মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ : বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষার জন্য দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মোবারক এ প্রতিষ্ঠানটি অদ্যাবধি কুরআন শিক্ষার খেদমত গুরুত্বের সাথে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। এই সফল আন্দোলনের মহানায়ক হচ্ছেন শামছুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রাহ.)। আজ তাঁর খেদমতের প্রচার ও প্রসার সারা বিশ্বেজুড়ে। হাজার হাজার কেন্দ্রে লাখ লাখ শিক্ষার্থী পবিত্র কুরআনের শিক্ষার্জন করছে। দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট থেকে সনদ প্রাপ্ত কারী ছাহেবদের সংখ্যা আজ অগনিত। আর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদচারনা শুরু হয়েছিল, স্বপ্নেযোগে হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ইশারার মাধ্যমে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রশিক্ষন কেন্দ্র বাড়ছে। দারুল কিরাতের ইতিহাসের দিকে না গিয়ে এর আয়োজন ও কর্মসূচি নিয়ে আলোকপাত করাই আমার মূল লক্ষ্য।
দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট প্রতি বছর কুরআন নাযিলের মাস মাহে রামাদানে অভিন্ন রুটিনে এর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিরতীহীন ভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। এ প্রশিক্ষণের প্রতিটি কর্মসূচির পরতে পরতে রয়েছে নেক আমলে পরিপূর্ণ। এর হিসেব মিলানো বড় কঠিন। এ যেন নেক আমলের এক মহাসমুদ্র।
কর্মসূচির প্রধান কাজ কুরআন শিক্ষা: কুরআন মাজীদে কুরআন শিক্ষার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসুলুল্লাহ (সা:) ও সাহাবায়ে কিরাম কুরআন প্রচার-প্রসারে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নিয়োজিত রেখেছিলেন। যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কীভাবে তা প্রচার করবে? সুতরাং কুরআন প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষার বিকল্প নেই। কুরআনে বলা হয়েছে: ‘হে রাসুল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও।’ [সূরা মায়িদাহ : ৬৭]। কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। হযরত উসমান (রা:) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা:) বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় ’’ [বুখারী: ৫০২৭]।
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। হযরত আবু উমামাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসুল (সা:) বলেছেন : অর্থ:‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে’ [মুসলিম শরীফ: ১৯১০]। ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’’ [সুনান আত-তিরমিযি:২৯১০]
এক নজরে কুরআনের ও তিলাওয়াতের ফজিলত সমূহ: ১. দিলের জং ( গুনাহের কালিমা) মুছে যায়। ( শুআবুল ঈমান:৩ ,৩৯, হা:নং ১৮৫৯)। ২. আল্লাহ তাআলার মহাব্বত বৃদ্ধি পায় । (সূরা আনফাল, ২/শুআবুল ইমান ৩/ ৩৯৪, হা: নং ১৮৬৩)। ৩. প্রত্যেক হরফে কমপক্ষে ১০টি করে নেকী পাওয়া যায়, না বুঝে পড়লেও । (তিরমিযী, হা:নং ৩১৩৫,মুস্তাদরাক, হা:নং ২০৪০)। ৪. কুরআন তেলাওয়াত কারীগন আল্লাহর ঘনিষ্ট লোক। (মুসনাদে আহমদ হা:নং ১২২৯২) ৫. কুরআন তেলাওয়াত কারীগণ দ্বারা ফেরেশতাদের শ্রেণীভূক্ত হওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম হা:নং ৭৯৮) । ৬. কষ্ট সাধ্য করে কুরআন পাঠকারীর জন্য দু’টি পুরস্কারের প্রতিশ্রæতি রয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: নং: ৭৯৮)। ৭. জান্নাতের উচ্চ স্তর পাওয়া যায়। (মুসনাদে আহমদ হা: ৬৭৯৯) ৮. জান্নাতে সম্মানের টুপি পারানো হবে। ( আল মুসতাদরাক লিল হাকাম:২০৮১)। ৯. তেলাওয়াত কারীর পিতা-মাতা নূরের টুপি লাভ করবে। (সুনানে আবু দাউদ হা: ১৪৫৩)। ১০. কুরআন তেলাওয়াত কারীর আশপাশ বরকতময় ও নূরময় হয়ে ওঠবে। (সুনানে তিরমীযী হা: ৩০৯৭)। ১১.কুরআন জাতির মর্যাদাকে উন্নত করে। (সহীহ মুসলিম হা: ৮১৭)। ১২. কুরআন শিক্ষা গ্রহণকারী ও শিক্ষা প্রদানকারী সর্বোত্তম ব্যক্তি। (সহীহ বুখারী হা: ৫০২৭)। ১৩. কুরআন নিয়ে মশগুল থাকার কারনে যিকির ও দোয়া করার জন্য অবসর না পাওয়া বক্তিকে দোয়া কারীদের থেকে ও বেশী দেওয়া হয়। ( সুনানে তিরমিযী হা: ৩১৫৩)।
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন