শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাঁচ মাসেও উদ্ঘাটিত হয়নি খাদিজা হত্যার রহস্য

ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী মহল তৎপর

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার লিজা হত্যার ৫ মাস পরও প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। হত্যার মূল নায়ক বিলাস মন্ডল আত্মহত্যার সূত্র ধরে পুলিশ অন্যতম সহযোগী মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করলেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আলোচিত এ হত্যাকান্ড নিয়ে কুড়িগ্রামে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, উড়ছে টাকা। একটি প্রভাবশালী চক্র বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে করছে নানা ফন্দিফিকির।
আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুস সাকিব সজিব জানান, ঢাকার আশুলিয়া থানা এলাকায় এ মামলার মুল আসামি বিলাস মন্ডল আত্মহত্যা করার সূত্র ধরে ঘটনা উন্মোচিত হয়। কুড়িগ্রাম সদরের পাটেশ্বরী এলাকার ক্লিনিক পাড়ার আলতাফ হোসেনের পুত্র মেহেদী হাসান (১৭)-কে সহযোগী হিসাবে গ্রেফতার করা হয়। ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে মেহেদী হাসান স্বীকার করে সে হত্যার পরিকল্পনা জানতো। মৃত বিলাস মন্ডল তার সিনিয়র বন্ধু ছিল। নিহত লিজার সাথে বিলাসের ছিল প্রেমের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কুমতপুর ইউনিয়নের বাজেশীবপুর গ্রামের মেয়ে লিজা চলতি বছর ১৫ জুলাই প্রেমের টানে কুড়িগ্রামে পাটেশ্বরী এলাকায় বিলাশের বাড়িতে আসে। বিয়ের চাপ দিতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে বিলাশ তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে। ১৭ জুলাই লাশ উদ্ধার হয় অজ্ঞাত পরিচয়ে। লাশ উদ্ধারের ২৪ দিনের মাথায় বিলাশ ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় আত্মহত্যা করে তার চিরকুটের সূত্র ধরে খুনের ঘটনা সামনে আসে। মেলে লিজার প্রকৃত পরিচয়। আমাদের তদন্তে আনার কোন আসামি নেই। হত্যার ক্লু পরোপুরি পরিস্কার। কাজেই আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
ঘটনার যেভাবে শুরু : পাঁচ ভাইয়ের এক বোন, বাবা এলজিইডির কর্মচারী। অনেক আদর যতেœ বড় হয় রংপুর পীরগঞ্জ উপজেলার কুমতপুর ইউনিয়নের বাজেশীবপুর গ্রামের সর্বদা হাস্যজ্জ্বল মেয়ে খাদিজা আক্তার লিজা। রসুলপুর মাহাতাবিয়া স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্রী লিজা। গ্রামের বিধবা চাচী আহীরনের বাড়িতে সামান্য ক’দিন আসা যাওয়ার মাধ্যমে খপ্পরে পড়ে মোবাইল ফোনে কুড়িগ্রাম ঘোগাদহের রফিকুল মন্ডলের পুত্র বিলাস মন্ডলের। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মেয়েটিকে চলতি বছরের ৩০ জুন সাপ্টিবাড়ি এলাকা হতে অপহরণ করে মন্ডল পরিবার। মেয়ের ভাইয়েরা তাকে খুঁজে না পেয়ে থানায় হারিয়ে যাওয়ার একটি জিডি করে খুঁজতে থাকে। এদিকে মেয়েটিকে কুড়িগ্রামে নিয়ে এসে ক’দিন পর ফেরত পাঠাতে চাইলে মেয়েটি বিয়ের চাপ দেয়। বিয়ে করতে অস্বীকার করে লম্পট বিলাস। এক পর্যায়ে লিজাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার সকল আলামত গায়েব করে লাশ পাটেশ্বরী ক্লিনিক পাড়ায় একটি পানির নালায় ফেলে রেখে চলে যায় রফিকুল মন্ডলের পরিবার। ১৮ জুলাই পুলিশ অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাত অবস্থায় দাফন করে কুড়িগ্রাম কবর স্থানে। লাশের পরিচয় খুঁজতে পেপার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ঘাতক বিলাসের পিতা রফিকুল মন্ডলের মোবাইল সিমের সূত্র ধরে পুলিশ ঘোগাদহে মন্ডল বাড়িতে পৌঁছায়। অপরদিকে রফিকুল মন্ডলের পুত্র বিলাস মন্ডল ১০ আগস্ট ঢাকার একটি ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপরই মামলার মোড় ঘুরে যায়। গ্রেফতার হয় মেহেদী হাসান। নিহতের পরিবারে পক্ষ থেকে জানানো হয়-হত্যার সাথে সম্পৃক্ত আরো দোষী ব্যক্তিরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন