রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস

প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ : অগ্নিঝরা মার্চের ১১তম দিন আজ। ১৯৭১ সালে আন্দোলনে উত্তাল মার্চের অন্যান্য দিনগুলোর মত আজকের দিনটিও ছিলো ঘটনাবহুল। দেশের সর্বত্র পালিত হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দেয়া বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মোতাবেক যে সব যানবাহন চলার কথা সেগুলো চলাচল শুরু করে; যে সব বেসরকারী অফিস খোলা থাকার কথা সে সব খোলা থাকে। যথারীতি সরকারী দফতরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলে এবং সর্বত্র যা দৃশ্যমান হয় সেটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সমগ্র বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এ দিন বাংলাদেশের ভেতরে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। আগের মতো এই দিনও বিমান ছাড়া সড়ক, রেল ও নৌ চলাচল অব্যাহত থাকে। দেশজুড়ে মানুষের মনে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের অবিচল সংগ্রামী মনোভাব বিরাজ করতে থাকে। স্বাধিকারের দাবিতে অটল-অবিচল সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছে। নগরীতে মিছিল ও সমাবেশ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনকারীরা এইদিন আন্দোলনে নতুন এক চমক নিয়ে আসে। ১৯৭১ সালের এইদিনে নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ছায়াছবি প্রদর্শনের আগে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশন করে। রাজধানীর বিপণি কেন্দ্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। স্বাধিকার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এদিনও প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সকল অফিস এবং বাড়িতে-গাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলিত থাকে।
এদিকে এদিন বরিশালের কারাগার থেকে পালিয়ে যায় ২৪ জন কয়েদি। এ সময় কয়েদি ও কারারক্ষীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করে ২ জন কয়েদি। আহত হন ২৪ কারারক্ষী ২০ কয়েদি। একই দিন কুমিল্লা কারাগার ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে কয়েদিরা। শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি কয়েদিরা। বের হয়ে আসার সময় কারারক্ষীর গুলীতে তিন কয়েদি মারা যান। সংঘর্ষে আহত হন প্রায় ১০০ পুলিশ ও কয়েদি। দীর্ঘদিন অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। এ দিন আরও ১৪টি নির্দেশের কথাও ঘোষণার পাশাপাশি বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জারিকৃত নির্দেশগুলোকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে। এদিন সিএসপি ও ইপিসিএস সমিতির পদস্থ বাঙালী সরকারী কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য আওয়ামী লীগের তহবিলে এক দিনের বেতন প্রদান করেন এবং আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পৃথক দু’টি বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, গত ১০ মার্চ ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে একটি অস্ত্রবাহী জাহাজ নোঙ্গর করেছে। বন্দর শ্রমিকরা সে জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাসের নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন। স্বাধীন বাংলার নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যই এ অস্ত্র আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে জনসাধারণ যেন সতর্ক থাকে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয় বিবৃতিতে। এতে স্বাক্ষর  করেন পরিষদ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃ চতুষ্টয় এক বিবৃতিতে সামরিক সরকার প্রদত্ত যাবতীয় খেতাব, উপাধি বর্জনের আহ্বান জানান। সামরিক বাহিনীর চলাচলের ব্যাপারে জনসাধারণকে সহযোগিতা না করার অনুরোধ করেন এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পূর্বে ছাত্রনেতৃবৃন্দ শর্তারোপ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার পূর্বে ইয়াহিয়া প্রদত্ত ৬ মার্চের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন