শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নোয়াখালীতে হামলা মামলায় জর্জরিত বিএনপি

বিশেষ সংবাদদাতা, নোয়াখালী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে হামলা মামলায় ক্লান্ত বিএনপিবিএনপি’র দূর্গ হিসেবে খ্যাত নোয়াখালীর একাধিক আসনে আবার অভ্যন্তরীণ সঙ্কটও চলছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আবদুর রহিম এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপি সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান জানান, ওয়ান ইলেভেন থেকে বর্তমান সময় পর্য্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্বে নয় শতাধিক মামলা ঝুলছে। এরমধ্যে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ডের সক্রিয় নেতাকর্মীসহ নব্বই শতাংশের বিরুদ্বে মামলা ঝুলছে। তারা আরো জানান, এসব মিথ্যা ও সাজানো মামলায় শত শত নেতা কর্মী জেল খেটেছে এবং অনেকে এখনো কারাবন্দী রয়েছে। প্রতিদিন নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে হামলা মামলার ভয়ে অনেকে আবার এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে।
১৯৯১ থেকে জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালীর ৬টি আসনে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ট আসন লাভ করে। ওয়ান ইলেভেন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের জামানায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করেনি। একই সময় বিভিন্ন মামলায় সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি তৃণমূল সমন্বয়ক মো. সাহজাহান, সাবেক এমপি জয়নুল আবদীন ফারুক, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি বরকত উল্লা বুলু কারাবন্দী হলে মাঠ পর্যায়ে নেতা কর্মীরা দারুণভাবে হতাশ হন। নোয়াখালীর চাটখিল আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ন-মহাসচিব ও সাবেক এমপি ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মাঝে মধ্যে এলাকা সফর ছাড়াও নিয়মিত নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেন। বেগমগঞ্জ আসনে বরকত উল্লা বুলু ও তার সহধর্মীনী শামিমা বরকত লাকি’কে এলাকায় তৎপর থাকতে দেখা যায়। বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মো. সাহজাহান প্রতি মাসে একাধিকবার তার নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী সদর-সূবর্ণচর আসন সফর করে । সফরকালে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক খোঁজ খবর ছাড়াও মামলায় জড়িতদের আইনী সহায়তা করেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ মাঝেমধ্যে তার নির্বাচনী এলাকা কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট আসন সফরে আসনে। এসময় তিনি নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেন ।
বিএনপি’র এসব ভিআইপি নেতৃবৃন্দ কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর নোয়াখালীতে বিএনপি শিবিরে আশার সঞ্চার হয়। এসময় জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়। বর্তমানে নোয়াখালীর ৬টি আসনের মধ্যে নোয়াখালীর সেনবাগ ও হাতিয়া আসনে দারুন সমস্যা বিরাজ করছে। সেনবাগ আসনে জয়নুল আবদীন ফারুক গ্রুপ বনাম বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। সেনবাগ উপজেলায় সংগঠনের বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে বিগত দুই দশক ধরে ফারুক বনাম কাজী মফিজ গ্রুপের মধ্যে দ্বন্ধ চলছে। এবার যুক্ত হয়েছে জয়নুল আবদীন ফারুকের মেয়ে তামান্না ফারুককে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি করা নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে সেনবাগ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে চরম বিতর্ক চলছে। এক পর্যায়ে জয়নুল আবদীন ফারুকের চাচাতো ভাই, এক সময়ের বিস্বস্থ সহচর ও জেলা বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে বিরোধ চরমে উঠলে ফারুক গ্রুপ আবদুল্লাহ আল মামুনের উপর হামলা চালায়। এতে মামুন গুরুতর আহতাবস্থায় রাজধানীতে কয়েকমাস চিকিৎসাধীন ছিল। এছাড়া সেনবাগ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিশাল একটি অংশ তামান্না ফারুককে সভাপতি করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। অপরদিকে অতীতের বিভিন্ন কর্মকান্ডে জয়নুল আবদীন ফারুকের প্রতি অনেকে নাখোশ। এসব কারনে অধিকাংশ নেতাকর্মী কাজী মফিজের নেতৃত্বে সমবেত হয়েছে। সেনবাগের কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ করেন যে, জয়নুল আবদীন ফারুকের স্বৈরাচারী আচরণ বিএনপির মত একটি বিশাল সংগঠনের জন্য মহা ক্ষতিকর। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে তিনি এবার নিজের মেয়েকে সভাপতি করে রাজতন্ত্র কায়েম করতে চাচ্ছেন। এসব বিষয় সূরাহা না হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র জন্য চরম পরাজয় অপেক্ষা করছে। মেঘনা দ্বীপ বেষ্টিত হাতিয়া আসনে নেতৃত্ব শূন্যতায় বিএনপি হিমাগারে অবস্থান করছে। বর্তমানে যারা উপজেলা দায়িত্বে রয়েছে তাদের অনেকের ইউপি চেয়ারম্যান হবার যোগ্যতা পর্য্যন্ত নেই বলে ক্ষুব্দ মাঠ পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন। মূলতঃ হাতিয়া বিএনপিকে যিনি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেন এবং তিনবার নির্বাচিত সাবেক এমপি প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের অনুপুস্থিতির কারনে হাতিয়া বিএনপি’র দৈন্যদশা। বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ভোটের হিসেবে চার সংখ্যা অতিক্রম করতে পারেনি অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে প্রকৌশলী ফজুলল আজিম এমপি নির্বাচিত হন। সংস্কার পন্থী অভিযোগে প্রকৌশলী ফজলুল আজিমকে বহিস্কার করা হলেও হাতিয়া বিএনপি’র ৯৯% কর্মী সমর্থক প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের নেতৃত্বে রয়েছে। বিগত ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রকৌশলী ফজলুল আজিম হাতিয়া নিজ এলাকায় গেলে হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে সম্বর্ধনা জানান। এরপর কয়েকটি তিনি এলাকায় অবস্থান করে নেতা কর্মীদের সাথে বেশ কয়েকটি ঘরোয়া বৈঠক করেন । এক কথায় হাতিয়া আসনে বিএনপির রাজনীতিতে প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের বিকল্প নেই। সাবেক এমপি প্রকৌশলী ফজলুল আজিম পূণরায় বিএনপিতে ফিরে যাবেন - নাকি আগামীতেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন সেটা জানা না গেলেও হাতিয়া উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা প্রকৌশলী ফজলুল আজিমকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন ক্ষুব্দ নেতাকর্মী ইনকিলাবকে জানান, অবিলম্বে প্রকৌশলী ফজলুল আজিমকে বিএনপিতে ফিরিয়ে না আনলে হাতিয়া আসনে বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। সেনবাগ ও হাতিয়া আসনে বিএনপি’র বিরাজমান সমস্যা দূর করা না হলে এদু’টি আসন হাতছাড়া হবার আশংকা করছে দলের নেতাকর্মীরা ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nazib ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৪:২৭ এএম says : 0
sara deshe e ak obostha
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন