স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া এবং বিএনপি’র শক্তি দেশের জনগণ। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিএনপি’র জয়লাভের জন্য বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হতে ষড়যন্ত্র কিংবা অন্য কোন দেশের সহযোগিতা এবং বিদেশীদের সঙ্গে চক্রান্ত করার প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে সরকার ‘অলিক কল্পকাহিনী’ প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু দেশের জনগণ ভুলে যায়নি ৯৬’র নির্বাচনের আগে কারা লন্ডনে বসে বিদেশীদের সাথে ষড়যন্ত্র করেছিল। গতকাল (রোববার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখ, ক্ষোভ এবং উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম, দেশনেত্রী লন্ডন যাওয়ার কয়েকদিন পরেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং সরকারের মন্ত্রীরা বলতে শুরু করলেন তিনি মামলার ভয়ে পালিয়ে গেছেন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি এভাবে মতামত দেয়া হয় সেই বিষয়ে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্তরায় সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে সরকার প্রধান যদি কিছু বলেন বা মন্তব্য করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেটাকে নির্দেশ বলে মনে করেন এবং সেই মতো কাজ করে থাকেন। যা নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের উপর প্রভাব পরে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার কয়েকদিন পর আবার তারা (আওয়ামী লীগ) শুরু করেছে নতুন একটা ভাঙা রেকর্ড, সেই রেকর্ডে তারা লন্ডনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পেলেন এবং সেই পুরনো কথা আবার বলতে শুরু করেছেন যে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআইয়ের প্রতিনিধি ও জামায়াতের প্রতিনিধির সঙ্গে তথাকথিত একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা। যেটা আপনারা ইতিমধ্যে জানেন যে, সম্পূর্ণ তৈরি করা একটি সাজানো ছবি অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে যেটার ওপর ভিত্তি করে এই মিথ্যা-বানোয়াট তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন গত ১৫ জুলাই লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এক অনুষ্ঠানে বলেন, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচন ভন্ডুল করে অশুভ শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিএনপির জয়লাভের জন্য বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবার জন্যে ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের চক্রান্তেরও প্রয়োজন হয় না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একথা সকলের জানা ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে লন্ডনে তারা কোথায় কাদের সাথে বৈঠক করে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং সরকার গঠন করেছিল। সেই সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সেটি এসেছিল।
‘খালেদা জিয়ার লন্ডন ষড়যন্ত্র’ শিরোনামে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন নিরলসভাবে এবং আজকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট নিরসন করতে যিনি কাজ করে চলেছেন, চেষ্টা করে চলেছেন, তার সম্পর্কে যখন পত্রিকার কেউ এটা নিয়ে লেখেন, কথা বলেন বা অনলাইনে লেখেন তা যদি ভিত্তিহীন হয়, বানোয়াট হয়, তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লন্ডনে শিগগিরই খালেদা জিয়ার চোখে অস্ত্রোপচার হবে। তার চোখের একটা অপারেশন হবে খুব শিগগিরই। আপনারা জানেন, চোখের অপারেশনে কিছু সময় দরকার হয়, সেই কাজগুলো চলছে। তার হাঁটুর চিকিৎসা হবে যেটা তার সমস্যা রয়েছে। খালেদা জিয়ার কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা বলা মুশকিল এজন্য যে, তার চিকিৎসা নির্ভর করছে চিকিৎসকের পরামর্শের ওপরে।
ইসির সংলাপের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে সব সময় আমরা আমাদের কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। আমরা গণতান্ত্রিক সব প্রক্রিয়াগুলো কাজে লাগাতে চাই। আমরা আন্তরিকভাবে চাই যে দেশে একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে আসুক, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায় প্রতিফলিত হোক। আমরা এটাও জানি যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত কঠিন, দুরূহ ও অসম্ভব ব্যাপার। সেজন্য আমরা বার বার বলছি, এখানে একটা সহায়ক সরকারের অধীনে সেই নির্বাচনটা হতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিষয়ে দলের আপত্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আমাদের মতামত স্পষ্ট করে বলেছি। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি রয়েছেন তিনি কোনো মতেই নিরপেক্ষ নন, তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অতীতে সদস্য ছিলেন, সমর্থক হিসেবে তাকে আমরা জানি। নির্বাচন কমিশনের গঠনটাকেও আমরা সেভাবে মেনে নেইনি। তারপরেও এই নির্বাচন কমিশনে আমাদের প্রতিনিধি গেছেন, আমরা যাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সঞ্জীব চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবুল হক নান্নু, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন