বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক বা গেøাবাল কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্সে(জিসিআই) বাংলাদেশের অবস্থান সাত ধাপ এগিয়ে ৯৯তম স্থানে উঠে এসেছে। সূচকে অর্ন্তভুক্ত বিশ্বের ১৩৭ দেশের মধ্যে গত বছর ১০৬তম অবস্থানে ছিল। বাংলাদেশের ৮৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর মতামত জরিপের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরী করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশ এই ইনডেক্সে একশ’র মধ্যে জায়গা করে নিতে সক্ষম হল। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গত বছর বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা লেবানন, ডমিনিকান রিপাবর্লিক ও এল সালভেদরের পিছিয়ে পড়ার কারণে সূচকে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে বলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক পরিচালিত এই জরিপ কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে। সাত ধাপ অগ্রগতি ঘটলেও জরিপে প্রাপ্ত নম্বর গত বছরের চেয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি খুবই সামান্য। গত বছর বাংলাদেশের নম্বর ছিল ৩.৮ এবার তা বেড়ে ৩.৯ হয়েছে। দেশের সরকারী -বেসরকারী প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা , যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে রেখে বিশ্বের দেশগুলোর তুলনামূলক এই জরিপকে বিনিয়োগকারিরা বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে।
বরাবরের মত এবারো বিদ্যমান দুর্নীতিকে গেøাবাল কম্পিটিটিভনেসে বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কয়েকটি দেশের পিছিয়ে পড়ার কারণে এই অগ্রগতিকে বড় করে দেখার সুযোগ না থাকলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বাংলাদেশের সক্ষমতার সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ছাড়াও প্রতিবছরই বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে এ ধরনের ইনডেক্স প্রকাশিত হচ্ছে এবং এসব ইনডেক্সে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতা সম্পর্কে প্রায় একই ধরনের চিত্র ও সুপারিশ পাওয়া গেলেও মূল সমস্যাগুলো উত্তরণে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়না। এবারো প্রাতিষ্ঠানিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতিকে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির মূল অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সস্তা শ্রমশক্তি এবং কৃষিতে বাম্পার ফলনের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকে বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটেনি। সরকারের সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মতপার্থক্য সত্তে¡ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ থেকে ৭’র মধ্যে অবস্থান সন্তোষজনক বলেই গণ্য হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে সরকার ৭.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করলেও বিশ্বব্যাংকের মতে তা ৬.৪ এর বেশী হবেনা। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক(এডিবি)র হিসেবে এবারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশ প্রিডিক্ট করা হয়েছে। তবে যে সকল শর্তসাপেক্ষে এই প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে তা এখনো পুরোপুরি অনুপস্থিত। উপরন্তু এবার হাওরে অকালবন্যা ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বন্যায় ফসলহানির বিরূপ প্রভাবও জাতীয় অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে।
সামগ্রিক বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতি সঞ্চার করা অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ থাকতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সমস্যাগুলো দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা থাকলেও সরকার এই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে অহেতুক সময় ক্ষেপণ, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া, মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় ইত্যাদি প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দুর্নীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতাকে অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম অন্তরায় হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশে বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদী বন্ধ্যাত্ব এবং তৈরী পোশাক রফতানী খাত ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাবের পেছনেও আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা, সন্ত্রাসী হামলার মত ঘটনাগুলো ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হয়। এসব নেতিবাচক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ খুবই জরুরী। বিশেষত: সকল দলের অংশগ্রহনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ করতে না পারলে বৈশ্বিক সক্ষমতাসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অসম্ভব হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন