শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)

মাওলানা মুহাম্মদ রেজাউল করিম | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 

ভুমিকা : অসভ্যতা-বর্বরতার ঘোর তমি¯্রায় নিমজ্জিত মানবজাতিকে আলোর আভায় উদ্ভাসিত করার লক্ষ্যে ধরা বক্ষে মহানবী (স.)এর আগমন । দিবাকর যেমন গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে পৃথিবীকে আলোকিত করে তোলে; তেমনি মহানবীর পরশে মানবতা ফিরে পায় সত্যের দিশা ও সুন্দরতম আদর্শ। নবীজির তিরোধানের পর তাঁর অবর্তমানে সাহাবায়ে কিরাম,তাবেয়িন ও তাবঈ তাবেয়ীন এবং আল্লাহর মহান আউলিয়ায়ে কিরাম নবীজির সুন্নাহ ও সুন্দরতম জীবনাদর্শ প্রচার-প্রসারে আজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মহান আধ্যাতিœক প্রাণপুরুষ, গাউসে জামান,আলে রাসূল, আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রঃ) এ সকল মরদে মুজাহিদদের অন্যতম।
জন্ম ও বংশ পরিচয় ঃ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ, পিতা-সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.)। তিনি ১৩৩৬ হিজরী, মোতাবেক ১৯১৬ খৃ.পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হাজারা জেলার সিরিকোট শেতালু শরীফে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সৈয়্যদ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। বংশ পরম্পরায় তিনি প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র চল্লিশতম অধঃস্তন পুরুষ। আল্লাহর অলীরা হলেন মহান রাব্বুল আলামীন এর বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। জন্মের পূর্ব থেকে তাদের কারামত প্রকাশিত হতে থাকে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। যেমন অলীকুল সম্রাট বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) মহিয়সী মায়ের গর্ভেই পবিত্র কুরআনের আঠার পারা মুখস্ত করে ফেলেছেন। একদা আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) আল্লামা তৈয়্যব শাহ (রহ.)’র জন্মের পূর্বে আব্দুর রহমান চৌহরভী (র.)’র নিকটে গেলে তাঁর পৃষ্ঠদেশে শাহাদাত আঙ্গুলী রেখে ঘর্ষণ করতে করতে বলেন- ইয়ে পাক চীজ তুম লে লাও অর্থাৎ এ’ পবিত্র বস্তু তুমি নিয়ে যাও’। মূলত: এটি ছিল হযরত সিরিকোটি (রহ.)’র বুযুর্গ বিবির গর্ভে স্বনামধন্য সন্তান তৈয়্যব শাহ্ (র.)’র শুভাগমনের ইঙ্গিত। ১৯১৬ খৃ. এক শুভ সময়ে তাঁর জন্ম গ্রহণের পর নাম রাখা হয় ‘তৈয়্যব’পুত- পবিত্র।
শিক্ষা জীবন : তিনি স্বীয় শ্রদ্ধেয় আব্বাজান কুতুবুল আউলিয়া, জামেয়ার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.) এর সান্নিধ্যে থেকে ১৯২৭ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন মাজিদ হিফয সম্পন্ন করে ইলমে ক্বিরাতে বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলামী শিক্ষার সকল স্তরে গভীর প্রজ্ঞা, অসাধারণ পান্ডিত্য ও দক্ষতা অর্জন করেন। ইলমে হাদিস ও তাফসীর শাস্ত্রের সুগভীর ব্যাখ্যা, তত্ত¡ ও তথ্য বিশ্লেষণ, সুক্ষè মর্মোদঘাটনে ব্রতী হন। এ’ কাজে তিনি তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন, মুফাস্সির, মুহাদ্দিস আল্লামা সরদার আহমদ লায়লপুরী (রহ.) এর সান্নিধ্যে থেকে সবিশেষ সফলতা অর্জন করেন। ১৯৪৩ সালেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সফল সমাপ্তি ঘটে।
স্বভাব-চরিত্র : মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এরশাদ করেছেন,‘‘উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য আমি প্রেরিত’’। নবীজীর আওলাদ ও ত্বরীক্বতের রাহবার হিসাবে গাউসে জামান আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রা.) এর জীবনে যাবতীয় সদগুণরাজির বিকাশ ঘটেছিল। সততা, সদাচরণ, নৈতিক দৃঢতা, মানবতা, হৃদ্যতা, বদান্যতা,ন্যায়ের মুর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি। যাবতীয় অনৈসলামিক কার্যকলাপ, ঈমান-আক্বীদা বিধংসী মতবাদের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তৃতা, তকরীর, লিখুনি সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কুরআনে এরশাদ হয়েছে,‘‘তোমরা উত্তম জাতি, তোমাদেরকে নির্বাচিত করা হয়েছে, এ জন্য যে, তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিবে, অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে’’।
বাইয়াত গ্রহণ ও খিলাফত অর্জন : বাতেনী ইলম মাখন সদৃশ আর যাহেরী ইলম দুগ্ধতুল্য। দুধ ছাড়া মাখনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। পীর-মোর্শেদ হতে শিক্ষাপ্রাপ্ত না হয়ে প্রকৃত মানব হওয়া কঠিন বিধায় এর বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতঃ তিনি একজন ইনসানে কামিল হওয়ার মহান মানসে স্বীয় পিতা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.)’র হাতে বাই‘য়াত গ্রহণ করেন। বাই‘য়াত গ্রহণের পর নিজকে ব্যস্ত রাখলেন আধ্যাত্মিকতার বিশাল জগতে। ইলমে শরীয়তের বাতেনী (আধ্যাত্মিক জ্ঞান)’র কিস্তি পূর্ণগতিতে চালাতে লাগলেন। ইবাদাত-বন্দেগী, যিক্রি আযকার, মোরাকাবা, মোশাহাদা ও রিয়াযাত এর মাধ্যমে সুলূকিয়াতের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন হন। আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ (র.)’র বাংলাদেশ সফরে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) নিজের যোগ্য সন্তানকে ত্বরীকতের মহান দায়িতভার তুলে দেওয়ার মানসে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সাথে নিয়ে আসেন। অবশ্য তিনি ১৯৪২ সালে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে আগমন করেন। চট্টগ্রামস্থ রিয়াজুদ্দীন বাজারের মরহুম শেখ আফতাব উদ্দীনের ব্যবসা কেন্দ্রে একটি ধর্মীয় প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। তখন বুজুর্গ পিতা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) উপস্থিত সকল পীর ভাইয়ের সামনে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)-কে খিলাফত দানে ধন্য করেন এবং তাঁকে ৪২ বছর বয়সে ‘খলীফায়ে আযম’ উপাধিতে ভূষিত করে সিলসিলায়ে আলীয়া কাদিরিয়ায় তদীয় স্থলাভিষিক্ত করেন। বিশ্বের ১৬৫ কোটি মুসলমানের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি মুসলমান ক্বাদেরীয়া ত্বরীকার অনুসারী। বিশ্বব্যাপী কাদেরীয়া ত্বরীকা বিস্তারে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)এর অবদান অনস্বীকার্য।
ইসলামী শিক্ষা বিস্তার: প্রিয় নবী (স.) এরশাদ করেন- ‘শিক্ষার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর উপর ফরয’। অন্যত্র তিনি বলেন- ‘তোমরা দীনী ইলম শিক্ষা কর এবং তা মানুষকে শিক্ষা দাও’। জ্ঞানার্জন, চর্চা ও অধ্যয়ন করা মহানবী (দ.)’র উপর অবর্তীণ সর্বপ্রথম ওহীর অর্ন্তভূক্ত। এরশাদ হচ্ছে- ‘হে নবী আপনি পড়–ন। অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও অজ্ঞতা মানবজাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এদেশে পূঁজিবাদী ও ভোগবাদী শিক্ষা ব্যবস্থার যাতাকলে মুসলিম জাতির ঈমান আকিদা নৈতিক চরিত্র ও স্বভাব, ইসলামী, তাহযীব, তমুদ্দুন, শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইসলাম বিদ্বেষী ও নবীদ্রোহীদের চক্রান্তের শিকার।
(চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন