বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

সমাজ বিনির্মাণে ঈমানের ভূমিকা

| প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান : ঈমান “ঈমান শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস করা। পরিভাষায় রাসূলুল্লাহ স. তাঁর মহান রবের থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা মনেপ্রাণে গ্রহণ ও বিশ্বাস করাকে ঈমান বলে। মানব জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ মানবজাতিকে ঈমানের দিকে দা’ওয়াত দিয়েছেন। জাগতিক জীবনের প্রকৃত শান্তি, বিশুদ্ধ জীবনযাত্রা, সামগ্রিক কল্যাণ ও পারলৌকিক উক্তি ইত্যাদি সবকিছুর সফলতা প্রকৃত অর্থে ঈমানের বিশুদ্ধতার উপরই নির্ভরশীল। ঈমান হলো সকল প্রকার অপরাধ প্রতিরোধক। অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ঈমানের ভূমিকা অপরিসীম। যার হৃদয় মনে ঈমান সক্রিয় ও জাগরুক থাকে, সে কখনোই কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান লংঘন করে অপরাধে লিপ্ত হতে পারে না। তবে ঈমান যেমন মানুষকে আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত বানায়, তেমনি কুফর বানায় শয়তানের অনুসারী। যারা নিজেদেরকে শয়তানের অনুসারীতে পরিণত করবে তারাই শয়তানের প্ররোচনায় সকল প্রকারের পাপকর্ম ও অপরাধে লিপ্ত হতে বাধ্য হবে। আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না। কেননা যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণের নীতি গ্রহণ করবে, শয়তান তাকে অশ্লীলতা ও অপরাধমূলক কর্মেরই আদেশ করবে।
কেবলমাত্র ঈমানই পারে মানুষকে খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে। এ জন্যই শিশু-সন্তান যখন প্রথম কথা বলতে শুরু করে, তখন ঈমানের প্রশিক্ষণ হিসেবে পিতা-মাতার উচিৎ, সন্তানের মুখ দ্বারা সর্বপ্রথম আল্লাহর নাম উচ্চারণ করানো। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের প্রথম কথা শুরু করবে এই বলে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। একদা রাসুলুল্লাহ স.কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। উক্ত হাদীসে ঈমানকে শ্রেষ্ঠ কর্মরূপে চিহ্নিত করার মূলে ছিল, তার সর্বোত্তম কল্যাণের ধারক হওয়া এবং যাবতীয় অন্যায় অকল্যাণ প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জন করা।
এছাড়াও সন্তানদেরকে আল্লাহর সৃষ্টি জগতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে যুক্তির মাধ্যমে আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন তথা ঈমান আনয়নের আহবান জানাতে হবে। এ বিষয়ে লুকমান হাকীমের উপদেশগুলো প্রণিধানযোগ্য। যা প্রতিটি মানবসন্তানের ঈমানকে সুদৃঢ়, কর্মকে পরিশুদ্ধ, চরিত্রকে সংশোধন ও সামাজিক শিষ্টাচারকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আল-কুরআনে উক্ত উপদেশাবলি চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, (হে নবী, স্মরণ করো) যখন লুকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বললো, হে প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় শিরক গুরুতর অপরাধ।
এভাবে অভিভাবকগণ পর্যায়ক্রমে সন্তানদের সামনে ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো যেমন আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতের প্রতিটি পর্যায় যেমন কবর, হাশর, জান্নাত, জাহান্নাম এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের পরিচয় অত্যন্ত সুন্দর ও যৌক্তিকভাবে তুলে ধরে সেগুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবেন। ফলে সন্তানের ঈমান হবে সুদৃঢ়। আর ঈমান দৃঢ় ও শিরকমুক্ত হলে নৈতিক গুণাবলি অর্জন তার জন্য অত্যন্ত সহজ হবে।
জ্ঞান মানুষের অমূল্য সম্পদ। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই মানবিক গুণাবলি উৎকর্ষিত ও বিকশিত হয়। যে জ্ঞানের উৎকর্ষিত ও বিকশিত হয়। যে জ্ঞানের কল্যাণেই মানবজাতি সমগ্র জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন। সেটি হলো কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান। আল-কুরআন সকল জ্ঞানের উৎস। হাদীস তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ। ইসলাম জ্ঞানার্জনকে সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক করে দিযেছে। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন, জ্ঞানার্জন সকল মুসলিমের উপর ফরয। বস্তুত জ্ঞানার্জন দীনকে ভালভাবে উপলব্ধি করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। দীনের কল্যাণ ও উৎকর্ষ নির্ভর করে জ্ঞানার্জনের উপর। একমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই আল্লাহকে সত্যিকারার্থে ভয় করে তাঁর আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে পালন করে। যেমন আল-কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাহদের মধ্যে কেবল বিদ্বানগণই আল্লাহকে ভয় করে। সুতরাং মাতা-পিতা সন্তানকে ঈমানের শিক্ষা প্রদানের পর ইসলামের যথার্থ জ্ঞান দান করবেন এবং তাদের অনুসন্ধিৎসাকে জাগিয়ে তুলবেন। যাতে করে তারা অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা ভাল-মন্দের, ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে এবং নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে অপরাধকর্ম থেকে।
(চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন