জুবাইদা গুলশান আরা
আকাশটা যেন রাগে গড়গড় করে উঠল। মেঘ জমেছে ভারী হয়ে। পাঁশুটে রঙের মেঘ হিংসুটে চেহারা নিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে দেখছে মাটির পৃথিবীকে। মানব সন্তান ও ভ্রƒ কুঁচকে বিরত চোখে তাকায় ক্রুদ্ধ মেঘপুঞ্জের দিকে। মেয়েরা দল বেঁধে বিরক্ত চোখে তাকায় ক্রুদ্ধ মেঘপুঞ্জের দিকে। মেঘেরা দল বেঁধে আকাশ জুড়ে ভেসে আসে মাঠের ওপর দিয়ে। নদীর ওপরে এক ঝাপটা বৃষ্টি দিয়ে তারপর আবার দলে গিয়ে মেশে। আকাশটা ভারী হয়ে ওঠে মেঘের ভিড়ে। ভরা ভাদ্র মাসের অজানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে গাছ ফুল পাতা সবাইকে ¤্রয়িমাণ করে গেল।
গাঁয়ের রাস্তাগুলো খানাখন্দে পানিতে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। হয়তো বিশাল ¯্রােতে আশপাশের গ্রামের মতো এবার উঁচু পাড়ির বাঁধা ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে। অবস্থা দেখে জরিমন ছেলেকে ডাকেÑ ‘ওই বরকত, এদিকে আয় বাজান, তরাতরি আয়।’ একটু আগেই বরকত ভাত খেয়ে উঠেছে। গামছাটা কোমরে বাঁধা। দৌড়ে এসে বলেÑ ‘মা, বোলাও ক্যান? কি অইছে?’
-মুরগাগুলারে উঠাইছস ? কবুতর গুলান কই?
-কইতরগুলান উডাই নাই মা। অহন অরা এমনে থাহুক।
আসলেই দিনটা শুরু থেকেই থমথমে হয়ে আছে। বরকতের বাজান রউফ মিয়া সকাল থেকে মেম্বার সাহেবের বাড়িতে জিনিসপত্র গুদামে তুলে দিতে গিয়েছে। ফিরতে দেরি হবে। তাদের ঘরের পেছনে একটা আমগাছ রয়েছে। তার সাথে সকাল বেলায় ধলু গাইটাকে বেঁধে রেখেছে রউফ মিয়া। কাছেই একটা খুঁটা পুঁতে আটকে রাখা হয়েছে ধলুর বাছুরকে। বাছুটার সঙ্গে সারাক্ষণ লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা করে বরকত। গরুটাকে আজ আর খেতে নিয়ে যায়নি রউফ মিয়া। বড় বড় কাঁঠাল পাতার ডাল খাওয়ার জন্য নামিয়ে দিয়ে গেছে।
খাবারদাবার পোঁটলা করে একটা বড় হাঁড়িতে করে গুছিয়ে নিলো জরি। সামান্য কিছু বাঁধা থাকলো উঁচু আড়ার উপরে। সব কাজ গুছিয়ে ঘরের দাওয়ায় বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মেয়েটার বয়স তিন বছর। মায়ের কাছেই খেলার নানা কিছু নিয়ে মেতে থাকে। খেলাঘরের হাঁড়ি কুড়ি গুছিয়ে মায়ের কাছে এসে বলেÑ মা আমরা ঘুম যামু কোন হানে? ঘরের সামনে মজবুত লগি পুঁতে বাঁধা নৌকাটা দেখায় জরিমন, একই সঙ্গে বাঁধা একটা চওড়া ডিঙি নৌকা। বুকের ভেতর অজানা ভয়। বন্যা তো প্রতি বছরই হয়। কিন্তু এবার যেন কেমন হিং¯্র চেহারা নদীর। উজানের বড় বড় নদীগুলোর বাঁধ ভেঙে এমন ¯্রােত তৈরি হয়েছে যে, পর পর কয়েকটি গ্রাম ডুবে গেছে। উজানের ঢল এবার রাশ রাশ পানির প্রবাহ নিয়ে এগিয়ে আসছে বেলতলী আর শফিপুরের দিকে। পানি আসছে একটা ঠা-া চেহারা নিয়ে। কিন্তু স্পষ্ট বোঝাই যায় তার মতলব ভালো না। তবে বেশির ভাগ পরিবার উঁচু পাড়ে সরে গেলেও ভয়টা রয়েই গেছে। জরিমনদের চৌচালা ঘরটা নদীর পাড় থেকে বেশ উঁচুতে। কিন্তু হলে কী হবে, উজানের ঢল এসে পাড়ের অনেকখানি ভেঙে দিয়েছে। শেষ অবধি কী হবে, কে জানে? সামনের দুই বাঁক পেরিয়ে মোল্লারহাটপুর গ্রামে তার ভাইয়ের বাড়ি। কোনো বিপদ দেখলে নৌকা নিয়ে সেখানে চলে যাবে। কিন্তু মানুষটা আসতে দেরি করছে দেখে তার খারাপ লাগতে থাকে। ওদিকে মাগরিবের আজানের সময় হয়ে এলো, বরকত বলেÑ আমি বাজানরে ডাইক্যা লইয়া আসি আম্মা। এক দৌড় দিয়া যামুু আর আমু। যাই আম্মা?
-না, না অহন তর যাওন লাগবো না, তুই ধলুরে খাওন দিছস?
প্যাট ভইরা খাইছে?
-হ্যাঁ, ধলুরে সঙ্গে লইয়া যাইবা না? ‘মিনতি ভরা চোখে মায়ের দিকে তাকায় বরকত।
-দেহি বাজান। ওই খাঁ বাড়ির ফাতেমারে কইছি, ধলুরে কয়ডা দিন দেইখ্যা শুইন্যা রাখতে।
বরকতের চোখ দুইটা ছলছল করে। এই তো কয় মাস আগে বাছুরটা হলো। মায়ের মতোই সাদা ফকফকা গায়ের রঙ। চোখ দুইটা ঝকঝক করে। কি যে মায়া ওই চোখে। কাছে গেলে জিহ্বা বের করে হাত চাটে। মাথা ঝুঁকিয়ে এমন লম্ফঝম্প লাগায় যে, মনে হয় কুস্তি লড়ছে। মনের মধ্যে অনেক কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও গরু আর বাছুরটাকে রেখে যাওয়াই সাব্যস্ত হয়েছে।
রউফ মিয়া সন্ধ্যার আগখানে এসে পড়লো। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। মেম্বার সাবে কইছিলো, আমাগো এহানে থাইক্যা যাও। তো আমি মাফ চাইয়া লইছি। ল, সব গুছাইছস?
-হ্যাঁ, সব কিছু গুছান হইছে। আমরা রওনা দিলে খাঁগো বাড়ির মানুষ আইস্যা ধলু আর ছাওডারে লইয়া যাইবো। কবুতরের খোঁপও গাছের লগে বাইন্ধা রাখছি। সন্ধ্যার মুখে নামাজ পড়ে ছৈ নৌকায় মালপত্র তুলে দিলো বাপ-ব্যাটা। ছৈয়ের নিচে বসলো জরিমন। কোলের কাছে বসালো ছোট্টো নুরীকে। বরকতের খুব হাউস, সে ডিঙি নৌকাটা চালাতে পারবে।
সব গুছানোর পরে ঘটলো এক দারুণ বিপত্তি। ডিঙি নৌকা থেকে হাম্বা হাম্বা করে ডেকে উঠলো ধলুর বাছুর। পানির মটকা নৌকার খোলের মধ্যে নামাতে গিয়ে চমকে উঠলো রউফ মিয়া। আবছা আন্দারে ডিঙিটার দিকে তাকিয়ে ধড়ফড় করে উঠলো বুকের মধ্যে। একি বাছুরটা যে ডিঙিতে মজবুতভাবে বাঁধা। আর প্রাণপণে সে রব তুলেছে হাম্বা হাম্বা!
-বরকত, তরে আইজ আমি গাঙে ভাসায়া দিমু। তুই কি জন্যই এমুন কাম করলি?
-আমি করি নাই বাজান। ওই দ্যাহেন, কেমনে ধলু যে দৌড়দিছে... ক্যামনে... ধলু ধলু রে...।
মেয়েকে বুকে চেপে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে আঁতকে উঠলো জরিমনÑ এ কি অবিশ্বাস্য কা-। ফাতেমার ভাই প্রাণপণে চেষ্টা করেও ধলুকে ধরে রাখতে পারছে না। খুঁটাসুদ্ধ দড়িসুদ্ধ পাড় ধরে দৌড় দিয়েছে ধলু। তারপর হাঁড়েপাঁড়ে করে ঢালু পাড়ে ঘষা খেয়ে ডিঙি নৌকার দিকে লাফ দিয়ে ঝপাং করে দুই পা দিতে গিয়ে পানির ¯্রােতে পড়ে গেছে। বরকত কেঁদে ওঠে আর ধলুর গলা জড়িয়ে ধরে তাকে ডিঙির উপরে ঠেলে তোলার চেষ্টা করে। রউফ মিয়া চিৎকার করে বলে। নুরীর মা, ‘তুমি বৈঠা ধরো। বইঠা ধইরা বইয়া থাকো। আমি দেহি হারামজাদীরে ডিঙিত্্ উডাইতে পারি কি না?’ পানিতে নেমে পড়ে রউফ মিয়া। ওদিকে বাছুরটা হাম্বা হাম্বা ডাক থামিয়ে চার পা জুড়ে ডিঙির পাটাতনে বসে পড়েছে। ধলুর চার পা ঠেলে ডিঙিতে উঠাতে দমফাটা কষ্ট হচ্ছে। চারপাশে ঢলের ¯্রােত তাদের ঠেলছে। কয়েকবার পিছলা খেয়ে শেষ অবধি অমানুষিক পরিশ্রমে ধলুকে ডিঙিতে উঠাতে পারলো তারা। গরুটা বাচ্চার পাশেই হুমড়ি খেয়ে পড়লো শেষ অবধি।
‘চুপ মাইরা পইড়া থাক অহন। বেটি বজ্জাত। নাইয়র যাওনের শখ হইছে।’ খানিকটা গালমন্দ করে দম নেয় রউফ মিয়া। ঠা-া পানিতে হাত-পা অবশ অবশ লাগছে তার। কোনোমতে ছৈ নৌকায় উঠে হাত, পা, গা গতর মোছে। জরিমন একটু সরষের তেল ঘষে ঘষে তাকে চাঙ্গা করে তোলে। আর চাঙ্গা হয়ে ওঠার পড়েই দু’জনার মনে পড়ে বরকতের কথা।
-বরকত, বাজান তুই কি করস? ধলুরে তো পাইছস। এহন আয়। বরকত সাড়া দেয় না। অজানা আতঙ্কে শিউরে ওঠে বাপ-মা। বরকতের কি হলো? জবাব দেয় না কেন? এক লাফে ছেলের পাশে এসে বসে রউফ মিয়া। বরকত শুয়ে আছে। প্রিয় বন্ধুর পাশে গলার নরম কম্বল ঘেঁষে মাথা। কিন্তু বরকত যে নড়ে না! নিঃশ্বাস নেয় কিনা বোঝা যায় না।
চিৎকার করে বুক চাপড়ে ওঠে রউফ মিয়া।
-ও বাজান, বাজান রে! কথা ক’ বাজান। ... ও নুরীর মা, পোলায় যে কথা কয় না। হুমাশ ফালায়না গো। আমার পোলায় মইরা গেছে বুঝি গো!
-তৌবা তৌবা, কি কন নুরীর বাপ! গায়ের উপরে ক্যাঁথা দেন! হাতে বুকে গরম ত্যাল দেই, মালিশ করেন। মরছে ক্যান? দরদর করে চোখের পানি পড়ে মায়ের। রউফ মিয়া ছেলের বুকে তেল মালিশ করে, দোয়া দরুদ পড়ে। অবশেষে এক সময় ধীরে ধীরে ঘাড় ফেরে। নিঃশ্বাস ফেলে বরকত। উঠে বসতে চেষ্টা করে। মুখের পাশে ধলুর গরম নিঃশ্বাস লাগে। ধলু খুব আস্তে আস্তে পা সরিয়ে বসে। ছেলেকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ায় তার বাজান। ছৈ নৌকার দিকে এগিয়ে যায়। বলে নুরীর মা, পোলারে ন্যাও, শোয়ায়ে দেই।
ডিঙি নৌকায় ফিরে ধলুর গায়ে একটা বস্তা দিয়ে দেয় রউফ মিয়া। লগি হাতে নিয়ে ¯্রােতের সঙ্গে সঙ্গে নৌকা দুইটা নিয়ে ধীরে ধীরে যাত্রা করে। আশুগঞ্জ পৌঁছাতে খুব কষ্ট হয় না ওদের। নদীর ¯্রােতই তাদের যাত্রা সহজ করে দেয়। মোল্লারহাট বেশ বড় এলাকা। রোজই নদী ভাঙনে হয়রান অনেক মানুষ এখানে আশ্রয় নিতে আসে। রউফ মিয়ারা পৌঁছানোর পর বেশ সাহায্য করেছে গ্রামের মানুষ। গরু আর বাছুর দুইটার জায়গা হয়েছে মামাবাড়ির গোয়ালে। ধলুর জখম হওয়া হাঁটুতে চুন হুলুদের পট্টি লাগানো হয়েছে। খাবারও দেওয়া হয়েছে। জরিমন চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে বলে আল্লায় রহম করছে গো ভাবীজান। হ কইন, অহুন কয়টা দিন আরাম কর। এহানে তর কুনো চিন্তা নাই।
আট দিন বেশ স্বাছন্দ্যে কেটে যায়। বরকত খুব খুশি। এখানে তার ক’জন খেলার সাথীও জুটে যায়। গোল্লা ছুট আর ছোটা বল দিয়ে খেলা করে। সারাদিন পরে মেম্বার সাহেবের বাড়িতে বড়দের সঙ্গে বরকতও যায়। বন্যার অবস্থা নিয়ে সবাই আলোচনা করে। তেল দিয়ে মাখানো মুড়ি খেতে ভারী মজা পায় বরকত। সবচেয়ে ভালো আছে ধলু আর তার বাছুর। মামুদের মাঠে অনেক ঘাস। সারাদিন আরও চারটা গরুর সঙ্গে খেয়ে বেড়ায় ধলু। সন্ধ্যায় খড়-খইল দিয়ে মাখা খাবার খেয়ে বাছুরটাকে কাছে নিয়ে ঘুম লাগায়।
এবার ফিরে যাবার পালা। খোলা ডিঙির চারপাশ ঘিরে বাখারীর বেড়া দিয়ে দেয় মামুদের বাড়ির কাজের মানুষ। সাবধানে ধলুকে নামিয়ে বসিয়ে দেয়। ধলু মামুদের বাড়ির রাখাল ছেলেটার হাত চেটে আদর জানায়। মামুদের বাড়িতে মানুষেরা, পাড়ার লোকজন সবাই আসে বিদায় জানাতে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না জরিমন। ভাবীর হাত ধরে বলে ভাবী, আমি তয়। অনেক কষ্ট দিয়া গেলাম গো!
-হ! কষ্ট আবার কি! কতদিন পরে নাইয়রে আইলা। আবার আইতে ভুলিস না। ছোটো ছেলেমেয়েরা ধলুর বাছুরটাকে খুব আদর করে বিদায় দিলো। কে যেন ওর গলায় একটা ঘুঙুর পরিয়ে দিয়েছে, ভারী সুন্দর লাগছে ঠুন ঠুন আওয়াজ শুনতে।
Ñআইচ্ছা ভাইজান আমি তয়।’ কোলাকুলি করে বিদায় নেয় রউফ মিয়া।
-আসি ভাই সকল।’ ধীরে ধীরে লগি নিয়ে নৌকা ছাড়ে রউফ মিয়া।
বাড়ি ফিরে ঘরবাড়ি গোছগাছ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জরিমন আর রউফ মিয়া। নুরীর দুই হাতে দুটো রূপার চুড়ি। মামী দিয়েছে। নুরীর খুশির সীমা নাই।
বিকাল হলে বাজানের সঙ্গে ক্ষেতের কাজ সেরে ঘরে ফেরে বরকত। তাদের দেখে ধলু আর বাছুরটা জোর গলায় হাঁক দেয় হাম্বা হাম্বা।
বাছুরটা তিড়িং বিড়িং করে লাফায়। তার গলায় ঘণ্টি বাজে ঠুন, ঠুন, ঠুন।
সন্ধ্যার পরে চাঁদ ওঠে। চাঁদের আলো এসে দাওয়ায় ঝিলিমিলি ঝালর তোলে। কবুতরগুলো মাঠে মাঠে উড়ে উড়ে চক্কর খায়, আবার এসে মাটিতে নামে। গলা ফুলিয়ে ডাক দেয়, দানা খুঁটে খায় আবার কোটরে গিয়ে ঢোকে।
নদীটা এখন কিছুটা শান্ত। ভয়ঙ্করী মূর্তি যেন একটু নরম হয়েছে। তবুও গ্রামের ছেলেপুলেদের নদীতে নামা, সাঁতার কাটার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছেন মেম্বার সাহেব।
এমনি এক জ্যো¯œা ধোয়া সন্ধ্যায় অবাক হয়ে সবাই দেখে বরকতের হাতে একটা পুঁথি।
-কি করবি রে বাজান? তুই তো ভালো কইরা পড়তে পারস না।’ জানতে চায় জরিমন।
কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যে সবাইকে অবাক করে দেয় তার ছেলে। স্মৃতি থেকে তুলে কিছুটা, আর কিছুটা পুঁথি দেখে সুরেলা গলায় গেয়ে ওঠে- শোনো শোনো গাঁও গেরামের যতেক মানুষজন, ভাদুইরা বানের কথা করিব বর্ণনা। আস্তে আস্তে ছেলের পুঁথি পড়া শোনে তার বাজান-পাড়ার মানুষেরা, মা, চাচি, খালারা।
Ñপোলাডা শিখলে কই থন? আশ্চর্য কা-!’ সবাই বলাবলি করে।
মামার বাড়িতে যে পুঁথিয়ালের কাছে মুগ্ধ বালকটি বসে বসে পুঁথি পাঠ শুনেছে, সেই পাঠকে তাকে একটা স্বপ্নের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তার ছোট জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তার মনের বয়স যেন হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ভেতরের আবেগ থেকে তার গলায় উঠে আসছে বিচিত্র ভঙ্গি, আনন্দ বেদনার প্রকাশ। গ্রামের মানুষ আনন্দিত বিস্ময়ে তাকে ডাকছে বরকত গায়েন বলে।
জ্যো¯œাধারা রাত্রিতে, নদী-তীরের বসতি থেকে সুর ওঠে, ছন্দ আর আলোছায়া মেশা বৈচিত্র্যে।
একটু দূরে গোয়ালে বসে কান পেতে ধলু সেই গান শোনে কান খাড়া করে। বাচ্ছাটা ঝিমোয়, আবার লাফিয়ে ওঠে।
আর নদীটি যেন তার ¯্রােতের মধ্যে প্রতিধ্বনি তোলে। ভাঙনের তীব্রতা ভুলে কান পেতে শোনে। আকাশের সমেহ জ্যোৎ¯œা যেন বন্যাবিধৌত গ্রামীণ জনপদে বলে যায় নতুন আশা নতুন সৃজনের কথা। কবুতরগুলো জ্যোৎ¯œায় ভেসে বেড়ায়, যেন অভিনন্দন জানায়। কিশোর পুঁথিয়াল অভিজ্ঞ গায়েনের মতো সবাইকে সেলাম জানায়। কৃতজ্ঞতা জানায় জীবনকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন