রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস

প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরু থেকে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতে থাকে বাঙালি জনতা। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে পাকিস্তানী সামরিক শাসক। সৃষ্ট সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। দুই দফা বৈঠক নিষ্ফল হওয়ায় আজকের এই দিনে তৃতীয় দফা বৈঠকে বসেন ইয়াহিয়া-মুজিব। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবগুলো হলো- প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা, কেন্দ্রে আপাতত ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সরকার থাকতে পারে, কিন্তু প্রদেশগুলোতে অবিলম্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করবে এবং পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রস্তাবিত পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পৃথকভাবে মিলিত হয়ে ছয় দফার ভিত্তিতে খসড়া সংবিধানের সুপারিশ করবে। আর সংসদের আনুষ্ঠানিক অধিবেশনে তা চূড়ান্তকরণ করা যেতে পারে। দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠকে ‘জয়বাংলা’ সেøাগানের ব্যাখ্যা জানতে চান ইয়াহিয়া। শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার প্রশ্নের জবাবে বলেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়ও কলেমা পাঠের সঙ্গে জয়বাংলা উচ্চারণ করব আমি।
বঙ্গবন্ধুর দেয়া তিনটি প্রস্তাবের ব্যাপারে আলোচনা ও বিবেচনার আশ্বাস দেন ইয়াহিয়া। তিনি তৃতীয় বৈঠকের পর কিছুটা নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেন। ইয়াহিয়া বলেন, ভুট্টো আপত্তি না করলে এ ধরনের একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু প্রস্তাবে রাজি হলেন না ভুট্টো। ঢাকা থেকে করাচিতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এক তারবার্তায় তিনি বলেন, তার পার্টি সীমান্ত ও বেলুচিস্তানের পরিষদে সংখ্যালঘু। তাই সামরিক আইন প্রত্যাহার হলে পিপলস পার্টি অসুবিধার সম্মুখীন হতে বাধ্য।
এদিকে ১৯ মার্চ সকালে হঠাৎ করে জয়দেবপুর ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বাঙালি সেনা এবং জনতার মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ওই এলাকার আন্দোলনরত বাঙালিদের ওপর গুলি চালানোর জন্য ৫৭ নং ব্রিগেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জাহান জাব আরবার দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দেন। কিন্তু জাহান জাব আরবারের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান বাঙালী অফিসার ও জওয়ানরা। শুধু আদেশ অমান্যই নয়, দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে বসে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর শফিউল্লাহ। বিক্ষুব্ধ মানুষ জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আড়াই মাইল রাস্তা কাঠের গুঁড়ি ও ইট ফেলে অসংখ্য ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এ সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে মনু খলিফা, নিয়ামত ও হুরমতসহ অর্ধশত শহীদ ও দু’শতাধিক বাঙালী আহত হন। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী গাজীপুর এলাকায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য জারি করে সান্ধ্য আইন। জয়দেবপুর ও গাজীপুরে দিনভর সশস্ত্র যুদ্ধে বাঙালি জনতার ওপর পাকিস্তানী সেনাদের অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, তারা যদি মনে করে থাকে যে, বুলেট দিয়ে জনগণের সংগ্রাম বন্ধ করতে সক্ষম হবে, তাহলে তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করছে। জনগণ যখন রক্ত দিতে তৈরি হয়, তখন তাদের দমন করতে পারে এমন শক্তি দুনিয়ায় নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন