শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২৭ জুলাই, ২০১৭

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামেও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে দ্রæত। বেসরকারী হাসপাতাল এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারে প্রতিদিন একাধিক রোগী আসছেন। প্যাথলোজিক্যাল পরিক্ষায় রোগ সনাক্ত হচ্ছে। আবার জ্বরের লক্ষণ বুঝে চিকিৎসকেরা পরিক্ষা ছাড়া ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। নগরীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া উভয়ের বাহক এডিস মশা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সামনের দিনগুলোতে টানা বর্ষণ থেমে গেলে এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। আর তখন চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
এদিকে নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হলেও অনেক এলাকায় এখনও মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। কর্মসূচি চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে নগরীতে চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে অনেক আগে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার বিপরীতমুখি আচরণে ভাইরাস জ্বরসহ নানা রোগবালাই লেগেই আছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভিড় এখন নিত্যদিনের চিত্র। একই অবস্থা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েও অনেকে চিকুনগুনিয়া আতঙ্কে ছুটছেন চিকিৎসকদের কাছে। লক্ষণ দেখে চিকিৎসকরা চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করছেন। চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় কতজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব কারো কাছে নেই। কারণ এই রোগে আক্রান্তদের সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। এই হিসাব সিভিল সার্জন অফিসে নেই। শুধুমাত্র সরকারী হাসপাতালে যে কয়জনের রোগ সনাক্ত হয়েছে তার হিসাব জেলা সিভিল সার্জন অফিসে আছে। বাকিদের কোন তথ্য তাদের কাছে নেই।
এবিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ১৬ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের রোগ সনাক্ত হয়েছে। তিনি দাবি করেন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও পরিস্থিতি এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তিনি। সরকারি হিসাবে গত এপ্রিল ১৮, মে মাসে ৫৬ এবং জুনে ৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন বলেন, যেহেতু ডেঙ্গুও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা, তাই আমরা মশা নিধন ও মশার কামড় থেকে বাঁচতে মানুষকে সচেতন করছি।
চিকিৎসকেরা বলছেন, গত কয়েক দিন ধরে চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ রোগীদের কাছ থেকে রোগের উপসর্গ দেখেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অনেকে রোগ শনাক্ত করতে ছুটছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করতে প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষায় ব্যয় হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। নগরীর মেহেদীবাগের ন্যাশনাল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত একাধিক রোগী আসছেন। উপসর্গ দেখেই বেশিরভাগ রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগে ফেরদৌস বেগম নামে এক রোগীর প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষায় চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় রোগের উপসর্গ দেখেই ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ রোগী সেরেও উঠছেন। তবে যাদের ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ জটিলতা সৃষ্টি করছে। এদের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এবং তাদের অনেককে হাসপাতালেও যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যাদের অন্য কোন রোগ নেই এবং শারীরিকভাবে সবল তাদের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া দ্রæত সেরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বিএমএ চট্টগ্রামের একজন নেতা জানান, নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বারে চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগী আসছে। চিকিৎসকরা রোগ শনাক্ত করার জন্য প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষা দিচ্ছেন। আবার অনেকে প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াই চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে ভোগান্তির তীব্রতা অতটা বেশি নয়। প্রাথমিকভাবে এ রোগের প্রকোপ বেশি না হলেও সামনের দিনগুলোতে এডিস মশার উৎপাত বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এই জ্বর রোগীর রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে স্থায়ী হয়। কারও এক সপ্তাহ, কারও তিন সপ্তাহ, কারও কয়েক বছরও ভুগতে হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার একেবারেই কম হলেও আক্রান্তদের অনেকের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। বিশেষ করে হাড় ও জয়েন্টে দীর্ঘদিন ব্যথার কারণে কর্মক্ষমতা হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে এ রোগে আক্রান্তদের। এ কারণে চিকুনগুনিয়াকে হালকাভাবে না নেয়ার পরামর্শ দেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার মতো চট্টগ্রামও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে মশার উপদ্রব কিছুটা কমলেও বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর এডিস মশার উপদ্রব বেড়ে যাবে। আর তখন এ রোগের প্রকোপও বাড়বে বলে মনে করেন তারা। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, চিকুনগুনিয়ার জন্য রাজধানী ঢাকার মতো চট্টগ্রামও ঝুঁকিপূর্ণ। এ রোগের প্রধান বাহন এডিস মশা। টানা বর্ষণ থেমে গেলে মশার প্রকোপ বাড়বে, আর তখন এডিস মশার বিস্তারও বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। মশক নিধনের পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বন্দর নগরীতে মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে চসিক। তবে এ কর্মসূচি চলছে ঢিমেতালে। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা হয়নি। নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে গেছে। টানা বর্ষণে নগরী প্লাবিত হওয়ায় বেশিরভাগ নালা-নর্দমাজুড়ে এখন আবর্জনার স্তপ জমে আছে। এতে করে মশার উপদ্রব আরও বাড়ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন