শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উত্তরাঞ্চলে চাষবিপ্লব

সরে যাচ্ছে বন্যার পানি জেগে উঠছে ফসলি জমি

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 উত্তরের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীর মধ্যে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, যমুনা, করতোয়া, নাগর, বাঙালী, আত্রাই, ছোট যমুনায় এখন ভাটার টান। কোনটায় দ্রæত, কোনটায় ধীরলয়ে নামছে পানি। ফলে জেগে উঠছে চর, জেগে উঠছে বানের পানিতে বয়ে আসা পলিপড়া ফসলের জমি। একটুও দেরি না করে সেই পলি পড়া জমিতে চলছে চাষাবাদের প্রস্তুতি। এসময়ের মওশুমি আমন ধানের চাষবাসই প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থাপনার ঐতিহ্য হলেও ভিতরে ভিতরে বদলে গেছে উত্তরের কৃষির চালচিত্র। অর্থাৎ বোরো ও আমন ধানের মওশুমি চাষাবাদ, বা ধান, পাট, আখ ইত্যাদি চাষাবাদের মধ্যেই সীমিত নয়। এখন যাবতীয় প্রধান প্রধান প্রচলিত কৃষি পণ্যের পাশাপাশি অনেক অপ্রচলিত পণ্যও পরিণত হয়েছে চাষীদের আয়ের-জীবীকার অবলম্বন। ফলে প্রচলিত খরিফ ও রবি মওশুমের পাশাপাশি এখন বছর জুড়েই চাষাবাদ হচ্ছে, নেপিয়ার ঘাষ ও ধৈঞ্চা (গোখাদ্য ও জৈব সার), গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও শীতের সব সব্জী (মুলা, সীম, বরবটি, পালঙ শাক, পেঁয়াজ ইত্যাদী), কলা এবং পেঁপে।
তাই বন্যা বা বন্যা পরবর্তী সময়ে এখন আর শ্রমজীবী মানুষের ত্রাণের আশায় বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। উত্তরের কৃষি শ্রমিকরা এখন তাই বেকার বসে নেই কিছু না কিছু করছেই!
বগুড়ার যমুনা ও বাঙালী নদী তীরবর্তী উপজেলা সারিয়াকান্দির পৌর এলাকায় থানারোডের প্রায় কোয়ার্টার কিমি, এলাকা জুড়ে রোজ বসছে, গো-খাদ্যের হাট। এই হাট মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের হাটের চেয়ে কিছুমাত্র কম বেচাকেনা হচ্ছে না। এই হাটের রেগুলার পাইকারী ব্যাপারীদের একজন হলেন ইছব (ইউছুফ) মিয়া। বয়স ৫৫’র কম নয়। তিনি ছিলেন একজন ঠিকা শ্রমিক। রাজমিস্ত্রির যোগালদারীসহ হেন শ্রমঘন কাজ নেই যা তিনি করেননি। কিন্তু বন্যার সময় তিনি নেপিয়ার ঘাস ও ধানের খড়কে গোখাদ্য হিসেবে বেচাকেনাকেই বেছে নিয়েছেন জীবীকার অবলম্বন হিসেবে। আঁটি আঁটি করে সাজানো নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করার ফাঁকে ফাঁকে বললেন, ‘ওই ব্যান বেলাত উঠ্যা, নাওত চড়্যা গেছনু ধুনটের চরবিল্যা, ওহান থ্যা, ১৫ ট্যাহা আটি ঘাস কিন্যা আনছি, এটি বেচিচ্চি ৩০ ট্যাহা কর‌্যা, আল্লাহ ভালই চলাচ্চে (সেই সকালে উঠে নৌকায় চেপে ধুনটের চরে যেয়ে ১৫ টাকা আঁটি ঘাষ কিনে এখানে এনে বিক্রি করছি ৩০ টাকা আঁটি, আল্লাহ ভালোই চালাচ্ছেন)। শুধু ইছবই নয় ইছবের মতো এক থেকে দেড়শ শ্রমজীবী এখন গোখাদ্যের কেনা বেচার মাধ্যমে সংসারের হাল সচল রেখেছেন। একই হাটে অনেকেই গো-খাদ্য হিসেবে বেচতে এসেছেন শুকনো খড়ের পাশাপাশি একদম কাঁচা ধানের আটি।
মোহাম্মদ আলী নামের একজন গেরস্ত জানালেন, তার বাড়ি যমুনার বুকে ঢালার চরে। তিনি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে উত্তরে গাইবান্ধার বাদিয়াখালি থেকে দক্ষিণে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পর্যন্ত এলাকায় গিয়ে কাঁচা আউশ ধানের আঁটি বা পানির নিচে ডুবে থাকা কাঁচা ধানের গোছা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। তারপর নিজের এলাকায় কাঁচাপাকা ধান ছাড়িয়ে কাঁচা খড় বিক্রি করে থাকেন। শুকনো খড়ের চেয়ে কাঁচা খড়ই গরু খেতে পছন্দ করে বেশি। ফলে তিনি প্রতি আঁটি কাঁচা -আধাপাকা ধানের খড় বিক্রি করছেন ৫ টাকা করে। বন্যামুক্ত সময়ে যার দাম ২ টাকায় নেমে আসে।
কৃষি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, উত্তরাঞ্চলে এবার কমবেশি ৪৫ লাখ হেক্টরে চাষ হবে আমনের। বিলম্বিত বন্যার কারণে এবার যদি কিছু পরিমাণ কম জমিতেও চাষ হয় আমনের, তারপরও ফলন বেশি হবে ধানের। বেশি ফলনের কারণ হিসেবে কৃষি কর্মকর্তারা জানালেন, এবার জমিতে পর্যাপ্ত পলি পড়েছে। পানি ও সারের ব্যবহার কম হওয়ায় উৎপাদন খরচও কম হবে অনেক। গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় এবং নদীতে পানি না থাকায় আমনের জমিতেও সেচ দিতে হতো, ফলে উৎপাদন খরচ যেত বেড়ে।
এদিকে কৃষি বিভাগের পরিকল্পনার বাইরেও গোটা উত্তরাঞ্চলেই বিপুল পরিমাণ জমিতে বোরো মওশুমের পরপরই চাষ হয়েছে আউশ ধানের। কোথাও আউশ পেকেছে, কোথাও রয়েছে আধাপাকা ধান। এছাড়া যেখানেই উঁচু জমি থেকে পানি সরে যাচ্ছে, সেখানেই চাষীরা ব্যস্ততার সাথে লাগাচ্ছে লাউ, শসা, কুমড়োর বীজ, রোপণ করছে সংক্ষিপ্ত সময়ের ফসল লাল ও পালঙ শাক। যা ২ মাসের মধ্যেই উৎপাদন ও বিপণন শেষ করে আবার ওই জমিতে করা যাবে অন্য ফসলের চাষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন