বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

পথ নির্দেশ -ইসলাম কায়েমের নামে বোমাবাজি, ইসলাম কি বলে?

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আতিকুর রহমান নগরী
সম্প্রতি একটি গোষ্ঠি ইসলাম কায়েমের দোহাই দিয়ে, শান্তির প্রতিষ্ঠার ফুলঝুড়ি ছিটিয়ে, শিখানো বুলি শুনিয়ে বোমাবাজি আর মানুষ হত্যার মিশন অব্যাহত রেখেছে। সেই গোষ্ঠি ইসলামের নিঁখুত ইতিহাসে কলঙ্ক লেপনে আদাজল খেয়ে কোমর বেঁধে ময়দান চষে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশে ব্লগার হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল্-কায়েদা। সম্প্রতি প্যারিসে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ঘটিয়েছে বলেই দায় কাঁধে নিয়েছে। শুধু আল্-কায়েদা বা আইএস-ই নয়, আরো যত নামে-বেনামে রয়েছে এদের দল-উপদল। তার হিসাব রাখা দায়। বেশক তারা জানেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে নবীর আগমন ঘটেছিল, তিনি নিজে ইসলামের দাওয়াতি অভিযানে কাউকে ইসলাম গ্রহণের জন্য জোর-জবরদস্তি করেননি। যার কাছে দাওয়াত নিয়ে গেছেন সে ছোট হোক বা বড়, তার প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেই দিয়েছেন তিনি দাওয়াত। রাষ্ট্রনায়ক বা দলপতিদের কাছে তিনি বিশেষ দূত পাঠিয়ে চিঠির মাধ্যমে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আর সেই নবী মুহাম্মদ (সা.)’র উম্মত আর ইসলামের সঠিক অনুসারী দাবি করে বোমা মেরে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে ইসলাম কায়েমের অপচেষ্টা করার মানে কি? যে ধর্মের জয়গান শুনে, যে ধর্মের অনুসারীদের চরিত্রে অভিভূত হয়ে অমুসলিমরা মুসলমান হওয়ার প্রয়াস পেয়েছিল। সেই ধর্মকে বিশ্ববাসীর কাছে কলঙ্কিত করা কোনো মুসলমান বা ইসলামী সংগঠনের কাজ হতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যে জাতি একসময় পৃথিবীর বুকে স্পেশাল এক পাওয়ার নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতো। যে জাতির সাহসি হুংকারে বাতিলরা ভয়ে কাঁপতো। যে জাতির নাম শুনলে আবু জেহেল, উতবা, শাইবারের মতো শীর্ষ কাফের নেতারা লেজ গুটিয়ে পালাতো। সে জাতি আজ পরস্পর দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে একদল ইসলাম কায়েমের নামে বোমাবাজি আর মানুষ হত্য করে বিশ্বব্যাপী শান্তির ধর্ম ইসলামকে কলঙ্কিত করার জন্য অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তারা জানে যে, ইসলামের নামে অশান্তি-অরাজকতা সৃষ্টি করা বৈধ নয়, তবুও কোনো এক পরাশক্তির খবরদারিতে তারা এ কাজে নেমেছে তা একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। তবে তাদের এই হীন চেষ্টা কখনো বাস্তবে রূপ নেবে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সব ধরনের অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, মারামারি, হানাহানি, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ করে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা প্রকাশের জন্য এবং নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য ইসলামের আগমন ঘটেছে। জাহেলি যুগে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনাখুনি, হানাহানি এবং রক্তের বদলে রক্ত নিতে গিয়ে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের জীবনহানি ঘটত এবং বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধবিগ্রহ চলত। ইসলামের মহান প্রবর্তক বিশ্বশান্তির মূর্তপ্রতীক হযরত মুহাম্মদ (সা.) এসে এ সবকিছু সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে ঘোষণা করলেন : হে মানবম-লী! আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহরটি যেমন সম্মানিত, তেমনি তোমাদের রক্ত, তোমাদের ইজ্জত, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত। হাল যামানায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ আজ নির্যাতিত-নিপীড়িত। আত্মঘাতি, বিস্ফোরণ আর বোমা হামলা আর নামে-বেনামের জঙ্গী সংগঠনের আতঙ্কে নির্ঘুম রজনী পার হচ্ছে। আতঙ্কে যুক্ত হয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কোরআনে কারিমে ‘সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা’ করার নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনুল কারিমে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধ সম্পর্কে ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করল সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। (সূরা মায়েদা : ৩২) অন্যায়ভাবে হত্যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লা’নত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা নিসা : ৯৩) ইসলাম ধর্মে হত্যার প্রতি প্ররোচনা দানকারী হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে। এ বিষয়ে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে লেগে থেক না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। (সহিহ বোখারি) এমনকি হত্যার প্রাথমিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়েও কাউকে ভয় দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়ত শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সহিহ বোখারি) মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টজীবকে পুড়িয়ে মারার অধিকার কাউকে দেননি। আগুনে পুড়িয়ে মারার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআলারই। আগুনে পুড়িয়ে মারার ফলে একসাথে কয়েকটি অপরাধ সংগঠিত হয়, এর কোনো কোনোটি তো শিরকের পর্যায়ভুক্ত। কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা জঘন্যতম অপরাধ। যারা এ ধরনের কাজ করবে, আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে তারা আল্লাহর রহমত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবে এবং রাসূল (সা.) এর কথা না মানার কারণে তারা কিয়ামতের দিন রাসূল (সা.)- এর শাফায়াত পাবে না,। হাদীস শরীফে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো মানুষ, জীব-জন্তু বা কোনো ফসল-গাছ-পালাকে আগুনে পোড়াতে নিষেধ করেছেন। রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, ‘আগুন দ্বারা কেবল আল্লাহই শাস্তি দেবেন, আল্লাহ ছাড়া আর কারো আগুন দ্বারা শাস্তি দেয়ার অধিকার নাই।’ (বোখারি ও আবু দাউদ) তেমনি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মহা পাপ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন”। (সূরা আন নিসা : আয়াত নং ৯৩) কিন্তু আজ খুবই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সবাই লক্ষ্য করছেন যে, আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের অহরহ আগুনে পোড়ানো হচ্ছে এবং অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে আহত ও নিহত করা হচ্ছে। জীবন্ত মানুষকে পেট্রল বোমা, গান পাউডার ইত্যাদি দিয়ে জ্বালানো হচ্ছে। ইসলামের বিধানের তোয়াক্কা না করে, মানবতাকে পায়ে পিষে, পশুত্বের কোন স্তরে পৌঁছলে এমন কাজ করা সম্ভব তা বোধগম্য নয়। এই সব জগণ্যতম কর্ম-কা- দেখলে শয়তানও ঘৃণা ও লজ্জা পায়। আমরা আজ কোথায় বাস করছি? আমরা কি সভ্য জগতের বাসিন্দা, আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব? নাকি অন্য কিছু, কিছুই বুঝতেছি না!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন