প্রশ্ন : আত্মহত্যাকারীর শাস্তি কি পরোকালেও হবে?
উত্তর : নিজের মহামূল্যবান জীবন নিজে হত্যা করাই হলো আত্মহত্যা। যখন মানুষ সামাজিকভাবে অপমান অপদস্ত হয় কিংবা তার মনের ভিতরে থাকা দীর্ঘ দিনের পাহাড় সম কষ্টের ভার সহ্য করতে পারে না। তখন সে মুক্তির পথ হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া, শ্বশুরালয়ের যৌত‚কের জন্য শারীরিক মানসিক নির্যাতন, প্রেমে বা কু প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় অপমানিত হওয়া, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পাড়া, সামাজিকভাবে জুলুম নির্যাতনের শিকার হওয়া, পারিবারিক কলহ এবং অভাব অনটনকে কেন্দ্র করে প্রায়ই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। রশিতে ঝুলে, বিষ পানে, গলায় উড়না পেচিয়ে, পানিতে বা ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে, ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে অনেকে আত্মহত্যা করেন।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা একে অন্যের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। আর যে ঐ কাজ করবে সীমালঙ্ঘন ও অন্যায়ভাবে, আমি অচিরেই তাকে আগুনে প্রবেশ করাবো। আর সেটি হবে আল্লাহর জন্য সহজ।’ ( সূরা নিসা:২৯-৩০)। মহা মূল্যবান জীবন আল্লাহর দান। আল্লাহই বান্দার সবচেয়ে বেশি হিতাকাংখী। আল্লাহই বান্দার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবহিত। বান্দাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বোঝা কাউকে চাপিয়ে দেন না। সুতারাং নিজের জীবন নিজে হত্যা করা একটি মহাপাপ কাজ। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। আর ভালো কাজ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচারণকারীদেরকে ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারা:১৯৫)।
অভাবের তাড়নায় অনেকেই আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। সেই সাথে ছোট ছোট মাছুম বাচ্চাদের হত্যা করে ফেলেন। অনেকে সন্তান বিক্রিও করে ফেলেন। অভাব অনটন আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আর তোমরা দারিদ্রতার কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তোমাদেরকে রিযিক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না-তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করো।’ (সূরা আনআম:১৫১)।
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে।’ (সহীহ বুখারী: ৫৩৬৩)। অপর এক হাদিসে হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস লাগিয়ে বা গলা টিপে আত্মহত্যা করে, দোযখে সে নিজেই নিজেকে অনুরূপভাবে শাস্তি দিতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বর্শাবিদ্ধ করে আত্মহত্যা করে , দোযখে সে অনুরূপ বর্শাবিদ্ধ করে নিজেকে শাস্তি দিতে থাকবে।’ (সহীহ বুখারী: ১২৮১)।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন