ব্যাপক জনসমাগম আশা করছে দলটি : কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চলছে জোর প্রস্তুতি : সমাবেশকে কেন্দ্র করে হয়রানি ও গ্রেফতারের অভিযোগ
দীর্ঘদিন ধরেই বড় ধরনের সভা-সমাবেশ করতে পারছেনা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। প্রস্তুতি থাকলেও অনুমতি না পাওয়ায় দলটি ঘরোয়া কিছু সভা-সেমিনার করেই নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রেখেছেন। তবে গত ১৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল সংখ্যক জনসমাগম এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে উখিয়া যাওয়ার পথে ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়কে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি উজ্জীবিত করে তুলেছে নেতাকর্মীদের। এর ফলে ফের রাজপথে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে দলটি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সমাবেশকে সফল করে তুলতে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ছাত্রদল, জাসাসসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় সংগঠন ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলার নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে কয়েকদফা প্রস্তুতি সভা করেছে দলটি। গতকালও (বৃহস্পতিবার) প্রস্তুতি সভা করেছে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। নয়াপল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক দলের যৌথ সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, কৃষক দলের গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগরীর সকল থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ। সভায় শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ১২ নভেম্বরের জনসভাটি হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাগম। ঐদিনই নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনীতির গতিপথ। তিনি বলেন, দেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অবৈধ দখলদার হাসিনা সরকারের লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, গুম, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে রয়েছে। এছাড়া চাল-ডাল, তেল-পেয়াজ, তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অন্যদিকে কৃষক তাদের নায্যমূল্য পাচ্ছে না। দেশবাসী যথাসময়ে এসব অপকর্মের জবাব দিতে ভুল করবে না। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি সমাবেশ সফল করতে মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালামের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভা করে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিশেষ বক্তা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। সভায় ১২ নভেম্বরের সমাবেশ সফল করতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাজ করার আহŸান জানানো হয়।
এর আগে গত বুধবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, যুবদল, মহিলা দল, শ্রমিক দল প্রস্তুতি সভা করে। এসব সভায় নেতৃবৃন্দ প্রত্যেকটি থানা ও ওয়ার্ডের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন সমাবেশকে সফল করতে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসমাগম ঘটানোর জন্য। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ওই যৌথসভায় রোববারের সমাবেশ সফল করা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন পর একটি সমাবেশ সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা যায় সে ব্যাপারে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি ঢাকার পার্শবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকেও যেন লোকসমাগম হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিট নেতৃবৃন্দকেও একই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি থাকবেন। সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এ লক্ষ্যে আজও (গতকাল) বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছে বিএনপি ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সমাবেশকে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে করতেই এসব প্রস্ততি চলছে। বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল ও ছাত্রদল, জাসাসসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনগুলো অবিরাম কাজে করে যাচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে কক্সবাজার যাওয়ার পথে জনতার যে ঢল নেমেছিল তাতে মানুষ জানিয়েছে দিয়েছে তারা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে ঐক্যবদ্ধ। কারণ দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের সব অঙ্গগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাই মানুষ এখন খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, দীর্ঘদিন পর বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নেতাকর্মীদের মাঝে সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। এটা নিয়ে এমনিতেই সবাই উজ্জীবিত। সকলেই আগ্রহভরে অপেক্ষা করছে তার কথা শোনার জন্য। ওই দিন বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সমর্থক ও সাধারণ মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত থাকবেন আশা প্রকাশ করে আবুল বাশার বলেন, ১৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর এলাকা এবং উখিয়া যাওয়ার পথে ঢাকা-কক্সবাজার সড়কে যেভাবে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এই সমাবেশ স্মরণকালের সেরা সমাবেশ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহানগর দক্ষিণের সকল থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সাথে ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করার জন্য মতবিনিময় করা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ১২ নভেম্বরের সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। কারণ ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুম-নির্যাতনে সবাই এখন অতিষ্ঠ। তারা এ থেকে মুক্তি চায়। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল ও নির্ভরতার স্থান হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। তাই সকলেই তার দিকে চেয়ে আছে, তার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সেদিন ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড নিয়ে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হবে। এছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে নিরব প্রতিবাদ জানিয়ে সাধারণ মানুষও সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ১২ নভেম্বরের সমাবেশ সফল করতে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। সভায় ওই সমাবেশ সফল করার জন্য সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়ার এই সমাবেশ যুবদল সার্বিকভাবে সফল করে তুলবে।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি শায়রুল কবির খান বলেন, এই সমাবেশে জাসাস গতানুগতিক ধারা থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে রাজনৈতিক দর্শন সেটাই জাসাস সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরবে।
প্রস্তুতি সভা: এদিকে রোববারে সমাবেশ সফল করতে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। তারা সেদিন ব্যাপক লোকসমাগম করতে বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও মহিলা দল এবং ছাত্রদল দক্ষিণ ও পূর্বসহ অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও প্রস্তুতি সভা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, সরকারের দুঃশাসন, নিপীড়ণ নির্যাতনে অতিষ্ঠ জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই অনির্বাচিত সরকারকে ‘না’ বলতে তারা উদগ্রীব হয়ে আছে। আগামী ১২ নভেম্বরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে জনতার যে জোয়ার সৃষ্টি হবে, তা ঠেকানোর সাধ্য কারো নাই। তিনি সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লা থেকে নারী পুরুষের নির্বিশেষে সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হওয়ার আহবান জানান।
ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠিনক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর বেগম খালেদা জিয়ার একটি সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে আমরা প্রস্তুতি সভা শুরু করেছি। আশা করি একটি শান্তিপূর্ণ ও স্বতস্ফূর্ত সমাবেশ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন