সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহযোগিতা করতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও আট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রিভিউ আবেদনের কাজে সহযোগিতা করতে কয়েক দিন আগে এ কমিটি গঠন করা হয়। গত ১১ অক্টোবর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ সার্টিফাইড কপি (সত্যায়িত) পেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আইন অনুযায়ী, রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে রিভিউ করার সুযোগ রয়েছে। এ হিসাবে আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রিভিউ আবেদন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ১ আগস্ট প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
এর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় গত ১০ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন- মামলার ফ্যাক্ট অব ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন ‘অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন।
রায়ে ‘জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তির' পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয় নাই', এমন বক্তব্যকে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ১৮ আগস্ট রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, রায়ের সত্যায়িত কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রায় ভালোভাবে পড়া হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই রিভিউ আবেদন করা হবে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে আনা সংবিধান সংশোধন বাতিলের এ রায় দিয়েছেন। এর পর কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা স্পষ্ট করা না হলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ প্রক্রিয়ার কাজ তারা ইতিমধ্যে শুরু করেছেন। আইনমন্ত্রী এর আগে সুপ্রিম কোর্টের এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন বলে সংসদেই জানিয়ে বলেছিলেন- তাতে তারা ‘কামিয়াব’ হবে বলে আশাবাদী।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়, যাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। বিলটি পাসের পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ৯ আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল দেন। রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
২০১৬ সালের ৫ মে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেন হাইকোর্টের তিন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ৮ মে আপিল বিভাগের ‘ফুল বেঞ্চে’ শুনানি শুরু হয়। সব মিলিয়ে ১১ দিন রাষ্ট্র ও রিট আবেদনকারীর বক্তব্য শোনেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা। পাশাপাশি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর বক্তব্যও শোনেন আপিল বিভাগ। এরপর গত ৩ জুলাই হাইকোর্টের দেয়া রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ (বাদ দিয়ে) করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ‘সর্বসম্মতভাবে’ খারিজ করে বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গত ১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এর কিছু পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন