বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্র সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। যৌথ প্রযোজনার নামের যৌথ প্রতারণা, হিন্দি-তামিল ছবির নকলে বাংলা ছবি নির্মাণ, দেশীয় সিনেমা হলে ইন্ডিয়ান ছবির দৌরাত্ম, সবমিলিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে সিনেমা সংশ্লিষ্টা। সিনেমা মুক্তি নিয়ে চর দখলের স্টাইলে চলছে সিনেমা হল দখল। অল্প কিছু হল এখনও টিকে আছে, সেগুলো দখল করে চলছে যৌথ প্রতারণার অবৈধ ছবি। আমির খানের হিন্দি ছবি সরফরাস ও বাজী আর শাহরুখ খানের বাদশাহ ছবিগুলোর ককটেল সংস্করণ ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত নবাব সিনেমাটি। পোস্টারের ছবিটিও তেলেগু সিনেমার কপি। বস-২ পুরোটাই বসগিরি করেই চালানো হয়েছে। বাংলাদেশে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওপারের মাড়োয়ারিদের সাথে সমঝোতা করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বানিয়েছে পলাশীর প্রান্তর। তাদের কাস্টিং, টেকনিক্যাল সাপোর্ট, অর্থ বিনিয়োগ এবং প্রভাব প্রতিপত্তির লাগামহীন আগ্রাসন চলছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। যৌথ প্রযোজনার নীতিমালাকে পদদলিত করে এদেশে শুরু হয়েছে মাড়োয়ারি (পুরনো সুদ ব্যবসায়ী মাউরা) ব্যবসা। সেই সঙ্গে হুন্ডির চালানে চলছে টাকা পাচার। ঢাকাই ছবিতে প্রভাব বেড়েছে ক্যালকেশিয়ান উচ্চারণের, দেখার লোক হঠাৎ অন্ধ, শোনার লোক বধির। জায়েজ করার চেষ্টায় দু-একজন দেশি সংগীতশিল্পী গেটিস হিসেবে গাইছে যৌথ প্রতারণার ছবিতে। বাংলাদেশের হাজারও শিল্পী গীতিকার সংগীত পরিচালকদের যোগ্যতা নেই যৌথ প্রতারণার ছবিতে কাজ করার, অবশ্য এ পরিস্থিতি তারা নিজেরাই সৃষ্টি করেছে চামচামির মাধ্যমে। মাড়োয়ারি অর্থায়নে এখনকার কিছু গুণীরা বিক্রি হয়ে গেছেন আরও আগেই। নিজের স্বার্থের জন্য দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে সিদ্ধহস্ত এ জাতির পুরনো প্রেতত্মার উত্তরসূরিরা। ওই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পদলেহনকারীরাই ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত করে এ জাতিকে পড়িয়েছিল গোলামির জিঞ্জির। আমার এসব কথা ভালো লাগবে না জানি। তারপরও মীরমদন, মোহনলাল আর ক্ষুদিরামের মত স্বাধীনচেতাদের চরিত্র কখনো বদলায় না, আমিতো সামান্য আসিফ। তবে অকাল প্রয়াত প্রিয় নায়ক মান্না ভাইকে মিস করছি কমরেড হিসেবে। মাড়োয়ারিরা ব্রিটিশদের মত খেলছে ডিভাইড অ্যান্ড রুল গেম, সঙ্গে আছে দেশীয় দালাল প্রডাকশন হাউসটি। এ বিভক্তির খেলায় জয়ী হবে মাড়োয়ারিরাই। বাংলা ছবির অস্তিত্বের জন্যই এই ব্যাপারটি আমাদের চলচ্চিত্র পরিবারকে বুঝতে হবে। আসুন নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি না করে দেশীয় ছবিতে মেধা খাটাই। নীতিমালা অনুযায়ী চলুক সিনেমা শিল্প। মাড়োয়ারি আর লোকাল এজেন্টদের রাজনীতির ছোবল থেকে বাঁচাই আমাদের চলচ্চিত্র।
লেখক: সঙ্গীত শিল্পী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন