বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আহমদ আবদুল্লাহ
মানবাধিকার স¤প্রতি সময়ের অতি পরিচিতি একটি শব্দ। হানাহানি, অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, লুণ্ঠন, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি পাশবিকতার তাÐবে পৃথিবীর দিকদিগন্ত যত বিষাদময় হয়ে ওঠেছে, ততই শিশু ও নারীর করুণ আর্তনাদের মতো মানবাধিকার শব্দটি মানব সমাজের কাছে আরও বেশী সহানুভূতির দাবিদারে পরিণত হচ্ছে। তবুও প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকার কি যথার্থভাবে সর্বত্র সংরক্ষিত হচ্ছে? বর্তমান বিশ্বের সকল ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতির একটাই প্রশ্ন। বস্তুত, ইসলাম ব্যতীত অন্যকোনো জাতি, ধর্ম ও মতাদর্শ দ্বারা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে মানবাধিকা- এর সঠিক বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়নি। মহান রাব্বুল আলামিন মনোনীত মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা ইসলামে আমরা সর্বপ্রথম মানবাধিকার নীতি, আদর্শ ও আইন পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন হতে দেখেছি। চৌদ্দশত বছর পূর্বে বিশ্ব মানবতার অকৃত্রিম বন্ধু, মানবজাতির মুক্তিদূত, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম একটি লিখিত মানবাধিকার সনদ প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করেছেন। এ ছাড়া বিংশ শতাব্দীর ‘লীগ অব্ নেশান্স,’ ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’, ‘ মানবাধিকার সনদ’, ‘জাতিসংঘ সনদ’ ইত্যাদি প্রিয়নবী (সা.) - এর প্রবর্তিত চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যান-ধারণা হতে উৎসারিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলমানরাও আজ মূল বুনিয়াদ তথা আল-কুরআন ও সুন্নাহ হতে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছে। আর এ জন্যই ইসলামের মদিনা সনদের ন্যায় পূর্ণাঙ্গ একটি লিখিত মানবাধিকার সনদ উপস্থাপিত ও বাস্তবায়ন হওয়ার পরও শান্তি ও স¤প্রীতির অন্বেষায় অন্যদের মত মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দিশেহারা হয়ে ঘুরছে।
পৃথিবীতে মানবজাতির আগমনের প্রধান মাধ্যম ও সর্বাধিক আপনজন বাবা-মা। তাই মহান রব্বুল আলামিন সর্বপ্রথম তাদের অধিকার ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ, তোমরা তাকে ব্যতীত অন্য কার ইবাদত কর না। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তাদের একজন বা উভয়ে তোমার সম্মুখে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন তুমি তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে ‘উহ’ শব্দটিও বলনা এবং তাদের তিরস্কার করনা। বরং তাদের সঙ্গে সদালাপ করবে এবং দোয়া করবে। হে আমার প্রতিপালক! তারা শৈশবে যেভাবে আমাকে আদর-যতেœ লালনপালন করেছেন, তুমি তাদের প্রতি তেমনি সদয় হও।’ সুরা বনী ইসরাইল: ২২-২৩) সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার যেমন অধিকার রয়েছে, ঠিক পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অধিকার প্রধান করা হয়েছে। সন্তানের কর্মক্ষম হওয়া পর্যন্ত তাকে লালনপালন করা, শিক্ষা দেওয়া, যথাযথ বিনোদনের সুযোগ ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে প্রকৃত বিকাশ সাধনে সহযোগীতা করা পিতা-মাতার অবশ্যকর্তব্য। পিতা-মাতার পর নিকটতর আত্মীয় ও প্রতিবেশী। ইসলাম মানবতার অব্যাহত ধারাবাহিতা রক্ষার্থে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীর অধিকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন। সমাজের নিঃস্ব, অনাথ ও সর্বহারা মানুষের অধিকার সংরক্ষণেও ইসলাম বদ্ধপরিকর। এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘ ধনীদের সম্পদে দরিদ্র ও নিঃস্বদের হক বা অধিকার রয়েছে। (সুরা জারিয়াত: ১৯) ইসলাম অনাথ, দুস্থ ও পিতৃহীনদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ হে আল্লাহর রাসুল! তারা আপনাকে পিতৃহীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে, আপনি বলে দিন, পিতৃহীনদের অধিকার সংরক্ষণ করা উত্তম। (সুরা বাকারা: ২২০) ইসলামে ইয়াতিমদের সঙ্গে সন্তানের মত আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে।
ইসলাম শ্রমিকের অধিকারও যথাযথভাবে বলে দিয়েছে। শ্রমিককে আল্লাহর বন্ধু হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাদের অধিকার প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর পূর্বে পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ তিনি আরও বলেন, মজুরের বেতন নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিযুক্ত কর না। শুধু তাই নয়, ইসলামি অর্থব্যবস্থা শিল্প-কারখানায় ও উৎপাদন কার্যে নিয়োজিত শ্রমিকদের নির্ধারিত বেতন-ভাতা ছাড়াও উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী হতে উপার্জিত লভ্যাংশের অধিকার ও অংশিদারের ঘোষণা করা হয়েছে।
ইসলাম সমাজ জীবনে মানুষ মানুষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শান্তি, সম্মান, সাম্য-মৈত্রী ও স¤প্রীতির সঙ্গে বসবাস করার অধিকার প্রধান করেছে। সমাজ জীবনে যত বিপর্যয় নেমে আসে সবই মানবাধিকার লংঘনের ফল। ইসলাম সমাজে প্রতিটি মানুষ হবে সভ্য, ভদ্র, শালীন ও সুরুচিসম্পন্ন।
ইসলাম পূর্বযুগে নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করা হত। যারা ছিলো সমাজে উপেক্ষিত, ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত, অধিকারচ্যুত ও অমঙ্গলের আলামত। যাদের কবর দেওয়া হত জীবন্ত। ইসলাম সেই নারীকে যথাস্থানে পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। এবং তাদেরকে মাতৃত্বের মর্যাদায় ভূষিত করে সম্পদের অংশীদারও করেছে। নারী তার পিতামাতা, স্বামী ও আত্মীয় স্বজনের সম্পত্তির অংশীদার। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘ পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের সম্পত্তিতে নারীর অংশ রয়েছে। তা অল্প হোক কিংবা বেশী। ( সুরা নিসা: ০৭)
সুতরাং ইসলাম সমাজে সুইপার থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সবার অধিকার সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে। এতে শাসকের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি শাসিতেরও অধিকার আছে। এতে শাসকের অধিকার, ‘শাসিত জনগণ তার বৈধ আনুগত্য করবে।’ আর শাসিতের অধিকার হলো, ‘ ধনসম্পদ ও স্বীয় জনের নিরাপত্তা। ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা। ধর্মীয় স্বাধীনতা। সকল নাগরিকদের সমান অধিকার। স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার। ন্যায়বিচার পাবার অধিকার। কেননা ইসলামে আইনের চোখে সবাই সমান।’
ইসলাম রাষ্ট্রের কর্মক্ষম বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিত করেছে। প্রিয় নবীজি মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও নিজ হাতে কর্মক্ষম ভিখারীকে কুঠারের হাতল লাগিয়ে তার জীবনকে বেকারত্বের অভিশাপ ও দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে রক্ষা করেছেন। তিনিই প্রবর্তন করেছেন, শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে অক্ষম অপারগ জনসাধারণের রাষ্ট্রীয়ভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে সাহায্যের বিধান। যে বুড়ি পথে কাঁটা পুঁতে তাকে প্রতিদিন কষ্ট দিত, তিনি তার অসুখে নিজ হাতে সেবা করে ইসলামের মানবাধিকারকে সর্বকালের জন্য অ¤øান করে রেখেছেন। আর ইসলাম প্রবর্তিত মানবাধিকার সনদই কেবলমাত্র এ অশান্ত বিশ্বে শান্তি এনে দিতে সক্ষম। সুতরাং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই আমাদের সমাজে বিরাজ করবে শান্তির ফোয়ারা। দেশ হতে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়বে সুখিময় ঝর্ণাধারা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন