সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে কেউ বিদেশে গেলে তার এক মাস আগে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। সরকারি বা ব্যক্তিগত সফরের ক্ষেত্রে নিয়ম মানছেন না প্রশাসনের ক্ষমতাবান সচিবরা। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় সচিবদের ভ্রমণসূচি বাধ্যতামূলকভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সচিবদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একাধিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর এসেছেন। এর পরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সকল সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের সিনিয়র সচিব/সচিবগণের ব্যক্তিগত কিংবা দাফতরিক কাজে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে ভ্রমণসূচি যথাসময়ে এ বিভাগে (মন্ত্রিপরিষদ) প্রেরণ করা হচ্ছে না। এতে রাষ্ট্রাচারসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী দেশের ভেতরে দাফতরিক বা ব্যক্তিগত যে কোনো সফরে গেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা ও রিপোর্ট অনুবিভাগে সচিবদের ভ্রমণসূচি জানাতে হয়। আর বিদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হয়। অনেক সচিব এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ঠিকমতো জানালেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানান না। এতে সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সচিবদের অবস্থান সম্পর্কে অন্ধকারে থাকে এ বিভাগ। এই সমস্যা কাটাতেই ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো মন্ত্রিপরিষদের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগকে অবহিত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে সরকারের সিনিয়র সচিব/সচিবগণের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সেহেতু দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে তার ভ্রমণসূচি এ বিভাগে (মন্ত্রিপরিষদ) প্রেরণ করা আবশ্যক।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়য়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর এসেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন সচিব বিদেশ ভ্রুমণ করেছেন তাদের তথ্য সরকার জানে না বলে বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই বছর সচিবদের বিদেশ সফরের তেমন আয়োজন ছিল না। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় কেউ কেউ সফর করছেন বা করবেন-এমন অবস্থায় আছেন। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সচিবদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একাধিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ ছাড়া মন্ত্রী ও সচিবরা একসঙ্গে যেন বিদেশ সফরে না যান, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও অনেকে এসব নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। অন্যদিকে কোনো কোনো সচিব একই মাসে একাধিকবার বিদেশ সফরে চলে যান। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেও এসব বিষয় ভালোভাবে দেখা হয় না। প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা বিদেশ সফরের বিপক্ষে নন। তারা চান, যে বিষয়ে যেই পর্যায়ের কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়া দরকার, তাদেরকেই যেন পাঠানো হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র ছাড়া বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ারের মধ্য পর্যায়ে থাকা কর্মকর্তাদের পাঠানো উচিত। যারা সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে সেবা দেয়ার সুযোগ পান। সচিবরা সর্বোচ্চ দুই-তিন বছর সেবা দেওয়ার সুযোগ পান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন