মুস্তাফা জামান আব্বাসী
গরুর যে অংশটি গরিবের প্রাপ্য তার ডিস্ট্রিবিউশন সম্পর্কে। এ নিয়ে কেউ ভাবিনি। এ বছর গুলশান-১ ও ২, বনানী, বারিধারা, ডিওএইচএস, সর্বমোট কম করে হলেও ১০০০ গরু জবাই হবে। সেখানে মসজিদ আছে দশটি অথবা বারোটি। এর বেশি নয়। এক-তৃতীয়াংশ গোশত গরিব ও নি¤œবিত্তদের প্রাপ্য। এখানে আর কারো ভাগ হতে পারে না, তা না হলে কোরবানি হবে না। আমরা যারা কোরবানি দেব, তারা বেলা দু’টোর মধ্যে কোরবানির এক-তৃতীয়াংশ গোশত মসজিদের কো-অর্ডিনেটরের কাছে জমা দেবেন। প্রতিটি প্যাকেট হবে দু’ কেজির নিচে নয়। কম-বেশি হলে হবে না, মেপে দিতে হবে। এই এরিয়ার চারপাশে যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও নি¤œবিত্ত মানুষ বাস করে, তাদেরকে আগের দিনই কার্ড পৌঁছে দেয়া হবে, যাতে একই পরিবার একাধিকবার এসে ভাগ না বসাতে পারে। অতি বৃদ্ধরা না আসলেও চলবে।
অপর দুই-তৃতীয়াংশ যা আত্মীয় ও বন্ধুদের হক, তা মসজিদের মারফত বিলির প্রয়োজন হবে না। আমার ধারণা যে, গরিবরা সবাই পরিমিত পরিমাণ গোশত পাবে এবং কেউ বঞ্চিত হবে না। আমাদের তরুণদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকের মনোভাব খুবই প্রবল, তাদের অভাব হবে না কারণ এরা অসীম সওয়াবের অধিকারী হবেন। প্রতিটি দরিদ্র মানুষ এতে খুশি হবেন। কারো মনে থাকবে না কোনো হাহাকার। আমরা যারা ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত, তাদের পরম সৌভাগ্য যে দু’জন তরুণ ব্যক্তি আমাদের মেয়র। প্রস্তাবটি তাদের নজরে এলে হয়তো খুব সহজেই গরিবরা আমাদের দেয়া গোশতগুলো পেয়ে যাবেন। ঈদ মোবারক।
টেলিভিশনে আমন্ত্রণ ছোটবেলায় দেখা ঈদকে স্মরণ করে একটি গান রচনা করতে পারি, যেখানে থাকবে গরুর কথা। বিশেষ করে গরু কীভাবে ছেলেমেয়েরা আনন্দ করে খেত, তার কথা। যে কাগজে লিখি, তারা প্রশ্ন রাখলেন, গরুর গুঁতো খাওয়া হয়েছিল কি? কোনো ক্ষত হয়েছিল কিনা? এর পরের প্রশ্ন হতে পারত। আপনি ছোটবেলায় গরুর মতো মেধাবী ছিলেন? যেন পুরোটাই কৌতুক, পুরোটাই তামাশার অন্তর্গত একটি বিষয়। লিখতে পারিনি, কারণ কুচবিহারে গরু জবাই নিষিদ্ধ ছিল। কলকাতায় যাবার আগ পর্যন্ত ওর স্বাদ ছিল আমাদের অজানিত।
যে শেষ লেখাটি কাগজে পাঠিয়েছি তার শিরোনাম : ‘একটি গরুর কথা’। গরু সম্পর্কিত রচনা ইদানিং জনপ্রিয়তার শীর্ষে, বিশেষ করে টেলিভিশন টকশোতে। ঈদের তাৎপর্য অনেকখানিই ভুলে গেছি। একটি গরুতে সাতজনের নাম লেখা যায়, অর্থাৎ সাতজন মানুষ একটি গরুর কারণে ক্ষমা পাবে। এটা সম্ভব হবে তখনই যখন সে ক্ষমার যোগ্য হবে। শুধু গরু কোরবানিতে কাজ হবে না।
ক’দিন ধরে প্রচারিত হচ্ছে কারা ভালো অনুষ্ঠান দিয়ে দর্শকদের আটকিয়ে রাখতে পারবেন। এর মধ্যে খারাপ কিছু নেই, তবে সবচেয়ে মজার কথা যে কোরবানির মাধ্যমে যে এই উৎসবের প্রথম ও শেষ তা জানাতে অক্ষম পরিবেশকরা। এর মানে যে শুধু হাম্দ ও নাত তাও নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কীভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে। মাঝে মাঝে আমরা দিকভ্রষ্টের মতো উৎসবের পানে ছুটি। একবার নেপালে যাচ্ছিলাম ঈদের আগে। একজন জিজ্ঞেস করলেন, ওখানে কি গরু পাবেন? বললাম, ওটিকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। উনি এদিক-ওদিক তাকালেন ভাবলেন, প্লেনে যথেষ্ট পরিমাণে যাত্রী না পাওয়ায় গরুও সঙ্গে নিতে দিচ্ছে। উনি বললেন, গরুটিকে দেখছি না তো? নিজের দিকে অঙুলি নির্দেশ দিয়ে বললাম, আমিই সেই পশু। মনের পশুকে কোরবানি দেব। ভদ্রলোক অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। কাঠমু-ুতে গরুর দেখা নেই। মসজিদ মুসল্লিতে ভর্তি, তাদেরকে আর জিজ্ঞেস করতে পারলাম না গরুর কথা। এমনিতেই হতদরিদ্র ওরা। গায়ের পিরহানটি এবং মলিন টুপিটি দেখে বুঝলাম তারা কত দরিদ্র। গরু সেখানে বিলাসিতা।
নিজ পুত্র কোরবানি করা কি যা তা কথা? আমরা কি ইব্রাহিমের বংশধর? আমরা কি কোরআনকে সামনে রেখে পথ চলি? আমরা কি প্রিয় নবী [সা.]-এর বিদায় দিনে হজের কথাগুলো রোজ একবার করে স্মরণ করি? যদি করতাম, পেতাম ঈদ, সত্যিকারের কোরবানির আনন্দ।
লেখক : সাহিত্য-সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন