ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনের বিএনপির আরেক সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওহাবকে দুদকের মামলায় ৮ বছর কারাদণ্ড ও ৯৩ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার যশোর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা এ দণ্ডাদেশ দেন। ৯৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন এই মামলা দায়ের করে।
মো. আবদুল ওহাব ঝিনাইদহ-১ আসনের দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়াও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শৈলকূপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে দুদকের মামলায় ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে আদালতের এ রায়কে অবৈধ দাবি করে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছে বিএনপি। রায় ঘোষণার পর যশোর প্রেসক্লাবে আয়োজিত তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এ হরতালের ঘোষণা দেন ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান খান দিপু।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সিরাজুল ইসলাম জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আবদুল ওহাবকে দুদকের ২৬ (২) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ২৭ (১) ধারায় ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধ উপায়ে অর্জিত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকা ৩২ পয়সা টাকা মূল্যের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার নথি সূত্র মতে, ঝিনাইদহ শহরের আদর্শ পাড়ার কবি সুকান্ত সড়কের মরহুম জরীপ বিশ্বাসের ছেলে ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আবদুল ওহাবের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর থানায় দুর্নীতির মামলা হয়। মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী। এই মামলায় ২০০৯ সালের ৪ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, মো. আবদুল ওহাব তার সম্পদ বিবরণীতে ৮৩ লাখ ১২ হাজার ৩২৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা যাচাই করে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭৬ টাকার সম্পদ পেয়েছেন। আবদুল ওহাব নিজে, তার ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীর নামে অসাধু উপায়ে ক্রয় সূত্রে অর্জিত ৯০ লাখ ৫১ হাজার ৪৫২ টাকা ৭০ পয়সা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে গোপন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অপরদিকে তার বিরুদ্ধে নিজের নামে, মায়ের নামে, তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে এবং বেনামে ক্রয় সূত্রে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সর্বমোট ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকা ৩২ পয়সা টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, এ মামলায় আসামি পক্ষ হাইকোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। উচ্চ আদালত শুনানি শেষে গত ২১ আগস্ট মামলার বিচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী গত ৩ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এরপর আদালত ১৮ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। কিন্তু ওই দিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ৩০ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন পুনঃনির্ধারণ করেন। এ অনুযায়ী সোমবার এই রায় ঘোষণা করা হলো। রায় ঘোষণার পর আদালত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাবকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন