ছাড়পত্র ইস্যুতে স্থবিরতা : কর্মকর্তাদের মাঝে চাপা অসন্তোষ
ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমনে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা রেকর্ড গড়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। সরকারী বিধী তোয়াক্কা না করে এসব কর্মকর্তা প্রতি মাসেই শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও গবেষণার নামে বিদেশে সফরের যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বছরে একজন কর্মকর্তা তিন বারের বেশি বিদেশে ভ্রমন করতে পারেন না। কিন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আট মাসে সাত বার বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আবার কেউ আট মাসে ছয় বার বিদেশে ভ্রমনে যাচ্ছেন। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজ কর্মে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। ওপর মহলের আর্শিবাদ পুষ্ট হয়েই এসব সুবিধাবাদী কর্মকর্তা দফায় দফায় বিদেশে সফরে যাচ্ছেন। অথচ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বছরে এক বারও বিদেশে সফরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাঝে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিদেশে ভ্রমনের প্রতিযোগিতা কেন কার স্বার্থে বাড়ছে তা’ দেখার কেউ নেই। বিদেশ ভ্রমনে অতিউৎসাহী এসব কর্মকর্তা ঘন ঘন বিদেশে গিয়ে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে কিনা তা’কেউ কোনো দিন খতিয়ে দেখেননি। এনিয়ে নানা মুখ রোচক গল্প শোনা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত দীর্ঘ চার বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। উল্লেখিত শ্রমবাজার চালুর ব্যাপারে বিদেশে ভ্রমন পিপাষু কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার দৌঁড়-ঝাপ চোখে পড়েছে না। মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্রক্রিয়ায় দশ সিন্ডিকেট শ্রমবাজার একচেটিয়া দখল করে রেখেছে। এতে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মালয়েশিয়ায় সফরে গিয়ে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি’গুলোর কর্মী প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দশ লাখ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। গত জানুয়ারী মাস থেকে গত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ৬২ হাজার ৫শ’ ১২জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান শাখায় জনবল কম থাকায় বিদেশ গমনেচ্ছু হাজার হাজার কর্মীর ছাড়পত্র ইস্যুতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিকরা । কর্মসংস্থান-শাখা-১ ও কর্মসংস্থান শাখা-২-এর দায়িত্ব পালন করছেন উপ-সচিব ড. কামরুন নাহার। কর্মসংস্থান শাখা-৩ ও কর্মসংস্থান শাখা-৪-এর দায়িত্ব পালন করছেন উপ-সচিব বেগম শুভা শাহানাজ। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ছাড়পত্রের ফাইল উপস্থাপন করতে উল্লেখিত দুই মহিলা কর্মকর্তাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন কর্মসংস্থান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা উপ-সচিবদ্বয় একাধিক মিটিংয়ে অংশ নেয়ায় কর্মসংস্থান শাখায় শত শত ফাইল যথাসময়ে উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ছাড়পত্র ইস্যুতে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যথা সময়ে ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড হাতে না পাওয়ায় অনেক বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের সেবা নিশ্চিতকরণে উক্ত শাখায় আরো দক্ষ জনবল নিয়োগ জরুরী হয়ে পড়েছে। বায়রার একাধিক সূত্র এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখিত কর্মসংস্থান শাখায় আরো দু’জন উপ-সচিবকে নিয়োগ দেয়ার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি’র পক্ষ থেকে দাবী তোলা হলেও তা’ কেউ আমলে নিচ্ছে না। এ নিয়ে জনশক্তি রফতানিকারকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিদেশে ঘন ঘন সফরে যে সব কর্মকর্তা এগিয়ে রয়েছেন তারা হচ্ছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা উন্নয়ন তহবিল-এর ডেস্ক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত সচিবের দোর্দান্ড প্রতাপশালী পিএস আরিফ আহমেদ ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব বদরুল আরেফিন । গত ২৯ জানুয়ারী থেকে ৩ ফেব্রæয়ারী সউদী আরবে টিম লিডার হিসেবে সফরে যান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব বদরুল আরেফিন। জিও নং-৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৫.-৭৫-তাং-১৫-০১-২০১৭। গত ১ মার্চ থেকে ২ মার্চ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বুদাপেষ্ট প্রসেস মিটিংয়ে অংশ নেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সচিবের পিএস আরিফ আহমেদ।
জি ও নং-৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৩.১৪.২০১ তাং ১৬-২-১৭ ইং। গত ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারী ওমানের মাস্কাটে মিটিংয়ে অংশ নিতে যান যুগ্ন সচিব বদরুল আরেফিন। জি ও নং-৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৫.১৬.২১২ তাং ২০-২-১৭ ইং। গত ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত মালদ্বীপে মিটিংয়ে অংশ নিতে যান যুগ্ন সচিব বদরুল আরেফিন ও সচিবের পিএস আরিফ আহমেদ। জি ও নং-৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৫.১৬.৫০২ তাং ০৪-৫-১৭ ইং। গত ২ জুলাই থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জর্ডানে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে যান সচিবের পিএস আরিফ আহমেদ। জি ও নং ৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৫.১৬.৭৭২ তাং-১১-৭-১৭ ইং। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত মিশরের রাজধানী কায়রো স্ট্যাডি ট্যুরে যান সচিবের পিএস আরিফ আহমেদ। জি ও নং ৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৬.১৬.৩২৭ তাং২৪-৮-১৭ ইং। গত ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সচিবের সাথে নতুন শ্রমবাজার সন্ধ্যানে রাশিয়ার মস্কো যান সচিবের পিএস আরিফ আহমেদ। জি ও নং ৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৫.১৭.১০১৮ তাং১৪-৯-১৭ ইং। গত ৩ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত তিউনিশিয়ায় ইউএনডিপি’র প্রোগ্রামে যান যুগ্ন সচিব বদরুল আরেফিন। জি ও নং ৪৯.০০.০০০০.০১৫.০৫.০০১.১৭.১০৩৭ তাং২০-৯-১৭ ইং। এছাড়া আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, ডাটা কালেকশন ও শ্রম বাজার মনিটর করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের দলনেতা হিসেবে সচিবের পিএস আরিফ আহমেদ আর্জেন্টিনা এবং যুগ্ন সচিব বদরুল আরেফিন একই প্রোগ্রামে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের দলনেতা হিসেবে স্পেন যাওয়ার কথা রয়েছে। জি ও নং যথাক্রমে ৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৫.১৬.১০৮৫ তাং ২৮-৯-১৭ ইং এবং জি ও নং ৪৯.০০.০০০০.০১৫.২৫.০০৫.১৬.১০৮৬ তাং ২৮-৯-১৭ ইং। ঘন ঘন বিদেশে সফরে শ্রমবাজার সম্প্রসরণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব বদরুল আরেফিন রাতে ইনকিলাবকে বলেন, এই বছর ৬/৭ বার বিদেশে যাইনি চার বারের বেশি যাইনি,আপনি একটু খবর নিয়ে দেখেন ক’বার বিদেশে গিয়েছি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অদূরের বাসায় প্রায় প্রতিদিন অফিস ফেলে দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যান এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু বলেননি যুগ্ন সচিব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন