মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হজ ও কোরবানির ইতিহাস

প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী

‘ইয়াওমুল আজাহা’ কোরবানি দিবস এবং ‘ঈদুল আজহা’ কোরবানির ঈদ। আরবি চান্দ্র বর্ষের দ্বাদশ তথা শেষ মাসের নবস দিবসকে ইসলামে আরাফা অর্থাৎ হজ দিবস এবং দশম বা দশ তারিখকে কোরবানি দিবস বলা হয়। খানা-ই-কাবা অর্থাৎ বায়তুল শরিফকেন্দ্রিক হজের একটি আবশ্যকীয় অংশ হজযাত্রীদের জন্য কোরবানি, যা তিন দিন পর্যন্ত লাগাতার করার বিধান রয়েছে। মুসলিম জীবনে সক্ষম ব্যক্তির ওপর হজ মাত্র একবার ফরজ এবং কোরবানি সক্ষম ব্যক্তির ওপর প্রতি বছর ওয়াজিব হয়ে থাকে। হজ মক্কা শরিফের নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে এবং কোরবানি নির্দিষ্ট সময়ে দুনিয়ার সর্বত্র অনুষ্ঠান করার বিধান। এর অর্থ হচ্ছে হজের অংশ হিসেবে কোরবানি হাজিরাই মক্কা শরিফে আদায় করবেন, বাকিরা ওই নির্দিষ্ট দিন-তারিখে যে কোনো স্থানে আদায় করতে পারেন। ঈদুল আজহা-কোরবানির ঈদ নামকরণের কারণ হচ্ছে কোরবানি করার লোকের সংখ্যা হাজিদের অনুপাতে বহু বেশি। পক্ষান্তরে হজ ইসলামের একটি অন্যতম রোকন। কাবা শরিফে উপস্থিত হয়ে আদায় করার বিধান এবং এ সংখ্যা সীমিত কোরবানি তাদের তুলনায় অতি নগণ্য। ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির কালেমার পর নামাজ হচ্ছে দ্বিতীয় ভিত্তি। নামাজ আদায়ের জন্য কেবলামুখী হওয়ার আল্লাহর এবাদত বন্দেগীর প্রধান নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা হযরত ইবরাহীম (আ.) এবং হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর ঐতিহ্য প্রতীক। তারা উভয়ই এই কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন। পক্ষান্তরে বনি ইসরাঈলের নবীগণ মসজিদে আকসাকে কেবলা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। অর্থাৎ আল্লাহর নবীগণ তার এবাদতের জন্য নির্দিষ্ট ঘরের দিকে মুখ করতেন। এই কেবলা নামাজের জন্য নবীগণের ধর্মীয় ঐতিহ্য প্রতীক। যেসব নবীর কেবলা ছিল মসজিদে আকসা রাসূলুল্লাহ (সা.) সাময়িকভাবে তাদের অনুসরণে মসজিদে আকসার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে থাকেন। হিজরতের পরও ১৬/১৭ মাস পর্যন্ত মসজিদে আকসাই ছিল মুসলমানদের প্রথম কেবলা। একদিন আসরের সময় নামাজরত অবস্থায় কাবার দিকে নামাজ পড়ার নির্দেশ হলে তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) কাবার দিকে ফিরে যান এবং অবশিষ্ট নামাজ সমাপ্ত করেন। যে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে, একে মসজিদে ‘কেবলাতাইন’ দুই কেবলার মসজিদ বলা হয়। বায়তুল্লাহ শরিফ বা কাবাতুল্লাহ আল্লাহর ঘর। মুসলমানদের একমাত্র স্থায়ী কেবলা হিসেবে পাঞ্জেগানাসহ যাবতীয় নামাজ, এমনকি জানাজার নামাজ পর্যন্ত কেবলা অর্থাৎ কাবামুখী হয়ে আদায় করতে হয়। খানা-ই-কাবার তাওয়াফ করাটা হজের প্রধান রোকন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) সবকটি মূর্তি অপসারিত করে কাবাকে পবিত্র করেন। সেখানে হযরত বেলাল (রা.) প্রথম আজান দেন। কাবার নির্মাণ পুনর্নির্মাণ এবং তার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বিধর্মীদের আপত্তি ইত্যাদি সম্পর্কে নানা কথা আছে। সব দিকের ওপর বিশদ আলোচনা করাও এখানে সম্ভব নয়। নি¤েœ আমরা খানা-ই-কাবার সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক আলোচনা ও আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ের অবতারণা করতে চাই। কেননা মুসলমানদের এবাদতী জীবন, তাওহীদ ও হজের যাবতীয় প্রতীকী কর্মকা- এবং ঐতিহ্য নিদর্শনাবলী কাবাকেন্দ্রিক হওয়ায় এবং ইবরাহিমী মিল্লাতের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় খানা-ই-কাবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সর্বাধিক।
খাঁটি এবং স্থায়ী বায়তুল্লাহ নির্মাণের গৌরব আবর ভূ-খ-ের ভাগ্যে লিপিবদ্ধ ছিল। এ মহান পবিত্র কাজে হজরত ইবরাহীম (আ.)-কে সাহায্য-সহযোগিতা দান করেন তার ভাগ্যবান পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)। বায়তুল্লাহ নির্মাণের জন্য হযরত ইবরাহীম (আ.) আবু কোরাইশ মাটিতে একটি স্থান মনোনীত করেন। বলা হয়, প্রথমে তিনি এ স্থানেও একটি অস্থায়ী বায়তুল্লাহ স্থাপন করেছিলেন, যেমন তিনি সফরকালে যেখানে অবস্থান করতেন, সেখানেই নামাজের জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করতেন এবং গৃহটি চিহ্নিত করার জন্য তাতে একটি পাথর স্থাপন করতেন। অতঃপর যখন একটি স্থায়ী গৃহ নির্মিত হয়ে যেত তখন সেই পাথরের প্রয়োজনও আর থাকত না। তথাপি ওটা বায়তুল্লাহ শরিফের এক কোনে লাগিয়ে রাখতেন, যাতে বোঝা যায় যে, বায়তুল্লাহর আরম্ভ কোন স্থান থেকে হয়েছিল। অপর উদ্দেশ্য ছিল, বায়তুল্লাহ তাওয়াফকারীদের জন্য তাওয়াফের সূচনা ও সমাপ্তির স্থান নির্দিষ্ট করা। সে পাথরটি ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। কোরআনে বায়তুল্লাহ নির্মাণের বর্ণনা রয়েছে। খানা-ই-কাবা হযরত ইবরাহীম (আ.) কীভাবে নির্মাণ করেন, সে সম্পর্কে আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে যে, আল্লাহর এবাদত বন্দেগীর জন্য তিনি সর্বপ্রথম গৃহ নির্ধারণ করেন। যখন থেকে তিনি আল্লাহর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য লাভ করেন, তখন থেকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী স্বীয় দেশ ত্যাগ করে হারবান নামক স্থানে চলে যান এবং হারবার হতে শাম (সিরিয়া) চলে যান। যখন প্রথমবারের মতো তার নিকট আল্লাহতায়ালা আত্মপ্রকাশ করে, তখন তার পবিত্র নামে একটি জবাইখানা নির্মাণ করেন এবং সেখানে একটি পাথর স্থাপন করে উহাকে জবাইখানার নিদর্শন বানান এবং উহার নাম রাখেন ‘বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর গৃহ’। হিবরুন শহরে যেখানে তিনি বহু বছর অবস্থান করে ছিলেন, হযরত ইবরাহীম (আ.) সেখানেও একটি অনুরূপ বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেন। বিভিন্ন সময়ে নির্মিত এসব বায়তুল্লাহ অস্থায়ী পাঠকেন্দ্র হয়ে যায়। সেখানে তিনি এক খ- পাথর বসিয়ে দিতেন। এ বর্ণনা হতে জানা যায় যে, প্রকৃত বায়তুল্লাহ নির্মাণের পূর্বে হযরত ইবরাহীম (আ.) যে স্থানে গমন করতেন, আল্লাহর এবাদতের জন্য সেখানেই একটি বায়তুল্লাহ নির্মাণ করতেন।
হজের প্রবর্তন আগে না কোরবানি?
বর্ণিত বিবরণ হতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কোরবানি প্রথার বহু আগেই হজের প্রবর্তন হয়েছিল ফেরেশতাদের মধ্যে। আসমানে আসমানে তারতাওয়াফ প্রদক্ষিণ করতেন। আদম (আ.)-এর সময়ে তিনি সর্বপ্রথম দুনিয়াতে বায়তুল্লাহ নির্মাণ এবং তারতাওয়াফ বা হজ করেন। কাবিল কর্তৃক হাবিল নিহত হওয়ার সময়ে হযরত আদম (আ.) কাবায় হজ করতে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই এ হত্যাকা-ের দুঃসংবাদ পেয়ে দারুণভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন। উপমহাদেশ হতে তিনি কাবায় গিয়ে চল্লিশবার হজ পালনের কাহিনীও প্রচলিত। তবে হজের সময় আদম (আ.)-এর কোরবানি করার বিধান ছিল কিনা তা জানা যায় না। তবে আল্লাহর নির্দেশে তিনি হাবিল ও কাবিলের মধ্যে বিদ্যমান ঝগড়া মীমাংসার জন্য কোরবানি পেশ করার নির্দেশ দান করেছিলেন, যার বিবরণ কোরআনে সূরা মায়েদায় রয়েছে। সুতরাং হজ প্রথা কোরবানির আগেই প্রবর্তিত হয়েছে। কাবা শরিফ মুসলিম মিল্লাতের খাঁটি এবং বুনিয়াদি ইসলামী ঐতিহ্য সংস্কৃতির প্রধান উৎস কেন্দ্র হিসেবেও এর আদর্শিক মাহাত্ম্য সর্বকালের জন্য স্বীকৃত। তাই তার মহিমা কীর্তি স্মরণীয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহতায়ালা হযরত আদম (আ.)-কে আল্লাহর একটি ঘর নির্মাণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি আল্লাহরই নির্দেশ অনুযায়ী খানা-ই-কাবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেটাই কাবাতুল্লাহ। খানা-ই-কাবার নির্মাণকার্য সমাপ্ত হওয়ার পর হযরত আদম (আ.) হজ করার উদ্দেশ্যে আরাফাতে গমন করেন। সেখানে তিনি হযরত হাওয়া (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। দীর্ঘকাল বিচ্ছিন্ন থাকার পর উভয়ের এই সাক্ষাতের ফলে তারা আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেন। তারা ‘মোজদালিফা’য় রাত যাপন করেন। অতঃপর মিনায় আসেন, সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে তারা কাবা শরিফের তাওয়াফ করেন। আল্লাহর নির্দেশ আদায়কৃত তাদের এটা ছিল প্রথম হজ।
আদম পরবর্তীকালে যুগে যুগে আম্বিয়া রাসূলগণের বায়তুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ-প্রদক্ষিণ ও হজ পালনের কথা জানা যায়। তবে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও হযরত মূসা (আ.)-এর যুগে কোরবানির কথা কোরআনে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হলেও অন্যান্য নবীগণের কোরবানি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। হযরত ইবরাহীম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করতে গিয়ে পশু কোরবানি করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে সেই পুত্রকে নিয়ে খানা-ই-কাবা নির্মাণ করেন এবং হজ প্রথার প্রচলন করেন, যার বিবরণ কোরআনে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত মূসা (আ.)-এর সময়ে ‘আমিল’ নামক এক নিহত ব্যক্তির হত্যাকারী নির্ণয়ের জন্য মূসা (আ.) আল্লাহর নির্দেশে একটি গরু জবাই করতে বলেছিলেন, সূরা বাকারায়, সার বিশদ বিবরণ রয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী সেই জবাইকৃত গরুর লেজ দ্বারা নিহত ব্যক্তির কবরে আঘাত করলে জীবিত হয়ে হত্যাকারীর (তার ভাতিজার) নাম বলে দিয়ে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায় অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করে। এটি ছিল হযরত মূসা (আ.)-এর ‘মোজেযা’পূর্ণ ঘটনা।
আরবরা প্রথমে মিল্লাতে ইবরাহীম (আ.)-এর অনুসারী ছিল। হজরত ইসমাঈল (আ.) এর পর তার পুত্র হজরত ‘নাবত’ কাবার মোতাওয়াল্লি হন। তার পরবর্তীকালে ‘জুরহুম’ গোত্র মোতাওয়াল্লি হয়। এ গোত্রকে ‘খোজআ’ গোত্রের ঊর্ধ্বতন পুরুষ আমর ইবনে লোহাই জুরহুম গোত্রকে বায়তুল্লাহ শরিফ হতে বহিষ্কার করে। তার আসল নাম ওমর ইবনে রাবীআ ইবনে হারেসা ইবনে আমর ইবনে আমের ইজদী। এ আমর ইবনে লোহাই ছিল আরবে মূর্তি পূজার প্রবর্তক। সে জুরহুমকে বের করে দেয়ার পর নিজেই বায়তুল্লাহর মোতাওয়াল্লি হয়ে বসে। লোহাই সেই ব্যক্তি যে সাযেবা, ওয়াছিলা বাহিরা এবং হামিয়া প্রথা চালু করেছিলেন।
বর্ণিত আছে যে, আমর ইবনে লোহাই একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কেউ তাকে পরামর্শ দিল যে, সিরিয়ায় অবস্থিত ‘বাল্কা’ নামক স্থানে গরম পানির একটি ঝরনা আছে। তুমি যদি সে ঝরনায় গোসল কর তাহলে সুস্থ হয়ে যাবে। এ কথা শুনে ইবনে লোহাই বাল্কায় পৌঁছে এবং ওই ঝরনায় গোসল করার পর আরোগ্য লাভ করে। সেখানে সে লোকদেরকে মূর্তিদের পূজা করতে দেখে এবং জিজ্ঞাসা করে এসব কী? লোকেরা বলল, আমরা এগুলোর ওয়াসিলায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করি এবং ওদেরই ওয়াসিলায় শত্রুর ওপর জয় লাভ করি। এ কথা শুনে সে তাদেরকে অনুরোধ জানায় যে, সেসব মূর্তি হতে আমাকেও কিছু দান কর, মোট কথা সে খনি হতে কিছু মূর্তি সঙ্গে নিয়ে আসে এবং বায়তুল্লাহ শরিফে স্থাপন করে এবং আরবদেরকে সেগুলো পূজা করার আহ্বান জানায়। এভাবে আরবে মূর্তি পূজা ছড়িয়ে পড়ে। আমর ইবনে লোহাই কর্তৃক আনীত এবং কাবায় স্থাপিত কয়েকটির নাম উপরে বর্ণিত হয়েছে।
এ জাহেলি আরবরা কত অন্ধ বিশ্বাসী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল যে, কাবা শরিফে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করা ছাড়াও উহার পবিত্রতা ক্ষুণœসহ আরো নানা কুপ্রথার প্রচলন এবং হজের সময় বহু গর্হিত ও অবৈধ কাজ করতে দ্বিধা করত না। তাদের সেই অন্ধ বিশ্বাসের একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। মক্কা শরিফের নিকট একটি বিরাট বৃক্ষ ছিল। জাহেলি যুগে আরবরা সেখানে বছরে একবার আসত। সে বৃক্ষে তাদের অস্ত্রপাতি ঝুলিয়ে রাখত এবং তার পাশে নানা পশু জবাই করত।
বর্ণিত হয়ে থাকে যে, আরবরা যখন হজে আসত তখন তাদেরগুলো উক্ত বৃক্ষে লটকে দিত এবং হেরেমে চাদরবিহীন অবস্থায় সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রবেশ করত। এ জন্য বৃক্ষটিকে তারা ‘আনওরাত’ বলত। ইবনে ইসহাক ওহাব ইবনে মোনাব্বেহ বর্ণিত, হাদিসের বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, যখন “ফারমুন” নামক খৃস্টান তার সফরে নাজরাতে গোলাম হিসেবে বিক্রি হয় তখন নাজরানবাসীদেরকে একটি বিশাল বৃক্ষের পূজা করতে দেখেছে। এ বৃক্ষের নিকট বছরে একবার ঈদোৎসব অনুষ্ঠিত হতো। তারা ঈদ উপলক্ষে উত্তম পোশাক পরিধান করত এবং নারীরা তাদের অলঙ্কারাদি উক্ত বৃক্ষে ঢেলে দিত। অতঃপর উল্লিখিত ব্যক্তি ফাড় মুমুনীদের নানা কারামত দেখে খৃস্টান হয়ে যায়। (সিরাতে ইবনে হিশাম)
হজের জন্য আগত আরবরা ‘আনওরাত’ বৃক্ষের প্রতি অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে যেসব কা- কারখানায় লিপ্ত হতো উল্লিখিত ঘটনা তার প্রকৃত দৃষ্টান্ত। এরূপ আরো নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে বায়তুল্লাহ শরিফের প্রতি জঘন্য অমর্যাদা প্রদর্শন ও হজকে রীতিমতো তামাশায় পরিণত করেছিলেন। বায়তুল্লাহ শরিফের পবিত্রতা ও সম্মান মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে এবং হজ তাওয়াফকে গর্হিত রীতি প্রথার মাধ্যমে পৌত্তলিক আচার-আচরণের মাধ্যমে পদদলিত ও কলংকিত করে আরবের জাহেলি বর্বরগণ যে জঘন্য ইতিহাসের সৃষ্টি করেছিল, তাতে ঐতিহ্য ম-িত মিল্লাতে ইবরাহিমীর আসল চেহারা অবয়ব সম্পূর্ণ বিকৃত ও পরিবর্তন হয়ে যায়। জাহেলিয়াতের এ অন্ধকার যুগ কতকাল অক্ষুণœ ছিল তার সঠিক ইতিহাস বলা না গেলেও ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত তা স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয় এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগ পর্যন্ত জাহেলিয়া যুগের বহু কুসংস্কার নানা স্থানে পরিলক্ষিত হতে থাকে। ৮ম হিজরি সালে মক্কা বিজয়ের ফলে তার দ্রুত অবসান ঘটতে থাকে।
লেখক : সাংবাদিক, গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন