প্রশ্ন : ‘হজ্জে মাবরূর’ বা মকবূল হজ্জ কি?
উত্তর : আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ‘হাজ্জে মাবরূর’ বা গ্রহণযোগ্য হজ্জ। হজ্জ শব্দটির অর্থ হচ্ছে, উদ্দেশ্য করা, ইচ্ছা করা, গমণ করা, হজ্জ করা। পারিভাষিক অর্থে- “সুনির্দিষ্ট কর্মের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সময়ে, সুনির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানের ছফর করার নাম হজ্জ।” জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে মক্কার প্রান্তরে ‘আরাফাত’ নামক স্থানে অবস্থান করা ও এর আগে-পরে কাবাঘর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা, মিনায় অবস্থান করা, মিনার জামারাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা, হজ্জের কুরবানী বা হাদী জবাই করা, মাথা মুন্ডান, এ সকল কর্ম সম্পাদনকালে আল্লাহর যিকির/দোয়া করা ইত্যাদি হজ্জের কার্যসমূহ।
উমরাহ্ হলো সংক্ষিপ্ত বা ছোট হজ্জ। বছরের যে কোন সময়ে নির্ধারিত স্থান থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছে নির্দিষ্ট নিয়মে আল্লাহর স্মরণের সাথে সাত বার কাবাঘর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার প্রদক্ষিণ করা এবং তারপর মাথার চুল মুন্ডানো বা ছোট করার নাম হল উমরা। সম্পদশালী হলে জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয এবং জীবনে একবার উমরাহ করা ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’ বা মতান্তরে ‘ওয়াজিব’।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন- “মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্য-কর্তব্য। মহানবী (স) ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিবেদিতভাবে, সর্ব প্রকার পাপ, অন্যায় ও অশ্লীলতামুক্ত হয়ে হজ্জ আদায় করলো, সে নবজাতক শিশুর অনুরূপ নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরল।” প্রিয়নবীর (স) আরেকটি হাদীসে এসেছে-
“তোমরা হজ্জ ও উমরাহ পাশাপাশি সম্পাদন কর। কেননা, এ দু’টি দারিদ্র ও পাপ দূরীভূত করে।” বাহ্যিকভাবে আমরা দেখি এবং মনে করি হজ্জ বাবত ২/৪ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেলে আমাদের অর্থ-সম্পদ কমে যাবে। অথচ দয়াল নবী (স) বলছেন: না, অর্থ- সম্পদ বেড়ে যাবে, দারিদ্র্য হ্রাস পাবে! সুতরাং আমাদের নবীর কথায় বিশ্বাস করতে হবে এবং কাল-বিলম্ব না করে হজ্জে যেতে হবে। আরেকটি হাদীসে নবীজী (স) বলেন- “যাকে বাহ্যিক কোনো সমস্যায় বা অত্যাচারী শাসক বা অপরাগকারী কোনো রোগ হজ্জে যেতে বাধা দেয়নি। তারপরও সে হজ্জ করল না। তাহলে এমন ব্যক্তি ইহুদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে মারা যাক, সমান কথা।” অর্থাৎ হজ্জ না করার দরুন সে যেন বাস্তবে ইহুদী-খ্রিস্টানের অনুরূপ হয়ে গেল।
আরেকটি হাদীসে নবীজী (স) বলেন- “যে ব্যক্তি হজ্জের ইচ্ছে করল (ফরয হয়েছে বিধায়) সে যেন তাড়াতাড়ি করে।” প্রিয় পাঠক! নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদির ন্যায় হজ্জও একটি ফরযে-আইন ইবাদত। যখন যে বয়সেই তা ফরয হোক, যথা শ্রীঘ্র সম্ভব তা আদায় করতে হবে। প্রকৃত সত্য কথা হলো, হজ্জ যৌবনকাল ও শক্তির সময়ের ইবাদত। একজন বৃদ্ধ মানুষ সঠিক ভাবে হজ্জ আদায় করতে পারেন না। কারণ, সম্পূর্ণ বৈরি আবহাওয়ায়, লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ের মধ্যে মাইলের পর মাইল পথ হাটা, দৌড়ানো, কঙ্কর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি ইবাদতের সুন্নাতগুলো রক্ষা করা তো পরের কথা ওয়াজিবগুলো পর্যন্ত ঠিক রাখা বৃদ্ধ বয়সে কষ্টকর। তাই যুবক বয়সের হজ্জই প্রকৃত ও পরিপূর্ণ হজ্জ হতে পারে।
নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি ফরয ও ওয়াজিব বিধান যখন রোগ-ব্যাধি, দূর্ঘটনা-দুর্বিপাক জনিত কোনো কারণে সময় মত আদায় করা সম্ভব না হয় তখন সে ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হচ্ছে মৃত্যুর পূর্বে আপনজনকে এই মর্মে ওসিয়্যত করে যেতে হবে যে, আমি অমুক ফরয বা ওয়াজিব দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। তাই তোমরা আমার পক্ষ থেকে আমার রেখে যাওয়া সম্পদ দ্বারা তা ক্বাযা করিয়ে নিবে বা কাফ্ফরা আদায় করে দিবে। ঠিক তদ্রুপ ফরয হজ্জ যথাসময়ে আদায় করা সম্ভব না হলে, মৃত্যুর পূর্বে ওয়ারিসদের বলে যেতে হবে যে, তোমরা আমার পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করিয়ে নিবে। নতুবা পরকালীন জবাবদেহিতা থেকে বাঁচা যাবে না। যেমন- একটি হাদীসে এসেছে-
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবীজীর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করল, আমার বোন হজ্জ করার মান্নত করেছিল, অতঃপর সে মারা গেল! (এখন কী করণীয়?) নবীজী (স) বললেন: যদি তার কাছে কারও ঋণ প্রাপ্য থাকতো তাহলে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না? লোকটি জবাবে বলল, হ্যাঁ। নবীজী (স) বললেন, সুতরাং তুমি তার পক্ষ থেকে (বদলীর মাধ্যমে) আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করে দাও! তাঁর পাওনা অধিক পরিশোধযোগ্য।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতী মোঃ আবদুল্লাহ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন