শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বানভাসি মানুষের কথা...

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দশ-বারো দিন ধইরা ঘরে পানি। গুইদ্যা গুইদ্যা (ছোট ছোট) পুলাপান নিয়া খুব কষ্টে আছি। আমারে বাঁচান। আমারে কিছু সাহায্য করেন। গুইদ্যা ছাওয়াল (এক বছর বয়স) ডারে দুধ খাওয়াতি পারি না। এক মুঠো মোটা চাইলের ভাত চাই বাজান’। ‘এক কুর (এক একর) জমি নাগাইছিলাম। পরায় ৩০ হাজার ট্যাহা খরচ। পানিটানি (বন্যার পানি) আইয়া সব ফসল তো খাইয়া গেল। অহন আমগর কিবায় কী অবো। কিবায় জালা ফালামু। ট্যাহা-পইসা কোডাই পামু।’ কথার ফাঁকে ফাঁকে কাপড় দিয়ে চোখের পানি মুচে দুর্ভোগের কথা বলেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের বৃদ্ধা খবিরুন ও শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়ের চর এলাকার কৃষক ছলিমদ্দিন মিয়া। পানিতে হাবুডুবু খেলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণসহায়তা পাননি। রান্না করার অবস্থা নেই। চিড়া-মুড়ি খেয়ে মানবেতর দিন কাটছে বলে জানান তারা।
দিনাজপুর শহরের আছিয়া। বাজারে সবজি বিক্রি করে জমিয়েছিলেন কিছু টাকা। সেই টাকা জমা করে রেখেছিলেন কাপড় ও পলিথিন মোড়ানো এক পোটলায়। সেই পোটলা রেখেছিলেন তার ঘরের কোণে চৌকির নিচে এক পাতিলে। এখন তা লাপাত্তা! বানের পানিতে ভেসে গেছে সেই পোটলা। পোটলা হারিয়ে বৃদ্ধা আছিয়ার এখন শুধু আর্তি ‘আমার কি হইবো বাবা, আমি ক্যামনে ব্যবসা করুম, কি খামু! সব নিয়া গেলো কালনাগিনি বানে ভাসাইয়া!’ মালঝার গ্রামের ৭০ বছরের ধলিবালা রায় জানান, বন্যার এক সপ্তাহে সরকারি এক ছটাক সাহায্যও পাননি তিনি। পেশায় বাইসাইকেল মেকানিক এ বৃদ্ধের এখন কোনো আয় নেই। ঘরে কোনো খাবারও নেই। ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী ত্রাণ কেন্দ্রের সামনে অনুনয়-বিনয় করেন একটা রিলিফের ¯িøপের জন্য, ‘বাবা সকাল থাকি না খাইয়া আছ বাহে, মোর এ্যাকনা ইলিপের বেবস্থা করি দ্যান না ক্যাঁনে।’
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলার কৃষক আব্দুল মালেক (৪৩) বলেন, ‘২৫ হাজার ট্যাহা সুদের ওপরে নিয়া ৪০ শতাংশ জমিতে চিচিংগা লাগাইছিলাম। চিচিংগা গাছে ফুলও আইছিল। কয়দিন বাদেই ফলন ধরত। কিন্তু ফুস কইরা পানি আইয়া সব শেষ হইয়া গেল। আমি অহন কিবায় ঋণ হুজামু (ঋণ শোধ করব) কিছুই ভাববার পাইতাছি না।’ এটি সারা দেশের বন্যাকবলিত মানুষের চিত্র। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছেই। অনাহারে থাকা মানুষগুলোর অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকে সামান্য ত্রাণের আশায়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যে ত্রাণ পাওয়া যায় তা খুবই অপ্রতুল। শিশু বৃদ্ধদের দুর্ভোগের শেষ নেই। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারছে না সেখানে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা ঋণের টাকা। বেকার মানুষগুলো তাই তো দিন রাত পার করছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যত চিন্তা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন