শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৯৫ শতাংশ ভোজ্যতেলই মানহীন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

* স্কুলের সামনের ঝালমুড়ি, ফুসকা, ভেলপুরি ও আচারে ই-কোলাই ও সালমোনিলা
* নুডুলস ও সেমাইয়ে প্রোটিনের অভাব \ সবজিতে পেস্টিসাইড
ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত খোলা ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন ও সরিষার তেলের প্রায় ৯৫ শতাংশই মানহীন। একই সঙ্গে মানহীনের তালিকায় রয়েছে বাজারের শতভাগ ঘিও। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিক্রি হওয়া ঝালমুড়ি, ফুচকা, ভেলপুরি ও আচারের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশেই উপস্থিতি রয়েছে ই-কোলাই। আর নুডলস ও সেমাইয়ে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম প্রোটিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ফুলকপি, বেগুন, শিম, কাঁচা মরিচ ও টমেটো’র মোট ১৫০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫টিতেই রয়েছে বিভিন্ন রকমের পেস্টিসাইডের উপস্থিতি।
গতকাল শনিবার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে প্রকাশিত মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন অব হর্টিকালচার প্রোডাক্টস অ্যান্ড আদার ফুড কমোডিটিজ ফর কেমিক্যাল কন্টামিনেশন অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজিক্যাল অ্যাট এনএফএসএল : এন অ্যাপ্রাইজাল অব ফুড সেফটি সার্ভে ইন বাংলাদেশ-সেকেন্ড রাউন্ড’ শীর্ষক এক জরিপে ৪৬৫টি নমুনার গুণগত মান পরীক্ষার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারের প্রধান প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন থানা এলাকার বাজার থেকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সয়াবিন তেল, সরিষা তেল ও ঘি’র মোট ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৫৪টি ছিল খোলা তেল এবং ৪২টি ছিল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের। এদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ ঘি, ৩২ ভাগ সরিষা তেল এবং ২৮ ভাগ সয়াবিন তেল। এসব নমুনার মধ্যে মাত্র একটি ব্র্যান্ড ও ২ টি খোলা সয়াবিনের নমুনায় স্ট্যান্ডার্ডের মাত্রা অনুযায়ী পাওয়া গেছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন থানার ৪৬টি স্কুলের সামনে থেকে ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুসকা, ১৬টি ভেলপুরি ও ৪২টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত এসব নমুনা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য ইষ্ট-মোল্ড, কলিফর্ম, সালমোনিলা, ই-কোলাই এর উপস্থিতির জন্য পরীক্ষা করা হয়। ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভেলপুড়ি, ফুসকা ও ঝালমুড়ি নমুনায় ডায়রিয়ার জীবানু ই-কোলাই’র উপস্থিতি পাওয়া যায়। ৫টি ভেলপুড়ি ও ৩টি ঝালমুড়ি নমুনায় টাইফয়েড’র জীবানু সালমোনিলা পাওয়া যায়। ৭৫ শতাংশ ভেলপুড়ি, শতভাগ ফুসকা ও ছালমুড়ি নমুনা ১৩ টি, ৪টি আচারের নমুনায় ইস্ট মোল্ড পাওয়া যায়, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। মাইক্রোবায়োলজির অন্যান্য পরীক্ষায় প্রাপ্ত জীবানুর মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ছিল।
এ ছাড়া ২৫ শতাংশ নুডলসে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম প্রোটিন পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও সুপার সপ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫৫টি নুডুলস নমুনার গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ১৪টিতে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে প্রোটিনের পরিমান কম পাওয়া যায়। লেড’র পরিমান নিদিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম ও অনেকগুলো রয়েছে শূন্য মাত্রায়। পাশাপাশি বিভিন্ন মাত্রায় টেষ্টিং সল্ট’র উপস্থিতি পাওয়া যায়।
ইনস্টিটিউটর পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতি পাঁচটি ব্র্যান্ডের সেমাইয়ের মধ্যে তিনটিতে আর ১০টি খোলা সেমাইয়ের সবগুলোতেই প্রোটিন কম ছিল। আর ২০ শতাংশ ব্র্যান্ডের সেমাই ও ৮০ শতাংশ খোলা সেমাইয়ের ব্যাপক মোল্ডের উপস্থিতি ছিল। যদিও যে কোনো পণ্যেই মোল্ডের উপস্থিতি মানেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, ফরিদপুর, পাবনা ও যশোর জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে ফুলকপি, বেগুন, শিম, কাঁচা মরিচ ও টমেটো’র মোট ১৫০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫টিতে বিভিন্ন রকমের পেস্টিসাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। পানিতে ৫ মিনিট করে ধৌত করার মাধ্যমে প্রথমবার এবং দ্বিতীয়বার ধৌত করার পর পেস্টিসাইডের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। প্রথমবার ধোয়ার পর ২৯টি নমুনায় কোন পেস্টিসাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়বার ধোয়ার পর ১০টিতে কোন পেস্টিসাইড পাওয়া যায়নি। তবে ৬টি নমুনায় পেস্টিসাইডের উপস্থিতি থেকে যায়। যার মধ্যে ক্লোরপাইরিফস’র মাত্রা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় ছিলো।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এসকে রয় বলেন, সারা দেশেই পথ খাবার খুব জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এগুলোর পরিবেশ স্বাস্থ্য সম্মত নয়। যার ফলে এতে রোগ জীবানু ছাড়ায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের বাজারের ঘি বা তেল মোটেই মান বজায় রাখতে পারেনি। বাঙ্গালি খুব মেধাবী জাতি কিন্তু সেটা ভাল কাজে ব্যবহার না করে খারাপ দিকে ব্যবহার করছে। বিভিন্ন পণ্যে কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। এতে করে কিডনি বিকল, ক্যান্সারসহ নানা রোগ হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেই।
খাদ্য নিরাপত্তা প্রগ্রামের উপদেষ্টা প্রফেসর শাহ মনির হোসেন বলেন, পেস্টিসাইড নিয়ে এখন বেশি আতংক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পেস্টিসাইড দিবে, তবে সেটা অবশ্যই পরিমান মতো। তিনি বলেন, ফুটপাতের খাবার এখন অমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অমাদের সবারই দুটো বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সেটা হলো কোয়ালিটি ঠিক আছে কিনা এবং কতটা নিরাপদ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বেসিক সাইন্স এ্যান্ড প্যারা ক্লিনিক্যাল সাইন্স অনুষদের ডীন প্রফেসর এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ফুটপাতের খাবারে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস এড়াতে সরকারিভাবে নির্দিষ্ট স্থানে মার্কেট করা প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন