শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন: অহংকার কি পতনের মূল?
উত্তর: অহংকার হলো গর্ব করা, নিজেকে বড় মনে করা। হাদীস শরীফের ভাষায়, ‘সত্য প্রত্যাখান করা ও মানুষকে তুচ্ছ মনে করার নাম অহংকার’। ইমাম গাযালি (রহ.) বলেন, ‘নিজেকে বড় মনে করা এবং নিজের মর্যাদাকে অন্যের মর্যাদার উর্ধ্বে মনে করাই হলো অহংকার’। আল্লামা রাগেব ইস্পাহানী (রহ.) এর মতানুসারে, ‘অহংকার হলো কোন ব্যক্তি নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় ও মহৎ মনে করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সত্য গ্রহণ না করে ইবাদতে অনীহা পেশ করা’। অহংকারীকে সৃষ্টিকর্তাসহ কেউই পছন্দ করেন না। হজরত লোকমান আলাইহিস সালাম তাঁর পুত্রকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীদের পছন্দ করেন না’ -(সুরা লোকমান ঃ ১৮)।
অহংকার মানুষের জন্য শোভা পায় না। শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই শোভনীয়। হাদীসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, অহংকার আমার চাদর ও শ্রেষ্ঠত্ব আমার লুঙ্গিস্বরূপ। অতএব, যে ব্যক্তি দুটোর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করবে, আমি তাকে দোজখে ফেলব। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, তাকে দোজখের আগুনে নিক্ষেপ করব’ -(মুসলীম)। অহংকার করার কারণে মহান রাব্বুল আলামীন শয়তানকে বের করে দিয়েছেন। ‘আল্লাহ বললেন, আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। বললেন, তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তভর্‚ক্ত’ -(সুরা আল আ’রাফ ঃ ১২, ১৩)। শয়তান আদম আলাইহিস সালাম এর সাথে অহংকার করে সেজদা না করার কারণে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে উঠেছিল। অহংকারের কারণে আল্লাহ তাকে নিকৃষ্টতম বানিয়ে দিয়েছেন। অহংকার একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো করার কোন সুযোগ নেই।
আমাদের সমাজ অহংকারীদের পদচারণায় ভরপুর। যা আমাদের সমাজকে খুঁেড় খুঁেড় খাচ্ছে। অহংকারের কারণে বড়রা ছোটদেরকে ¯েœহ করে না, তাই ছোটরাও বড়দের সম্মান দেখায় না। যদি আমরা আমাদের সমাজ থেকে অহংকার নামক সামাজিক ভাইরাস কে দূর করতে পারতাম তাহলে সমাজ হয়ে উঠত আদর্শ সমাজ হিসেবে। আমাদের সকলের আদর্শ, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের কোনকালে কোন প্রহরে আতœঅহমিকায় নিমজ্জিত হন নি। বরং, তিনি সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে সতর্কবাণী করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’ -(মুসলীম)। অতএব জান্নাতে প্রবেশ করার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই হিংসাকে চিরতরে বিদায় জানাতে হবে।
অহংকার করা হারাম। ইমাম যাহাবী (রহ.) বর্ণনা করেছেন, অহংকার কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। মহান আল্লাহ তা’য়ালা অহংকারীদের আবাসস্থলকে নিকৃষ্ট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর বাণী, ‘আর অহংকারীদের আবাসস্থল কতইনা নিকৃষ্ট’ -(সুরা আন নহল ঃ ২৯)।
প্রবাদে রয়েছে, অহংকার পতনের মূল। যার মধ্যে অহংকার-অহমিকা বিরাজ করবে সে সফল হতে পারবে না। বরং তার পরাজয়, পতন অনিবার্য। আমাদের সমাজে অহংকারীদের সংখ্যা কম বলার কোন সুযোগ নেই। আমাদের সমাজ অহংকারের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত। আর তাই অহংকারের কারণে পতনের পথে হাঁটছে আমাদের সমাজ। আমাদের এ সমাজকে আদর্শের দিকে নিয়ে যেতে আমরা কি অহংকার মুক্ত হতে পারি না? অহংকার মুক্ত সমাজ হবে একটা আদর্শ সমাজ। যে সমাজের জনগন হবে অহংকার বিমুখ, বিনয়ী। আসুন অহংকারকে ত্যাগ করে আদর্শ সমাজ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।
উত্তর দিচ্ছেন : মাহফুজ আল মাদানী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন