শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলীর আশ্বাসেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে সংশয়

শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো বিমান চলাচলে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা প্রতাহার আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ

উমর ফারুক আলহাদী : | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেড় বছরে এ খাতে শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আয় কমেছে শত কোটি টাকা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পণ্যবাহী কার্গো বিমান সরাসরি যুক্তরাজ্যে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বিষয়টি এখনো আলোরমুখ দেখেনি। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক পর্যায় শুধু দফায় দফায় বৈঠকের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রতাহারের সিদ্ধান্ত আটকে আছে। বৃটিশ প্রতিনিধিরা বার বার বলেছেন,খুব দ্রুত এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। আবারো এমন আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা সফররত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ বিষয়ক বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী এমপি। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং কার্গো বিমানে পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তা সন্তোষজনক হলেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। এ ব্যপারে বৃটিশ এভিয়েশন সেক্টরের নিরাপত্তা শাখার ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন।
দুই দিন আগে ঢাকায় সফররত বৃটিশ এমপি রুশনারা আলী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তবে এ আশ্বাসের পরেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিভিল এভিয়েশন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের একাধিক কর্মকর্তা। কারণ এর আগেও রুশনারা আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে স্বাক্ষাতকালে এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন গতবছর ডিসেম্বর মাসে। প্রায় দেড় বছর পরেও নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়াতে শুধু বিমানের আয়ই কমছে না,দেশের ভাবমর্যাদাও মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,গত দেড় বছরে বছরে বিমানের কার্গো পরিবহন খাতে আয় কমেছে প্রায় শত কোটি টাকা। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গত বছরের ৮ মার্চ ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্য। এর পর জুনে বন্ধ হয় জার্মানিতে কার্গো পরিবহন। এর আগে ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে। এসবের প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কার্গো পণ্য পরিবহন খাতের আয়ে। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে এয়ারলাইনসটির আয় কমেছে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এয়ারলাইনসটি উড়োজাহাজের কার্গো হোল্ডের মাধ্যমে ৪০ হাজার ৯১১ টন পণ্য পরিবহন করে। এ সময়ে এ খাত থেকে বিমানের আয় হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৯২ কোটি টাকা। সে হিসাবে কার্গো পণ্য পরিবহনে এয়ারলাইনসটির আয় কমেছে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। কার্গো পণ্য পরিবহন খাতে আয় কমার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ রুটে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা বলেন,নিরাপত্তা ঝুকিঁর কথা বলে আকাশ পথে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি কার্গো সার্ভিসে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখনো যুক্তরাজ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পণ্যবাহী বিমান প্রবেশ করতে দেযা হচ্ছে না। একই কারণে অস্ট্রেলিয়াতেও কার্গো সার্ভিসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্গো সার্ভিস থেকে বিমানের আয় কমেছে। তবে সামগ্রিকভাবে বিমান মুনাফা করেছে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে মুনাফার পরিমাণ আরো বাড়ত। সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে চেষ্টা করছে। সেটি প্রত্যাহার হলে বিমানের আয় আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে বিভিন্ন গার্মেন্টস পণ্য উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোয় যায়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ওষুধ, সবজি, শুকনো খাবার, ফলমূলও পাঠানো হয়। বিভিন্ন আমদানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও বিমানের কার্গোসেবা ব্যবহার করা হয়। বিশেষত চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান থেকে মোবাইল ফোন, গার্মেন্টস পণ্য, কাপড়, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিমান কার্গোসেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়া ইউরোপ থেকে টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশও আসে এবং ভারত ও চীন থেকে আসে ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসে ব্যক্তিগতভাবে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্য।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পুনরায় চালুর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। এনিয়ে কূটনৈতিক মহলেও আলোচনা চলছে।
সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যদূত ও দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য রুশনারা আলীর সৌজন্য সাক্ষাতেও বিষয়টি উঠে আসে। সে সময় ঢাকা-লন্ডন কার্গো ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। জবাবে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন রুশনারা আলী। তারপর এ নিয়ে অনেক দেন-দরবার হয়েছে কূটনৈতিক পর্যায়ে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি এখন পর্যন্ত।
এর আগে গত বছর ১৭ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ফরেন ও কমনওয়েলথ ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক জনাথন এলেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন বেøকও ছিলেন ওই প্রতিনিধি দলে। সে সময় যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক আরোপিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেন রাশেদ খান মেনন। ওই নিষেধাজ্ঞার পর গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্থাপনকৃত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি সম্পর্কে অবহিত করে তিনি জানান, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সমপর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘রেড লাইন সিকিউরিটিজ’ গত বছরের মার্চ থেকে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। এর প্রত্যুত্তরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার জানান, যুক্তরাজ্য সরকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ ব্যাপারে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে বলেও সে সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি) বিভাগের দুই সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি দল শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করে দলটি।
এখন বিমানবন্দরের তিনটি স্থরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনটি স্থর হচ্ছে- অ্যাডভাইজরি স্তর, সুপারভাইজরি স্তর এবং অপারেশনাল স্তর।
এ স্তরগুলোতে যথাযোগ্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার পর ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান তাদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেবে বলে সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন