আটকে দিয়েছে ২২টি ট্রাক
মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নিয়ে যাওয়া জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ত্রাণ বহরের ২২টি ট্রাক আটকে দিয়েছে পুলিশ। একই সাথে দলটির ত্রাণ দলের নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসকে হোটেলে যেতেও বাধা দেয় পুলিশ।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশের বাধার মুখে ত্রাণ বহর নিয়ে শরণার্থীদের অস্থায়ী ক্যাম্পে যেতে না পেরে বিএনপির প্রতিনিধি দলটি বিকাল ৩টার দিকে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হয়ে হোটেলে যাওয়ার পথেই পুলিশ মীর্জা আব্বাসের গাড়ি বহরকে আটকে দেয়।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ দলের প্রধান হিসেবে মীর্জা আব্বাস বলেছেন, ‘বিএনপি এখানে রাজনীতি করতে আসেনি, ত্রাণ দিতে এসেছিল। সেই ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়ে সরকার অপরাধ করেছে।’
ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়ে ‘জঘন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলো’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প গুলোতে যারা আছেন তাদের কোন গোসল নেই, পানি নেই, খাদ্য নেই, ওখানে মানবিক বিপর্যয় চলছে। ওখানে গেলে আমরা তা জেনে যাবো। তার জন্যই আমাদের সেখানে যেতে দেয়া হয়নি।’
মীর্জা আব্বাস জেলা প্রশাসন কর্মকর্তাদের উদ্বৃত করে সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপির ত্রাণগুলো সরকারের কাছে (জেলা প্রশাসন) জমা দিতে হবে। তারাই সেটা বিতরণ করবে! তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ত্রাণ কখনোই সরকারের কাছে জমা দেবো না। বিএনপি তো ডিসি ও আওয়ামী লীগের কথা মতো চলবে না। আমাদের ত্রাণ আমরাই দেবো।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে আমাদের ত্রাণ সিজ করতে পারে!’ তিনি পুলিশী বাধার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘ত্রাণ দিতে যাওয়ার সময় দেখলাম, ট্রাক আর চলে না! পুলিশ চালকের কাছ থেকে গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে চালকদের সরিয়ে দেয়। পরে চালকদের খুঁজে আনলে চাবি ফিরিয়ে দেয়া হলেও গাড়িবহরের সামনে পুলিশের একটি পিকআপ দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে।’
মীর্জা আব্বাস আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২৮ আগস্ট নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। অথচ সরকার সীমান্তে বর্ডার গার্ড মোতায়েন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ডুকতে বাধা দিয়েছে।’ তাঁর মতে, ‘বিএনপি রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পর সরকার প্রধান রোহিঙ্গাদের কাছে আসতে বাধ্য হয়েছেন।’
বিএনপির ত্রাণ দলটি ৯ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কক্সবাজার এসেছিলেন। এগুলোর মধ্যে ৯ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী ও সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে প্লাস্টিক সিট দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল।
এই তথ্য জানিয়ে মীর্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপির আগে ত্রাণের এতো বড় বহর নিয়ে কোন রাজনৈতিক দল রোহিঙ্গাদের কাছে আসেনি। বিএনপির আগে অন্য কোন রাজনৈতিক দল রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায়নি, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেনি।’
তিনি মনে করেন, ‘সরকার রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে পারবে, যথাযথ ভাবে মোকাবেলা করতে পারবে না।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) বলেছেন, মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবো, তাদের আবার নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তার মতে, যেখানে সবাই মিলে রোহিঙ্গাদের সাহায্যে নামা উচিত সেখানে বিএনপির ত্রাণ বিতরণে বাধা দেয়া হয়েছে। সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো।’ তিনি দাবি করেন, আজও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। জাতীয় পার্টি বিতরণ করতে পারলে বিএনপি কেনো পারবে না। এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। এরশাদ পারলে মীর্জা আব্বাস কেনো পারবে না!
ওই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুুদু, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির খান জুয়েল প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন