, লিভার বা কিডনি যথাযতভাবে কাজ করেনা, হার্টের অসুখ হয় বা রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে তাকে হাসপাতালের বেডে না খেয়ে থাকতে হয় বা ডাক্তার খেতে নিষেধ করে। এভাবে করে আল্লাহ পাক তাদেরকে দিয়ে রোজা রাখান এবং জরিমানাসহ রোজা রাখান। সেজন্যে ইবনে সীনা এ সমস্ত জটিল রোগীকে তিন সপ্তাহ রোজা রাখতে পরামর্শ দিতেন। বিশেষকরে আমরা এ যুগে যা খাই, তাতে একটি মানুষের অবশ্যই রোজা পালন করতে হবে। রোজা পালন না করলে শরীরের পয়জন বা বিষক্রিয়াগুলো মানুষকে নিঃশেষ করে দেয়। এ যুগে আমরা যা নিত্যদিন খাই তাহলো -কার্বাইড, ফরমালিন, সিনথেটিক, পোড়া তেল বা মবিল দিয়ে মচমচে ভাজা ইত্যাদি। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন